কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১৩১

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১৩১

শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫

প্রশান্ত গুহমজুমদার

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৬


হনন

চাকরি একটা করতে হয়, তাই করি। বিয়ে থা আর করা হয়নি। করেই বা কী হতো! সামাজিক ভাষায় একজন সহধর্মিণী থাকতো। কিন্তু সে কি সহমর্মী হতো? পরিচিত গন্ডীর মধ্যে পঞ্চাশ ষাট বছর এক ছাদের তলায় কাটিয়ে দেওয়া অনেক দম্পতিকেই তো দেখা গেল। বিচিত্র কিছু ভয় তাদের আটকে রেখেছে। রক্তমাংসের স্বাদ কমে গেলে তারা কেবল তখন স্বল্পপরিচিত দুটি প্রাণী।

তাই প্রায় পঞ্চাশের কোঠায় এসে আজ কোনো আক্ষেপ নেই। বেশ আছি। নানান মানুষ একলা ভেবে সুখদু:খের কথা বলে। বোঝাতে চায় একান্ত কষ্ট। তারা শুধু বলে।

কবিতা লিখি। কবিতার নৈ:শব্দ, নৈ:শব্দের কবিতা শব্দকে ভেঙে, তাকে তুচ্ছ করে, নির্বাণ থেকে অনির্বাণের দিকে এগিয়ে যায়। সে-কি কবিতার একান্ত প্রার্থনা! এই যে চতুর্দিকে কোলাহলের অফুরন্ত  জীবন, সে সবের অন্তরালে রয়ে যাচ্ছে এক অপার নৈ:শব্দ। অহরহ সে বোধগম্য নয়শব্দের কোলাজে, শব্দের নিরন্তর প্রহারে সে এক আলোকিত অন্ধকার। তখন কবিতা তো আর বোঝার নয়, অবিরাম বাজবে তার নতুনতর লয়, সুর, গান!

জানি, কবিতার কোনো গন্তব্য নেই। পথ চলাতেই তার আনন্দ। এই চলা তার কেবল নতুনে। শব্দে, ছবিতে, অভিজ্ঞতা, স্মৃতিতে তার ঝোলাটি ক্রমে পূর্ণ অথবা কখনোই সে পূর্ণ নয়। কবিতা স্ব-অধীনতায়  বিশ্বাসী, চারপাশের প্রকৃতি তাকে অহরহ এই স্থা-য়ে স্থির করে রাখে। আমি তো এতসব জেনে বুঝে কলম টেনে নিইনি। নতুনের জন্য অভীপ্সা কি সত্যিই আমার আছে? কবিতা যখন রঙ ও ধ্বনির নিখুঁত  ভারসাম্যে, রক্তে মাংসে উজ্জ্বল, তখনই তো লেখা হয়ে উঠবে নতুন সত্ত্বার অনিবার্য অংশ। তেমন এখনো আমার কবিতায় কই!

অথচ আমার! অথচ মিলন গাঙ্গুলি! সে-ও তো লেখে! এই বয়সেও কেমন পালটে যাচ্ছে সে প্রতিনিয়ত। আভরণে, নতুন ভাষায়, নতুন প্রকরণেআর আমার! কী যে সব লেখা! কেন লেখা! কিসের জন্য! এবার তবে বন্ধ হোক কীবোর্ড ল্যাপটপের এই ছেলেমানুষী! হ'ল তো অনেক। অনেক আগে শেষ হতেই পারতো। হয়নি, সে এক বিস্ময়!

শেষ হোক এমন একঘেয়ে চলা। কিন্তু কীভাবে!

৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে আজ। গায়ে লাগছে তার থেকে অনেক বেশি। রাস্তাঘাট প্রায় শূন্য। এই তো শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত! ফতুয়াটা গলিয়ে হাওয়াই চটি পরেই বেড়িয়ে পড়লামরেললাইন তো ঐ দিকেই। বাহুল্য আমাকে  আর কীই বা দেবে! জীবনের কোলাহলে কিছু বা অপূর্ণ। আর কিছু নয়! তবে কথা ছিল অবগাহনের! নিবেদন তো সেখানে পায়ে পায়ে। কিছু বা কিঙ্কিণীসুলভ। জল তখন ধীরে বয়ে যায় নতুন শব্দের খোঁজে। সেতোর্পণ!

দশ পা হেঁটেছি কী না, গলির মুখ থেকে প্রায় ছিটকে বেরোলো একটি ছেলে। সারা শরীরে ভয়। যেন বিভ্রান্ত!

-কী হ'ল রে? অমন দৌড়ে কোথায় যাচ্ছিস?

-কাকু, সর্বনাশ হয়ে গ্যাছে। অমিত পাঁচতলা থেকে ঝাঁপ দিয়েছে

‘অটো’, ‘অটো’ চিৎকার করতে করতে বড়ো রাস্তার দিকে দৌড়ে গেল তরুণ।

 

 


5 কমেন্টস্:

  1. খুব ভালো লাগলো। বোধের নির্যাস। অন্য দিক থেকে কবিতা স্বাদ। অনন্যমাত্রাকেই স্পর্শ।

    উত্তরমুছুন
  2. মাসুদার রহমান

    উত্তরমুছুন
  3. শব্দ, শব্দ দিয়ে বানানো এক মোহময় আবেশ, বাস্তবতার নির্মম চাবুকে ছিঁড়ে ফাটিয়ে কেমন খাড়া করে দিল চেতনা। শব্দ দিয়ে বানানো পূর্ববর্তী যে মায়া জাল বাষ্প রেখায় ভ্যানিশ হয়ে গেল বুদবুদের মত। ইমব্যালেনসড।

    উত্তরমুছুন
  4. বর্তমান সময় বড়ো গোলকধাঁধায়। মৃত্যুতে মুখ থুবড়ে পড়তে চায়। পড়ার মুহূর্তে আর্তনাদ হাহাকারে বিবরণ করে দেয়।

    উত্তরমুছুন
  5. হাহাকারে বিবশ

    উত্তরমুছুন