কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

০২) দেবতোষ দাশ


সারভাইভাল

কাগজে খবরটা পড়ার পর থেকে আমি কুকুরদের খুব ভয় পাই। আগে মানুষকে পেতাম। এখন কুকুরকেও। বাঁকুড়া না কোথায় যেন কয়েকটা কুকুর একটা ন-দশ বছরের বাচ্চা ছেলেকে জ্যান্ত খেয়ে ফেলেছে। পুরোটা ঠিক খেয়ে ফেলেনি, আঁচড়ে-কামড়ে মাটিতে ফেলে পা আর পেটের কিছুটা তারা ভক্ষণ করেছে। হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে কোনো লাভ হয়নি।
বাজারে যাই। মুরগির দোকানের সামনে তিনটে কুকুর হাঁ করে বসে থাকে। ছাঁটের লোভনাড়িভুঁড়ি, ঠ্যাং, রক্তমাখা পালক দোকানদার ফেলে দেয় আর এরা তিনজন তীক্ষ্ণ ক্যানাইন বার করে ঝগড়া করে। কুকুর এমনিতে খুব ভালো। কিন্তু খাবারের জন্য শ্বদন্ত ঝগড়ারত কুকুর বিপজ্জনক। কিন্তু সেইভাবে ভয় পাইনি কখনও। আঁচড়ালে বা কামড়ালে হসপিটালে যেতে হবে, গোটা পাঁচেক ইঞ্জেকশন ভরতে হবে ইত্যাদি ঝামেলা। ভয় বলতে এই ঝামেলার ভয়।
কিন্তু আজ সত্যি ভয় পেলাম। একটু বেশি ভয়। একটা শিরশিরে আতঙ্ক আপাদশির নড়াচড়া করছে, টের পেলাম। মাংস কাটে যে ছেলেটা, সে ঘ্যাঁচ করে মুরগির গলাটা  ধারালো বঁটিতে কেটে মাথাটা নিচে ফেলে দেয়। তারপর বাঁ হাত দিয়ে মাথাহীন  গলাটা চেপে ধরে থাকে। কবন্ধ ধড়টা পালক-টালক উড়িয়ে খানিক ছটফট করে স্থির হয়ে যায়। তারপর দ্রুত পালক ছাড়িয়ে বডিটা গামলায় রাখে। অনেকটা মানুষের ভ্রুণের মতো দেখতে লাগে তখন বডিটা
আমি মাংস কাটা ও কুকুরদের আচরণ দেখি। একবার এদিকে তাকাই আর একবার ওদিকে। কখনও যদি মাংসওয়ালাকেই আক্রমণ করে বসে কুকুরগুলো? লোকটা তো আর মাংস দেয় না ওদের, ছাঁট দেয়। অপেক্ষায় অপেক্ষায় ওদের ক্ষুধা বাড়ে। রাগ। একসময় সাহস। আমি নিশ্চিত হই, একদিন এ আক্রমণ হবেই। লোকটা বাধা দেবে।  ক্ষুধার্থ, আক্রমণোদ্যত কুকুর তখন কেবল মুরগির মাংস খাবে না, লোকটাকেও খাবে।
বাঁকুড়ার ঘটনাতেও খাবার জড়িত। বিয়েবাড়ির উচ্ছিষ্ট ভোজে কুকুরের দল নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ে ব্যস্ত ছিল। এমন সময় ছেলেটি ওই উচ্ছিষ্টের পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে কুকুরদের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে পড়ে। কোনো কারণে কুকুরের দল ছেলেটিকে আরও একজন ভাগিদার ভেবে বসে। ফলত আক্রমণ। ভাগিদার কমাতে হবে। কারণ খাবার সীমিত। 
ইদানিং আমাদের পাড়ায় খুব হনুমান আসছে। আসছে খাবারের খোঁজেই। খাবার পেলেই পিঠটান। নিরীহ গোবেচারারা হারিয়ে যাবে খাবারের অভাবে। যেমন পাখি। কিন্তু সবাই দুর্বল নয়, মরিয়া তারা হবেই। কুকুর বা হনুমান। যাদের ধারালো দাঁত আছে। নখ আছে।
বলতে বলতেই এক ক্রেতার সঙ্গে মাংসের দোকানির ওজন নিয়ে লেগে গেল। লেগে গেল তো গেলই। জমল লোকজন।  নরক গুলজার। কুকুরগুলো পাশে সরল। বাড়তে বাড়তে এমন জায়গায় দাঁড়াল, দোকানি মাংস কাটার বঁটি তুলল। ক্রেতা পাকালো   মুঠো। রক্তারক্তি হওয়ার আগে সমবেত জনগণের হস্তক্ষেপ। ঝামেলা এড়াতে আমি মাছ-বাজারের দিকে যাই। কিছু সব্জিও কিনতে হবে।
দু’থলে ভর্তি বাজার নিয়ে একটা রিকশা ধরি। রিকশাওয়ালা ড্যাবড্যাবিয়ে আমার দুই থলের দিকে চায়। দু’টাকা অতিরিক্ত দাবি করে। আমি জানি, অকারণ দাবি। তাও  কারণ জিজ্ঞেস করি। হিসহিসে কিন্তু তীব্র স্বরে জানায়, রোজই তো মাগগিগন্ডার বাজারে ব্যাগভর্তি বাজার করছেন, আমাদের কী করে চলে, ভাবেন কখনও?
আবার সেই শিরিশিরে ভয়টা আপাদশির নড়ে উঠল। নিশ্চিত হই, আজ নয় কাল, আক্রমণ অনিবার্য।
কোনো কথা না বলে রিকশায় উঠে বসলাম। এবার একটা বন্দুক না কিনলেই নয়!   


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন