কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৫

অলোকপর্ণা

বেল্ট

কোমরে হাত পড়তেই শিউড়ে উঠলেন জয়শঙ্কর
বেল্ট... নেই!
রও বার দুই হাত বুলিয়ে নিলেন প্যান্টের উপর দিয়ে নাহ্‌, নেইই
অথচ আর মাত্র কুড়ি মিনিট
মিনিট কুড়ি পরই প্রেজেন্টেশান শুরু এমন নয় যে বেল্ট না থাকলে শুরু করা যাবে  না অথবা বেল্টের উপরেই প্রেজেন্টেশানের মূল কাঠামো দাঁড়িয়ে আছে! কিন্তু বেল্টটা নেই জয়শঙ্কর ভুলে গেলেন? সেটা কী করে সম্ভব!
তাহলে?
বেল্ট ঘড়ি বা রুমালও নয় যে কোথাও পড়ে যাবে, অথবা ছাতাও নয় যে হারিয়ে যাবে।
তাহলে?
আজও সকালে বিছানায় পেতে রাখা ছিল। হ্যাঁ, হুবহু মনে করতে পারছেন জয়শঙ্কর, কালচে চকচকে বেল্ট, জয়শঙ্করের কোমরে শক্ত হয়ে এঁটে থাকে, কোমর শক্ত করে।
তবে উপায়!?
এখন রাজুকে দিয়ে বাড়ি থেকে বেল্ট আনিয়ে নেওয়ার মতো সময় নেই। চারশো  মিটার দূরের শপিং মলও বেশ দূরেই, একমাত্র যদি না কেউ ধার দেয়...! কে দেবে?
“হ্যালো রাজু,”
“হ্যাঁ দাদা বলুন”
“তুমি বেল্ট পরো?”
“হ্যাঁ দাদা, কেন বলুন তো?”
“আমার এই মুহূর্তে একটা বেল্ট দরকার ছিল”
“দাদা, আজ তো পরিনি, জানলে পরে আসতাম”
“হুম”

তবে?
দরজা ঠেলে ওয়াশরুমে ঢুকে এলেন মিঃ আহমেদ, রাইভাল কোম্পানির রিপ্রেজেন্টিটিভ। জয়শঙ্করকে দেখে সৌজন্যতা বশত হেসে ইউরিনালে এসে দাঁড়ালেন তিনি। জয়শঙ্করের চোখে ঝলসে উঠল চামড়ার খয়েরি তেলতেলে বেল্ট। তিনিও ইউরিনালে এসে দাঁড়ালেন। কাজ সারা হলে মিঃ আহমেদ বেসিনের দিকে গেলেন, কল থেকে জল পড়ার আওয়াজ পাওয়া যেতে লাগল।
“মিঃ আহমেদ,”
“হ্যাঁ বলুন মিঃ মুখার্জি”, হাত ধুতে ধুতেই আয়নায় চোখ রেখে বললেন মিঃ আহমেদ।
“আপনার বেল্টটা বেশ সুন্দর”
“ওহ, থ্যাঙ্ক ইউ মিঃ মুখার্জি”, কিছুটা বিস্মিত শোনাল তাঁর গলা।
“আপনার থেকে একটা ফেবার দরকার ছিল...”
“হ্যাঁ বলুন,” মিঃ আহমেদ ফিরে দাঁড়ালেন।
“আমার প্রেজেন্টেশান শুরু হবে দশ মিনিটের মধ্যে, আর আমি আজকে বেল্ট পরতে ভুলে গিয়েছি, আপনি যদি আপনার বেল্টটা আমায়...”
অট্টহাস্যে হেসে উঠলেন মিঃ আহমেদ, “মিঃ মুখার্জি, কেউ আপনার কোমরের দিকে তাকাবে না, আপনি নির্দ্বিধায় চলে যান, হা হা...” মিঃ আহমেদ এগিয়ে গেলেন দরজার দিকে।
মুহূর্তে চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল জয়শঙ্করের। রিস্ট ওয়াচে দেখলেন, আর আট মিনিট। কতক্ষ লাগতে পারে?... আট মিনিট কি যথেষ্ট নয়?- ভাবতে ভাবতে জয়শঙ্কর  বলে উঠলেন, “মিঃ আহমেদ,”
মিঃ আহমেদ পিছু ফেরার আগেই তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন জয়শঙ্কর। মাটিতে পড়ে যাওয়া মিঃ আহমেদের সিল্কের টাই সুনিপু প্যাঁচে জড়িয়ে ফেলল তাঁরই গলা। রিস্ট  ওয়াচে চোখ রেখেই জয়শঙ্কর ফাঁস শক্ত করতে থাকলেন। চার মিনিট পঞ্চাশ সেকেন্ড,
চার মিনিট
নপঞ্চাশ সেকেন্ড, চার মিনিট আটচল্লিশ সেকেন্ড...
মিঃ আহমেদ ছটফট করতে করতে স্থির হয়ে এলেন।

জয়শঙ্কর উঠে দাঁড়ালেন দুপায়ে। মিঃ আহমেদের কোমর থেকে বেল্ট খুলে নিয়ে  আয়নার কাছে এসে শার্ট ঠিক করলেন। পকেট থেকে চিরুনি বার করে মাথায় বুলিয়ে নিলেন কয়েক বার। তেলতেলে খয়েরি চামড়ার বেল্ট কোমরে গলিয়ে টানটান হয়ে দাঁড়ালেন আয়নার সামনে। কল খুলে জলে হাত ধুতে ধুতে আয়নার দিকে তাকিয়ে একবার হেসে নিয়ে দেখেলেন, তাকে কেমন লাগছে।
রিস্ট ওয়াচে আর দু
মিনিট।  
মিঃ আহমেদকে ডিঙিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে গেলেন জয়শঙ্কর।

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন