কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৫

স্রোতস্বিনী চট্টোপাধ্যায়

চরিত্র, তোমাকে...


আমি কখনই চাইনি তুমি কবিতার খাতা থেকে উঠে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলো, “আমি তোমার লেখার চরিত্র হয়ে উঠলাম না কোনোদিনই!” তবুও অসংখ্য  বার তুমি এই একই কথা বলে আমায় ক্লান্ত করেছ। কখনই তোমায় বোঝাতে পারিনি যে, “ভাগ্যিস হওনি!” কোনো একটা চরিত্রের সঙ্গে সখ্যতা আমার নেইতাদের দূর থেকে দেখেছি, দূর থেকে কাছে পেয়েছতাদের সঙ্গে জীবনযাপন করা কতটা কষ্টকর, তা উপলব্ধি করার ক্ষমতা যদি তোমার থাকত, তাহলে তুমিও একটার পর  একটা কবিতা স্রেফ নিজের ভেতর রাত্রিবাস করার জন্য লিখে, সেই কবিতা আবার ছিঁড়ে ফেলতে পারতেসেই কবিতায় আকাশের ভেতর কতটা মিথ্যে কিংবা পাখির  ডানায় ভর করে শূন্যতা খুঁজে পাওয়ার মধ্যে বিদায়ের সুর এত তীব্র এবং এত নেশাতুর, যার কাছে একবার গেলে আর ফিরে আসা যায় না
এক জায়গায় স্থির থাকা তোমার স্বভাব বিরুদ্ধ। কী লাভ হতো আমার কবিতার একটা সাধারণ চরিত্র হয়ে? তার চেয়ে তুমি আমার কবিতার মতোই এক বিশ্রী বদভ্যাস – এটাই তো মানানসই!  
এত বছর ধরে জল ঘাঁটলাম, কী লাভ হলো? ভেসেছি... ভাসিয়েছিনতুন জলের  সামনে গিয়ে দাড়িয়েছি, মনে হয়েছে, এর চেয়ে স্বচ্ছ আর কিছু হতেই পারে না!  অথচ এই জলের গভীরতা নেই, পা রাখার জায়গা নেই। তুমি সেই জলের সঙ্গে মিশে যেও নামোহনা মিতভাষ, মিশে যেতে জানে ঠিকই, টুরিস্টদের চোখে অসম্ভব সুন্দর, কিন্ত জলের রঙ বদলে যায় – আর সেটা দেখেই সঙ্গম চিহ্নিত করা যায়তুমি কি আমাকে সেই সঙ্গমে ডোবাতে চাও?  
আমি কখনো ধ্যান করিনি। অথচ কাঠে আগুন জ্বালিয়ে তার সামনে বসেছিপ্রতিটি  জ্বলন্ত কাঠ আমায় তখন বুঝিয়েছে, শরীরে কতখানি নিঃশ্বাস প্রবাহিত হলে শিরায় আগুন ধরে। তোমাকে ঠিক এই কারণেই কখনো বাধা দিইনি। তুমি কাছে এসেছ, আমি শিউরে উঠেছিশরীর ছাড়িয়ে কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠেছে ধোঁয়া, চোখ অন্ধ করে দেওয়া কিসের এক জ্বালা ধরানো উন্মত্ততা! তারপর শান্ত হয়েছে, আগুন নিভে এসেছে ধীরে ধীরে। সে কোনো ব্যথা বোঝেনিতখন আমি নগ্ন দেবতাকে ছাই হয়ে যেতে দেখেছি
এই আগুন, জল, ছাই – যা যা উড়ে গেছে, সমস্ত কিছুই কোনো না কোনো আমার  কবিতার কাছে এসেছে। আবার ফিরেও গেছেতাই তোমাকে কোনো শব্দ অলংকারে  আমি সাজাইনি। পরিচয় দিয়ে গেছি শুধুজ্যোৎস্না পেরিয়ে, নড়বড়ে সাঁকোর ওপর দিয়ে সন্তর্পণে আমাদের এক পা এক পা করে এগিয়ে যাওয়া স্থায়ী ঘরের খোঁজে, কিংবা আয়ানার সামনে দাঁড়িয়ে কাঁধের ওপর মুখ রেখে, “আমাদের দুজনকে একসাথে মন্দ লাগে না...” এসব চুপি চুপি গল্পগুলো বারবার ফিরিয়ে এনেছিতুমি বোঝনি ভাগ্যিস! যদি সবটা বুঝে ফেলতে, তাহলে “আমাকে নিয়ে কখনো কিছু লেখোনি...” এই আবদার হয়তো থাকতই না! শুধু চরিত্র হয়েই তোমাকে থেকে যেতে হতো পাতার পর পাতা...  


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন