কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৫

মুক্তা রহমান

দুনিয়াদারি  

        

কীভাবে লো কাগজের মুদ্রা  



চীনের প্রাচীন কাগজের মুদ্রা পৃথিবীতে কাগজে ছাপানো মুদ্রাব্যবস্থা প্রথম চালু হয় চীনে। সুং সাম্রাজ্যের সম্রাট চেং দুর শাসনামলে একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অধীনে কাগজের মুদ্রা ছাপানো বিনিময় শুরু হয়। সময়টা আনুমানিক ১০২৩ খ্রিষ্টাব্দ। প্রাথমিকভাবে চীনের সিচুয়ান প্রদেশেই কেবল এই কাগজের মুদ্রার প্রচল ঘটে। কেমন  কাগজে প্রাথমিক যুগের মুদ্রা ছাপানো হতো? ইতিহাসবিদদের মতে, সে সময় সুং সম্রাটের পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট মানের কাগজেই ছাপানো হতো পৃথিবীর প্রাচীনতম কাগজের মুদ্রা। সাধারণত, অর্থ বিনিময়ে প্রতারণার ব্যাপারটি এড়িয়ে চলতেই এই মুদ্রার প্রচল ঘটেছিল। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হলো, প্রাচীন সেই  কাগজের নোটেও ধারাবাহিকতার নম্বর দেওয়া থাকত। ১১০৭ খ্রিষ্টাব্দে রঙিন কাগজের মুদ্রারও প্রচলন ঘটে ওই চীনে। (পেঙ্গুইন বুক অব ফার্স্ট অবলম্বনে)



প্রথম বিশ্বযুদ্ধে কেমন ছিল ঢাকা?



প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা ১৯১৪ সালের ২৮ জুলাই। শুরু হলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। আগস্ট যুদ্ধে যোগ দিল ইংল্যান্ড। ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ১২ লাখ সেনা সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন যুদ্ধের বিভিন্ন রণাঙ্গনে। ছাড়া বিভিন্নভাবে অংশ নেন আরও কয়েক লাখ ভারতীয়। তবে যুদ্ধে কতটা অবদান ছিল ঢাকার, বাঙালি সেনাদের? বেঙ্গলি রেজিমেন্টের মনোগ্রাম প্রথম মহাযুদ্ধের শুরুতে সেনাবাহিনীতে বাঙালির উপস্থিতি ছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। কিন্তু চমকপ্রদ তথ্য হলো, যুদ্ধের মাধ্যমেই বাঙালিরা নতুনভাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার সুযোগ পান। আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে ১৯১৬ সালের আগস্ট গভর্নর লর্ড কারমাইকেল ঢাকা শহরে বাঙালিদের জন্য একটি পদাতিক রেজিমেন্ট বা পল্টন গঠনের ঘোষণা করেন এই  রেজিমেন্টই পরে পরিচিতি পেল৪৯তম বেঙ্গলি রেজিমেন্টবাবাঙালি পল্টননামে  নওশেরা করাচিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে মেসোপটেমিয়া কুর্দিস্তানের রণাঙ্গনে যোগ দেয় দলটি। সেটা একটু পরের ঘটনা। নবাব হাবিবুল্লাহতবে বেঙ্গলি রেজিমেন্ট গঠনের সরকারি সিদ্ধান্তের আগেই কলকাতায় গড়ে ওঠে একটি বেসরকারি সংগঠন বেঙ্গলি রেজিমেন্ট কমিটি সে সময় বর্ধমানের মহারাজা বিজয়চাঁদ মাহতাব, ডা. এস কে মল্লিকসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা যুক্ত ছিলেন এর সঙ্গে। এই কমিটির প্রধান কাজ ছিল রেজিমেন্ট গঠনে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ সাধারণ মানুষকে এর স্বপক্ষে এগিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করা। ঢাকায় পল্টনের জন্য সেনা সংগ্রহের প্রাথমিক দায়িত্ব দেওয়া হলো আর কে দাস শরৎচন্দ্র চক্রবর্তীকে। পরে বেঙ্গলি রেজিমেন্ট কমিটির ঢাকা শাখা গঠিত হলে জেলা কালেক্টর এস জি হার্ট সভাপতি, শ্রীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদক গৌরনিতাই শঙ্খনিধি কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। বেঙ্গলি রেজিমেন্টে যোগদানে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য ঢাকায় প্রথম জনসভাটি হয় ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে। ঢাকা করোনেশন পার্কে অনুষ্ঠিত সভায় অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত থাকলেও সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন ঢাকার নবাব খাজা হাবিবুল্লাহ। সভায় ঢাকার তরুণদের রেজিমেন্টে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানালেন তিনি। বেঙ্গলি রেজিমেন্টে সেনা ভর্তির জন্য সরকারকে সহযোগিতার উদ্দেশ্যে ঢাকা শহরে দুটি বেসরকারি ভর্তি কেন্দ্রের ঘোষণাও লো সভা থেকে একটি শ্রীশচন্দ্র চ্যাটার্জি অন্যটি হাকিম  হাবীবুর রহমানের বাসায়। ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা সেনানিবাসে সরকারিভাবে শুরু হলো সেনা ভর্তির কাজ। ১৯ অক্টোবর বাঙালি পল্টনে যোগ দিতে ঢাকা থেকে কলকাতায় রওনা হলো প্রথম দলটি। কেমন ছিল সেই ক্ষণ? কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ইংলিশম্যান- লেখা আছে সেই বিবরণ: সকাল সাড়ে এগারোটায় বার লাইব্রেরিতে দলটিকে দেওয়া হলো বিদায় সংবর্ধনা। তারপর বাদকদল মিছিল সহকারে তাদের নিয়ে যাওয়া হলো রেলস্টেশনে। চারদিকে তখন জনতার মুহুর্মুহু স্লোগান আল্লাহু আকবর’, ‘বন্দে মাতারাম ১৯১৭-এর ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সদরঘাটে মুসলমানদের এক সভায় নবাব হাবিবুল্লাহ দিলেন বাঙালি পল্টনে যোগদানের ঘোষণা। ২৬ এপ্রিল পল্টনে যোগদানের জন্য করাচির উদ্দেশ্যে রওনা হলেন তিনি। ওই দিন বিকেলে বার অ্যাসোসিয়েশন হলে তাঁকে জানানো হলো জাঁকজমকপূর্ণ বিদায় সম্ভাষণ। সময় ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় সেনা সংগ্রহের জন্য নিয়মিত সভা হতে থাকে। প্রত্যেক সভাতেই তরুণেরা আসতে থাকেন পল্টনে যোগ দেওয়ার জন্য। তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতে সভাগুলোতে স্থানীয় ব্যক্তিরা ছাড়াও কলকাতা থেকে আসতেন অনেকে স্যার সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি, ব্যারিস্টার ব্যোমকেশ চক্রবর্তী, সম্পাদক পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়, . এস কে মল্লিক প্রমুখ। প্রথম দিকে ঢাকার সেনারা রেজিমেন্টে যোগ দিতেন কলকাতা হয়ে। কলকাতা মহিলা সমিতি বিদায়কালে সেনাদের কিছু উপহারসামগ্রী প্রদান করত। ১৯১৭ সালের শুরু থেকে ঢাকায় নির্বাচিত সেনারা রেজিমেন্টে যোগ দিতে সরাসরি করাচি চলে যেতে শুরু করেন। ফলে দুরূহ হয়ে পড়ে সেনাদের উপহার প্রদান। সমস্যা দূর করতে ঢাকা শহরের বিশিষ্ট নারীরা ইস্ট বেঙ্গল ইনস্টিটিউশনে সেনাদের সাহায্যার্থেমহিলা সমিতিগঠনের সিদ্ধান্ত নিলেন। দিনটি ছিল ১৯১৭-এর জুন। ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর। প্রথম মহাযুদ্ধের বিবদমান দু-পক্ষ যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করল ফলে ঢাকাসহ সব ডিপোতে বন্ধ হয়ে গেল সেনা ভর্তি কার্যক্রম। ২৭ নভেম্বর সারা ঢাকায় ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করা হলো বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি। ২৯ নভেম্বর ঢাকার পল্টন ময়দানে হলো আনন্দ উৎসব। উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজ। শহরের অন্যান্য স্থানেও সে সময় আনন্দ উৎসব হয়, রাতে শহরকে সাজানো হয় বর্ণিল আলোকসজ্জায়। ঢাকায় গৌরনিতাই শঙ্খনিধির বাড়িতে বেঙ্গলি রেজিমেন্টের সৈনিকেরা; শুধু কি তাই, যুদ্ধ শেষের আনন্দে ৩০ নভেম্বর বুড়িগঙ্গার পাড়ে আয়োজন করা হয় কাঙালি ভোজ। রাতে আলোকসজ্জায় উচ্ছল হয়ে ওঠে আহসান মঞ্জিল। ২৭ ডিসেম্বর বিকেলে নবাব হাবিবুল্লাহ রেজিমেন্ট থেকে ফিরে এলেন ঢাকায়। প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ রেলস্টেশনে উপস্থিত হয়ে পতাকা নাড়িয়ে বাজনা বাজিয়ে সেদিন বরণ করেছিলেন নবাবকে। উচ্ছ্বসিত তরুণেরা গাড়ি থেকে ঘোড়া সরিয়ে নিজেরাই নবাবের গাড়ি টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন আহসান মঞ্জিল পর্যন্ত। ১৯২০ সালের ৩০ আগস্ট বন্ধ ঘোষণা করা হয় বেঙ্গলি রেজিমেন্ট। বেঙ্গলি রেজিমেন্টের টুকিটাকি বেঙ্গলি রেজিমেন্টে অবিভক্ত বাংলা থেকে সর্বমোট পাঁচ হাজার ৯৫২ জন যোদ্ধা ২৩১ জন ফলোয়ার্স যোগ দিয়েছিলেন, এর মধ্যে ঢাকা থেকে যোগ দিয়েছিলেন সবচেয়ে বেশিসংখ্য তরুণ। এঁদের সংখ্যা  ছিল ৬৭৩ জন। রোগ-শোকসহ অন্যান্য কারণে বেঙ্গলি রেজিমেন্টের ৬৩ জন সেনা মেসোপটেমিয়ায় মারা যান। এঁদের মধ্যে ছিলেন ঢাকার সিপাই আবদুর রহমান, সিপাই জগদীশচন্দ্র ব্যানার্জি, সিপাই কামাক্ষ্যা দে, সিপাই রাধিকামোহন দে, সিপাই সত্য নারায়ণ বোস, সিপাই শ্যামলাল ভট্টাচার্য সিপাই সুরেশচন্দ্র বোস। অন্যদিকে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ যুদ্ধে বিভিন্নভাবে সরকারকে সহযোগিতার জন্য ঢাকার নবাব হাবিবুল্লাহদি অর্ডার অব ব্রিটিশ ইন্ডিয়াখেতাব লাভ করেন। ঢাকায় সেনা ভর্তিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য সরকার প্রতিভা নাগ, সরসীবালা চৌধুরানী, শ্রীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, গৌরনিতাই শঙ্খনিধি, খান সাহেব মোহাম্মদ হাফিজ, সারদাপ্রসাদ রায় রাধাচরণ পোদ্দারকে সনদ প্রদান করে। ফটো : ঢাকায় গৌরনিতাই শঙ্খনিধির বাড়িতে বেঙ্গলি রেজিমেন্টের সৈনিকেরা(১৯১৭)


বাইসাইকেলের  জন্মকথা

লেওনার্দো দ্য ভিঞ্চি খেলার ছলে অনেক কিছুই আঁকিবুঁকি করেছিলেন তাঁর খেরোখাতায়। ভিঞ্চির সময় ওসব আঁকিবুঁকির কিছু কিছু নেহাত অবাস্তব কল্পনা মনে করা হলেও তাঁর খেরোখাতার অনেক কিছুই পরবর্তী সময়ে বাস্তবে রূপ নিয়েছে; হেলিকপ্টার ও বাইসাইকেল হচ্ছে এমনই দুটি যন্ত্র। নিজের খেরোখাতায় লেওনার্দো দ্য ভিঞ্চি আধুনিক সভ্যতার এই দুই বাহনের নকশা এঁকে গেলেও তিনি হয়তো ভাবেননি, এত দ্রুত কোনো এক প্রজন্ম তাঁর এই স্বপ্নের বাস্তবায়ন করে দেখাবে। লেওনার্দো দ্য ভিঞ্চি বাইসাইকেলের নকশা এঁকেছিলেন ১৪৫২ থেকে ১৫১৯ সালের মধ্যেলেওনার্দোর আঁকা নকশা থেকেই তাঁর মৃত্যুর ৩০০ বছর পর ১৮৩৯ সালে বাইসাইকেল তৈরি করেন কিরকপ্যাট্রিক ম্যাকমিলান নামের এক স্কটিশ ব্যক্তি। লেওনার্দোর নকশাকে হুবহু অনুকরণ করে ম্যাকমিলানের তৈরি করা পৃথিবীর প্রথম বাইসাইকেলটি অবশ্য খবরের শিরোনাম হয়েছিল অন্য এক কারণে। ম্যাকমিলানের তৈরি বাইসাইকেল গ্লাসগোর রাস্তায় একটি দুর্ঘটনার কারণ হয়েছিল। ১৮৪২ সালে গ্লাসগোর একটি সংবাদপত্রে বের হওয়া খবরটি ছিল অনেকটা এ রকম, অদ্ভুতদর্শন একটি বাহন গতকাল গ্লাসগোর  রাস্তায় একটি ছোট্ট মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে আহত করেছেবাহনটি দুই চাকাবিশিষ্ট; এর মালিক বাস করেন ডামফ্রাইসশায়ারে। এই অপরাধে তাঁকে পাঁচ শিলিং জরিমানাও করা হয়” (পেঙ্গুইন বুক অব ফার্স্ট অবলম্বনে)



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন