চারানা আটানা
আমি যা যা লিখি, যত হাবিজাবি, অধিকাংশই pun জানিয়া -
সাক্ষাৎলাভে এসেছে পাণিনি, পকেটভর্তি গাঞ্জা নিয়া।
আমি তারে বলি, অমৃতে অরুচি।
তুমিই বরং ক'ডজন লুচি
খেয়ে কেটে পড়ো। যেথা খুশি যাও, তিব্বত-গ্রীস-তানজানিয়া...
কেসটা একেবারে তাইই। পানা জিনিসটা নরম নরম হলে কী হয়, যারা পানাসক্ত, তাদের কাছে ওটা ঠিক উলটো। কচুরির সঙ্গে খেয়ে ফেলবো যে, তারও উপায় নেই, অখাদ্য।
পান নিয়ে একটা থিওরী বানিয়ে ফেলেছিলাম একদা। বুলেট পয়েন্ট করে লিখে ফেললে সেটা এইরকম–
১) Pun না করলেই আপনি যে সবুজ, তার কোনো গ্যারান্টি নেই। চেতনার wrong কেই বা বোঝে?
২) চা এত ছোট শব্দ, যে একে pun করা যায় না। তাই আমরা চা খাই, ছোটদের চাখাই। হিন্দীবালে ভাইলোগ ‘চায়’ পান করে, চা না। চানা ওরাও খায়, পান করে না।
৩) অতিরিক্ত pun করা ভালো না। পান খেয়ে পান-তুয়া খাওয়া যায় না। একটায় জিভ লাল, অন্যটা নিজেই লাল, অথচ জোর করে খেলে একটা lull অনুভূতির বেশি কিছু পাবেন না। Pun যা করার, write-ly করুন। পান-জা লড়লে right-ly লড়ুন, অন্যথায় অবস্থা হয় করুণ।
৪) Pun ম্যাক্সিমাম তিনটে বলাই ভালো। এর চেয়ে বেশি বললে পান-চার হবার সম্ভাবনা। যেমন এইমাত্র হলো।
কিন্তু আমার এই থিওরী কেউ মানলো না। উৎসাহের আতিশয্যে ঘরে ঘরে লোকে প্রাণপণে পান বানাতে দৌড়াদৌড়ি শুরু করলো। তাতে ঠ্যাং ভেঙে কেউ পা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত, তবু পানিয়েই চলেছে। পান খাবার সঙ্গে পান করার কোথাও হয়তো মিল আছে, পানি যেমন বাংলায় পান করা আর খাওয়া দুটোই যায়, তবে বাংলার বাইরের প্রাণীরা এসব বুঝতে না পেরে হাঁ করে থাকে।
এদের সুবিধের জন্যে আমি একটা লিমেরিক মতন লিখে বললাম, দেখো ভায়া, পান হচ্ছে এই রকম বস্তু–
এসব প্রশ্নগুলো মনে খুব উঁকি দিত -
উদ্ভিদ শীতে কেন হয় না উদ্ভাসিত?
কেন মোর মা’র জা’র
নেই কোনো মার্জার,
অথচ বিচালি খেয়ে গরু হয় বিচলিত!
কিন্তু লাভ হলো কই? গরুর বদলে ওরাই বিচলিত হয়ে পড়লো। চলনশক্তি রহিত হয়ে গেল। রোহিত মৎস্যের লোভ দেখালেও নড়ে না, চড়ে না। তাই পুনরায় বাজে গল্প ফেঁদে বসলাম। তার থেকে গন্ডা খানেক নামাই।
***** এক *****
বহু বছর আগের কথা। জমিদার দুই ভায়ের গল্প। বুধবার ভোরবেলা জন্ম হয়েছিল বলে ছোটটার নাম রাখা হয়েছিল বুধাদিত্য। তার দাদার জন্ম সন্ধ্যেবেলা। বোধহয় গোল চাঁদ উঠেছিল তখন গগনে, তাই তার নাম উদয়ন।
দুই ভাই দাপটের সঙ্গে জমিদারি সামলেছে। ভায়ে ভায়ে গলাগলি। এ ওর মুখ না দেখে থাকতে পারে না।
এর অবসান ঘটলো গত বছর। মাত্র ক’দিনের জ্বরে দেহরক্ষা করলেন উদয়ন। মহা সমারোহে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হলো। কনৌজ থেকে পুরোহিত ভাড়া করে আনা হলো রাজা আদিশূরের মতো, বৈদিক নিয়মে শান্তি স্বস্ত্যয়নের জন্য। গয়ায় গিয়ে পিন্ডদান করা হলো।
গোল বাধালো জমিদার বাড়ির বাঁধা পুরোহিতমশাই। তার মন্তব্য, ওসব কিস্যু হয়নি। ভুলভাল মন্তর পড়েছে কনৌজের বেদজ্ঞ বামুন।
কিন্তু বললেই তো হলো না। তুমি বাপু অংবংচং করে পুজোর মন্তর পড় কী শ্রাদ্ধের, তার হিসেব নেই, আবার ভুল ধরছ সংস্কৃত পন্ডিতের! সবাই চেপে ধরল পুরুতমশাইকে।
পুরুতমশাই নির্বিকার। জোর দিয়ে বললেন, ওরে, ও যখন মন্তর পড়তে পড়তে জিজ্ঞেস করল, ভাইয়া কা নাম ক্যা হ্যায়, কে যেন বলল, বুধাদিত্য। খোট্টারা দাদাকে যে ভাইয়া বলে, তা তো জানত না। মরল উদো, ও ব্যাটা বুধোর নামেই শেরাদ্ধ করে দিয়েছে।গয়াতেও তাই, উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে!
***** দুই *****
পাশের বাড়ির দাদা তার মেয়ে পুঁটিকে ইংরাজী ট্রানস্লেশন শেখাচ্ছেন। টাস্ক দিলেন, পুঁটি, এটা ট্রানস্লেট কর, চলো আমরা একটা গরুকে আদর করি।
পুঁটি জিজ্ঞেস করল, বাবা, আদর করার ইংরাজী কী ?
উত্তর এলো, গরুকে আদর করা দেখিসনি? পিঠে আলতো করে চাপড় মারে যে! ওতেই গরু খুশি।
পুঁটি বলল, তাহলে প্যাট লিখি?
বাবা বলল, লেখ।
পুঁটি গোটা গোটা করে লিখল, Let us pat a cow.
পুঁটির দাদা হাঁদু ফুটবল খেলতে গেছিল। হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি ফিরেই পুঁটির চুলের ঝুঁটি নেড়ে খাতাটা কেড়ে বলল, কী লিখছিস দেখি? ওমা, এটা কী লিখেছিস? লেটুসপাতা খাও!
***** তিন *****
চাইনার প্রেসিডেন্ট সস্ত্রীক এসেছেন ইন্ডিয়ায়। হঠাৎ দেখা গেল প্রেসিডেন্টের স্ত্রীর দশ দশটা ইয়ার রিং মিসিং। কে এক ফাঁকে ঝেড়ে দিয়েছে।
গড়বড় কেস। চীনের কাছে মান সম্মান যায় যায়! দেশ জুড়ে তল্লাশি। চীনের ‘সিবিয়াই’ ভারতের সিবিয়াই-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে তদন্ত করছে। চীনের ‘সিবিয়াই’এর ডিরেক্টার শেষমেষ এক বিখ্যাত ভারতীয়কে সন্দেহ করায় পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে গেল। সে অবশ্য বিন্দাস। কে সে?
Show চীন ten দুলকার!
***** চার *****
শিক্ষার হার দ্রুত তালে বেড়ে চলেছে ভারতবর্ষে। সমস্ত রাজ্যগুলোতে প্রকল্প আর প্রকল্প। চুল্লুর ঠেকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গজিয়ে উঠছে স্কুল। বাচ্চারা দাঁত না গজাতেই স্কুলে যাচ্ছে পিঠে ব্যাগ ঝুলিয়ে।
সেই রকম এক স্বপ্ন-দিয়ে-তৈরি আর স্মৃতি, থুড়ি, দরমার বেড়া দিয়ে ঘেরা পেরাইমারি ইস্কুলে চারটে কেলাসের বারোটা সেকশনের জন্যে মোট একজন শিক্ষক। তার সহকর্মী হিসাবে একজন আছে বটে ঘন্টা বাজানোর জন্যে, তবে তাকে রেল ইস্টিশানে টেরেন আসার ঘন্টাটাও বাজাতে হয় কিনা, তাকে সেখানে কুলিগিরি করতেই বেশির ভাগ সময় দেখা যায়।
সেই একমাত্র শিক্ষক সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের একত্র করে বেলাকবোর্ডে কী একটা লিখতে গিয়ে দেখলেন লেখার জিনিস আর একটুকরোও পড়ে নেই।
*****
এই সব বেকার, জঘন্য, অসহ্য রকমের ফালতু গল্প যখন শোনাচ্ছি, তখনই হোয়াটসাপে কোত্থেকে এক পান-বালা কালেকশন ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে আমার কাছে হাজির হলো। সেটা বেশ সুন্দর, সবার সঙ্গে শেয়ার করার মতো। কিন্তু অন্যের জিনিস হুবহু ঝেড়ে দেওয়া, এমন কী পান হলেও, ভীষণ অন্যায়, তাই আমি সেটাকে একটা ছড়া বানিয়ে নামিয়ে দিচ্ছি এখানে।
ফ্রীজে রাখা শিম যদি ‘হিমশিম’ খায়, বল,
বাঁদর ধরার ফাঁদ হয়ে যাবে ‘কপিকল’?
বোকা ও বাঁদরগুলো, তারা বুঝি ‘fool-কপি’?
কানা গাড়ি তবে কী রে? ‘অন্ধ-কার’ রে গোপী।
কল দিয়ে জল পড়ে। কী শুনিস? ‘কলরব’।
অন্তরে যে গন্ধ, ‘অন্তর্বাস’ সব?
মন্দ আশার মতো কুয়াশা' যে বাড়ছে।
ছোট ছোট কুল খেয়ে ‘কুলকুচি’ সারছে।
হাতে গড়া দরজাটি, নাম তার ‘বাহুডোর’।
একত্রে মারে কিল, ‘কো-কিল’ ডাকছে। ভোর।
প্রেমের বাবা কি ‘লাভ-জনক’ রে? ঘোর দিন।
চা-র সাথে মাছ? ভাজা? ধুস, দিলো ‘চা-ও-মীন’!
চাঁদের পাহাড়ে কই ছিলো না তো সে সীন!
চাঁদে নাকি পাওয়া গেছে ‘ম্যাথসের মেশিন’!
এক শব্দেই তারে ধরে যে, সে টঙ্কো।
ফ্যালফ্যাল তাকাস নে। জেনে নে - কলঙ্ক!
জিজ্ঞাসি সবাইকে করে দিতে জব্দ -
“খাদ্য পাচ্ছে বেশ” বলো কী সে শব্দ?
থ্যাবড়ানো বা নধর। শুধু বলি, নায়িকা না।
জলের মতোও হয়। পারলে কী? ‘পায়-খানা’!
কাচের দোকানে ঢুকে বললাম, রেখা-বেন,
সমকামী পুরুষের ডেডবডি দেখাবেন?
রেখা খেলো ভ্যাবাচ্যাকা। এলো দিদি বেলা। সেই
বললো, কোনটা চাই? আরো আছে gay-লাশ এই।
*****
গল্প বা ছড়াই শুধু নয়, পানের জগতে ওয়ান লাইনারই কাফি। তার থেকে এক ডজন মৌলিক পান নামিয়ে আজকের কলম ও এই সংখ্যার কলাম বন্ধ করি।
১।পিঠে কুঁজ থাকা একটা উট-কো সমস্যা!
২।আম্পায়ার উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়েছিল। হঠাৎ তার বাঁ দিক থেকে একটা হাতি এসে বল করা শুরু করলো। নিশ্চয় বাঁ-হাতি বোলার!
৩।একটা গন্ডারের নাক চুলকোচ্ছে, কাছে পিঠে আমি ছাড়া কেউ নেই। বাধ্য হয়ে আমাকে ‘খড়্গহস্ত’ হতেই হলো!
৪।ভোরবেলা জলখাবার খাবে, নাকি আফিং চড়িয়ে আর একটু ঘুম দেবে, যে এটা বুঝতে না পেরে গড়িমসি করে, তার কী নাস্তা-না-বুঁদ অবস্থা!
৫।মাসি বিয়ে করেছিল এক মুসলমান ভদ্রলোককে, তিনি মারা গেছেন। মাসির ঘরে তাঁর দেওয়াল জোড়া ফটো। মাসির বাড়ি গেলেই আমি মেসো-পটে-মিঞা দেখতে পাই!
৬।কারো সাহায্য ছাড়াই নিজে নিজে বড় হওয়াই তো একা-grow-তা!
৭।সত্যজিৎকে রবীন্দ্রনাথ উপদেশ দিয়েছিলেন – একলা চলো, Ray.
৮।ফোর্ট উইলিয়ামের মধ্যে সত্যনারায়ণ পুজো ব্যান্ড্, কেননা দুর্গ-তি-না-সিন্নি!
৯।বাড়িতে চাকর রাখতে না হলে বেশ বিন-দাস থাকা যায়!
১০।শুধুমাত্র বাচ্চাদের জন্যে যে ট্রেন চলে, সেটাই তো বাল-লোকাল! ডোনাল্ড ডাকের বাল্যবন্ধুর নাম যেমন বাল-mickey!
১১।সুনীলদার প্রেমিকা যখন খুব কঠিন কঠিন কথা বলত, সুনীলদা নিশ্চয়ই তা খুব নীরা–শক্ত ভাবে গ্রহণ করতেন!
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন