কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৫

দেবাদৃতা বসু

দা ডেজ অফ দা ডেড




Kolkata Municipal Corporation

Name
Age
Address
Place of death
Time of death
Cause of death
Signature
relationship
Gouri
Basu
37 years
12/1/2A, Grove Lane
Ramkrishna
Mission SevaPratisthan
8:15 pm
Cerebral
Hemorrhage
Bhaskar
Ganguly
Brother

শ্রীধরবাবু কখনো প্রিয়জনের শবযাত্রা দেখেননি। জানেন না প্রিয়জনের বডির ডিসিন্টিগ্রেশান। বডি নিয়ে কোনো ফেটিশ নেই তাঁর, আছে গল্প নিয়ে। প্রতিদিন  একাধিক নতুন গল্পের শুধু শুরু হয়, সেই সূত্র বয়ে বেড়ান তিনি৫ নম্বর এস. এন. ব্যানারজি  থেকে বেড়িয়ে খানিক হেঁটে প্রশস্ত বাসরাস্তা। মিনি বাসের ভিড় সামলে মানিকতলায় বাসস্টপ নকুরের দোকান। পায়ে হেঁটে বাড়ি। একান্নবর্তী বারান্দায় কেউ গা বাঁচিয়ে চলে গেলে দুলে ওঠে পাখির খাঁচাটা ঘরে ঢোকেন শ্রীধর  বাবু। রেকর্ডের বয়ান ভাবেন মাস্টারবেট করেন

গতকাল ডুপ্লিকেটে লিখে ফেলা বয়ান ঝাপসা লাগছে আপাতত। আজ ছিলেন অন্য একটা গল্পের ভেতরকর্মসূত্রে গোটা দিন মৃত্যুর কাছাকাছিশ্মশানের টাটকা রেকর্ড খাতায় টুকে রাখাটাই তাঁর কাজখাতা থেকে গল্পগুলো মাথার ভেতর বেড়ে ওঠে কেওড়াতলা, নিমতলা, টাওয়ার অফ সাইলেন্স, লোয়ার সার্কুলার রোড গোরস্থান।  জাতি, বর্ণ, লিঙ্গের বৈষম্য নিরপেক্ষ হয়ে কালিতে লেখা সমস্ত তথ্য শ্রীধরবাবু মাথার ভেতর দিয়ে একটা নামকে মন দিতে থাকেন, স্মৃতি, ইতিহাস ইত্যাদি মাংস, চামড়ার প্রলেপ শ্যামপুকুর থেকে বিডন স্ট্রিট দোকানগুলো দেখতে দেখতে মাঝে মাঝে বোঝা যায় না কী বিক্রি হয় ওখানে। তুলসি নাতনির হাত ধরে রুটি কিনতে এলে, নাতনি  জানতে চায়, “দিদা, এটা কিসের দোকান?” দিদা বলে, রুটির দোকান নাতনি উৎসুক তাকিয়ে থাকে, ফ্রুটির দোকান?

এসব কথা করপোরেশান খাতায় লেখা হয় না। শুধু তুলসীর নাম, বয়স, মৃত্যুর কার ইত্যাদি। ওতেই হবে। বাথরুমের কল চালিয়ে তুলসীর কথা ভাবেন শ্রীধরবাবু। বেয়ানকে বলছে, “ও লো, তুই তো খাবি না মুরগীর ঝোল, গন্ধটাই শুঁকে দ্যাখ”।

কলঘরের বাইরে আওয়াজে কান পাতা দায়। একে তো শনিবারের অনর্গল ঘণ্টা। ভেতর থেকে জলের আওয়াজ। চৌবাচ্চায় জমিয়ে রাখা জল শেষ হয়ে যাবে বলে বউ থাকে উৎকণ্ঠায় শ্রীধরবাবু থাকেন গল্পেডেস্কে বসেই নির্মলবাবু টের পেয়ে যান কে কত ফাঁকিবাজি করছে কাজে। ফাঁকিবাজির গন্ধ পেতে থাকেন। আড়ালে লোকজন বলে থাকে, নির্মলবাবু নাকি অফিসে আসেন মানুষের খুঁত ধরতে; যদিও তিনি নিজে   মোটেও এমন বিশ্বাস রাখেন নাএকাই থাকেন, একা অফিসে আসেন, একা বাজারে, বেড়াতে যান, রাতে ঘুমের মধ্যে যে স্বপ্ন, তাতেও তিনি একাতাই নিয়ে আপশো  বা অবসেশান নেই কোনো। একটাই আপশোস, বাকি মানুষ তার মতো করিতকর্মা  নয়। বাঙালির ওয়ার্ক কালচার নিয়ে হতাশায় ভোগেন তাই সবসময়। এই নির্মলবাবু একদিন মাঝরাতে বন্ধ ফ্ল্যাটের ভেতর ঘুমের মধ্যে একা একা মরে গেলেন। ভালো ক’রে ধুয়ে মুছে কলঘর থেকে বেড়িয়ে এলেন শ্রীধরবাবু।  

প্রতিদিন এক রুটিনের পুনরাবৃত্তিসকালে অফিসে খাতায় রেকর্ড লিখে রাখা, বাড়ি ফিরে কলঘরে ঢুকে পরেন, রাতে বউয়ের পাশে ঘুমিয়ে থাকেন চুপচাপসমস্যা হয় রবিবার এবং ছুটির দিনগুলোতে। কিছুতেই গল্পেরা ধরা দিতে চায় না। মাথার আরামের জন্য প্রতিদিন তাঁর চাই নতুন নতুন এন্ট্রি।  


************************************************


স্ত্রী মারা গেলে কিছুদিন ছুটি নিয়েছিলেন শ্রীধরবাবুমানিকতলার বাড়ি ছেড়ে উঠে কিছুদিন হলো এসেছেন দক্ষিণ কলকাতায়। বেশ স্বাভাবিক বোধ করেন আজকাল। একলা ফ্ল্যাট। অঢেল জল বাথরুমে। এখন আর নতুন এন্ট্রির জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। এন্ট্রি ছাড়াই গল্পের মধ্যে ঘুরে ফিরে বেড়ান

লখার মাঠ বস্তির একদম কেন্দ্রস্থলে একটা শীতলা মন্দির। সবাই বলে জাগ্রত। বাজার ক’রে ফেরার পথে শ্রীধরবাবু সেদিন দেখছিলেন প্যান্ডেল ক’রে প্রতিমা সাজিয়ে পুজো হচ্ছে, ঢাক বাজছে।

বাথরুমে ঢুকতেই মনে হলো পার্বতীর কথা। বয়স তুলসীর নাতনির মতো হবে ঠাকুর ভাসানের আগে পার্বতীর কাকা গলির মো থেকে বাংলা কিনে খাচ্ছিল।  লরিতে উঠে দেবীর শাড়ি ছিঁড়ে পাগড়ী, চুল ছিঁড়ে গোঁফ বানাচ্ছিল। সেখান থেকে  গঙ্গার ঘাট। অনেকটা পথ। ভাসান শেষ ক’রে সবাই ফিরে এসে দেখল, পার্বতীর কাকাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না যায়নি। তাও অনেকদিন হলোরেকর্ড লেখা হয়নি কোনো তার নামে করপোরেশানের খাতায়।  


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন