কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৫

দীপাঞ্জন ঘটক

শিরোনামহীন কবিতাগুচ্ছ


(১)
একটা নির্বাক যুদ্ধের পর
নগরে নগ্ন হয়ে ফিরছে প্রাহীন মন
ছুটে গেলে হয়তো খুঁজে পাবে 
তোমার ফেলে আসা সংজ্ঞাহীন খোলস
তার ধারে বসে গিলে নাও অযান্ত্রিক শূন্যতা
তারপর
আগামীকাল নগর দেখবে আরেকটা নগ্ন প্রতিরূপ
সৌজন্যে তোমার সর্বগ্রাসী মতবাদ
ধীরে ধীরে গোটা দুনিয়ায় ছেয়ে যাবে ভাইরাস
একজনের প্রতিহিংসার শোধ তুলবে আরেকজন
আমরা তার নাম দেব ভালোবাসা...


(২)
তোমাকে সময় দিতে না পারাটা
দৃশ্যত হয়তো সত্য
কিন্তু আমার ভেতরে বেঁচে থাকা দু'টো মানুষ
কথা বলে চলেছে নিরন্তর মুখোমুখি
লোকগুলোকে কংক্রিট জঙ্গলে হারিয়ে যেতে
আমি দেখেছি কি শুধু
তুমি দেখনি? শোননি আমার কানে নদীর গান?
আমি সামনে না থাকলেও
তোমার সাথে মুহূর্ত যাপন করে চলেছি অনন্তকাল
মুহূর্তগুলো ভাগ করে...


(৩)
তুমি ক্ষজন্মা মানুষ হয়ে জন্মেছিলে বলে
ঠাকুর হয়ে বেঁচে রইলে কেচ্ছার আড়ালে
কিম্বা বড় রাস্তার মোড়ে
ক্যাম্বিস ব্যাগে গীতবিতানে খোয়াইয়ের ধারে
ছুটির ভাতঘুম আর মাংসের হাড়ে
তোমার দুটো কবিতা না জানা মধ্যবিত্ত ভয়ে
তুমি বেঁচে আছ পঁচিশে বৈশাখে ফ্রেমবন্দী হয়ে


(৪)
প্রয়োজনে আবার বাড়িতে সত্যনারায়ণ পূজা দাও
তাতে ভরবে আরেকটু পূণ্যঘটটাও
ঘুষের টাকা ছড়াও, গুজব নয়
কিছু মূর্খ বিজ্ঞানীর হবে না বোধদয়
পাপীরাই মরবে শুধু পিষে
তোমার এ'বিশ্বাসে 
কম সিমেন্ট আর বেশি বালু ঢেলে
কিছু হাজার মরবে এলেবেলে
তুমি তো মরবে না বাবু অধিশ্বর
বেশ বেঁচে আছ ফি-বছর
তোমার গৈরিক গুরুদেব এক লহমায়
আরও কিছু জমিয়ে নেবে পশুপতির মহিমায়
সদ্য জন্মেছিল বাচ্চাটা। হাতে বাপের পাপের ধ্বজা
ওর দিনমজুর বাপটা নির্ঘাত দেয়নি কোনো সত্যনারায়ণ পূজা


(৫)
বালিশের কভারেও প্রেম লুকানো থাকে
তার প্রমা দিয়ে গেল কাল-বৈশাখে
সারারাত ফ্যান ঘোরেনি শেষমেশ
অন্ধকারে ডিম ঝাল হয়েছিল বেশ
খোসাশুদ্ধ আলু দিয়ে ফেলেছি ঝোলে ভুলে
'যাত্রায় রান্নাটা থেকেই গেল বাউন্ডুলে
শেখার বয়স নেই স্লোগানে জল ঢেলে
আমি দিব্যি বেঁচে আছি ডাইনোসর
কাল তোমার টিপের পাতার ফেলে যাওয়া এক ঝড়
উঠে এসেছিল পুরনো বালিশ কভারের ভাঁজে
পারলে এসে নিয়ে যেও টিপছাড়া সাজে
অবশ্য একটা তুলে রেখেছি আয়নার কোণে
আশাকরি উকিলের নোটিশ পাঠাবে না এ’কারণে।


(৬)
কথা বলার ফাঁকেই কিছু কথা হারিয়ে যায়
হয়তো বলতেই  চাই না। নয়তো চাই।
সময়ের মাঝে কিছু সময় এমনিই রয়ে যায়
ছেড়া কথাগুলো কানে ধরে রয়েছি অযথাই।

নিস্তব্ধে ডুবে যাচ্ছে যুক্তাক্ষরের যান্ত্রিক যন্ত্রণা,
ঘুম আসছে কাব্যিক রাতের উপচে পড়া গ্লাসে;
ধীরে ধীরে ঘুম হারাচ্ছে ঘুমের দ্যোতনা।
ফ্যানটা হারিয়ে যাচ্ছে নিজেরই পাখার চারপাশে।


(৭)
একদিন মৃত্যুও ফুরিয়ে আসে
আবক্ষ মূর্তির কাছে।
বাঁচবে কি মরবে? - ভাববার অবকাশে
জীবন গড়িয়ে যাচ্ছে
নিক খাদের আঁধারে 
মৃত্যু চেওনা বরং মর্ত্য চাও আরেকটিবার;


(৮)
কখনো তুমি ছুটে ফেলে গেলে আমার সময়
কখনো আমি হেটে পেরোলাম তোমার ঠিকানা
নিরলস এ'দৌড়ে পথটাই বড় হলো শুধু
শেষ লক্ষ্যে আর যাওয়া হলো না।
এখন মরতে এসে হাত শক্ত রাখার দায়
শেষ সম্বল এ'চেনা সইটুকু যাতে  -
কাঁপাহাতে অচেনা না হয়ে যায়।
লাঠি তোলা থাক। পার্কে যাবে সাথে?


(৯)
তিনটি বাইক ছুটে মিশে গেল বড় রাস্তার ধারে
পড়ে রইল একঝাক নীরবতা।
কুকুরের রতিক্রিয়া। আর অর্বাচিনের কথকতা
জেগে থাকে খুনসুটি আর রাতের বিছানাটা-
সাথে অপার তারারা ল্যাম্পপোস্টের তারে;
জেগে থাকে নীলছবি চটিবইয়ের হাতছানি
প্রসব যন্ত্রণায় মনপোড়া কবির নিত্য আদিখ্যেতা।
রামধ্বনি তুলে চলে যায় মরারা শ্মশানের চাতালে
কোথা থেকে জুটে গেল আরও কিছু
বিনে পয়সার মোচ্ছব আর দেশি বোতলের তালে।
শ্মশানে শুয়ে পুড়বে লাশ
পাশে শুয়ে ডোম শুষে নেবে ডোমনীর উষ্ণতা।
মানুষ তো পুড়বে রোজই বিশুষ্ক আলেয়াতে
অতৃপ্ত রাতের কি'বা আসে  যায় তাতে?















0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন