কবিতার কালিমাটি ১০৭ |
মড়কের গান
বৃষ্টির
বিকেলে ঘন্টাধ্বনি পাশের মন্দিরে,
বিকেলে
সন্ধ্যের ভাঁজ প'ড়ে
গ্যাছে,
কোনো
মন্ত্র নেই মৃদু মেঘগর্জন ছাড়া;
প্রতিষেধকের
বদলে কুশলী রটনা
গলি
দিয়ে উড়ে চ'লে যায় কাঁচাপাকা
মাথাগুলো
নেড়ে।
এই
মেঘ,এই তারা খেলা করে আকাশের গায়ে
রোগগ্ৰস্ত
মানুষেরা ভিড় ক'রে আছে বসবার
ঘরে
অসুখহীন হবার দুরাশায়।
প্রচন্ড
বৃষ্টির সাথে শিল পড়েছিল কিছু আগে,
শিলের
চড়বড় শব্দ স্পষ্টতর হয় না যেহেতু
শব্দ
দিয়ে শব্দকে ঢেকে দেওয়া যায়!
ছোট
ছোট শহরেও সেই শব্দরোধের প্রক্রিয়া
হয়েছে
শুরু যেমন গণোরিয়া বিকশিত হয়
মাটির
কুসুমে , রক্তে মাংসে।
এও
কি সংক্রামক নয়!
সম্পর্ক!
বিজড়িত নক্সা এক
কাঁথা
স্টিচে ডালফোঁড়ের
হঠকারী
চালে উজ্জ্বল অর্থবহের
বিপরীতে
যায় যেমন উল্টোস্রোতে
মাত্র
একমুঠো লোক ভেসে যায়।
তবুও
চলতি হাওয়া উপেক্ষা ক'রে এখনো
দুরন্ত
শিশু আর কিছু বয়োজ্যেষ্ঠ মনোবাঞ্ছাপূরণের
অসীম
একাগ্ৰতায় অনেক অশান্তি চেপে কালক্ষেপ ক'রে ছিপে মাছ ধরে।
পরীক্ষায়
দেখা গ্যাছে পাওয়ার কাটের
ফলে
ইনভার্টার ছাড়াও বেশ একা থাকা যায়।
মোমের
হলুদাভ শিখার ওপর যে কম্পিত কালো
ধোঁয়া
অবয়ব ভেবে নিয়ে তার সাথে কথা বলা যায়
উত্তরও
পাওয়া যায় মানসিক যোগে,
যদিও
মোমের আলো অফুরন্ত নয়,
কিন্তু
প্রাণবন্ত নৃত্যময় একক নৃত্যের গতিময়তায়।
কৃত্রিম
আলোগুলো চাকুরের
মতো
শুধু আলো দিয়ে যায়।
রাত
নিবে এলে নাগরিক ভোরে
মানুষেরা
হানা দেয় বড় শহরে।
সারাদিন
ধুলো চেটে হঠাৎ লকডাউনের
খবরে
দিশেহারা চারকোলরঙা লোকগুলো
ঘরে
ফেরার পথে এবং ফিরে ঢুঁড়ে ফ্যালে
যত
আছে দেশীয় বাজার; সুতরাং আকাল
তৈরী
হয়ে যায় অবলীলায়;
অথচ
আবশ্যিক ভয় জারি নেই কোথাও,
নগর
বন্দর,প্রান্তর,ভাঙা রাজবাড়ি অবিরত
সতর্ক
বার্তায় কম্বলের ওম্,লোকগুলো চেতনায় বোকা বোকা দুঃসাহসী;
সামাজিক
স্থাবরেরা মজুত করেছে স--ব পিন্ড সুখের উল্লাসে।
বিগত
দিনের শেষে এমনও দেখেছে লোকে
নালার
জলেতে চাল ভাসে!
কারা
যেন ব'লে যায় জোরে হেঁকে হেঁকে
'তোমরা
যে ব'সে আছো উদ্যোগহীন হ'য়ে!
বলেছিলে
কেন তবে,গার্হস্থ্য আনন্দ দেবে
স্বাভাবিক
মতে;তাহলে কি সেই কথা
ছিল
শুধু কথা--
তবে
কি অন্য খাতে পেয়ে গ্যাছো স্বাদ?
অলিখিত
চুক্তিরা হয়ে গ্যাছে বাদ!'
অযাচিত
প্রশ্নেরা চ'লে যায় দূরে
মহল্লাও
ডুবে যায় মহা ঘুমঘোরে।
তরঙ্গকে
অবলম্বন ক'রে
ভিন্ন
ভিন্ন বিষয়ের কারিগর উঠেছে
উঁচু
তরঙ্গশিখরে,
আবার
পাদদেশের চৌম্বকীয় টানে
তারা
সমবেত স্বরে নীচে নামে।
হিংসার
ভাষা তাকে কান পেতে শোনে।
উত্তেজনায় জ্বরের পারদ চ'ড়ে যায়,
ভূমিরও
শরীর খুব জ্বরে পুড়ে যায়,সেই কথা
সহজেই
অনুমেয় হয়।
শ্রেণীকরণের
মতো জাগতিক ব্যবচ্ছেদও
অনুপম
বিভেদের গানে মশগুল!
কিন্তু
বিভেদ তো ক'রে আছে গৃহকোণে ভীড়
যেমন
কুন্ডলী পাকিয়ে শোয় শান্ত খরিশ!
পৃথিবীর
এক শিথিল আবর্তনে
সময়
ঘুরিয়ে ঘাড়
পিছু
ফিরে চায়, অসংখ্য উন্মুক্ত
জমি
শালিধানে ভ'রে,মিনার,সৌধ,হর্ম্য
কল্পনার
আসরে আসেনি তখনও।
দ্বীপের
প্রতিটি কোটরে পুণ্যলোভাতুরা
স্নিগ্ধ
নিয়মে মঙ্গলদীপ ছিল আবাসিক
আঁচল
বাঁচিয়ে।
কারণে
অকারণে উপবনে ছিল
ঝিনুক
মুক্তো অঙ্গাঙ্গী খেলা
আভাসে
পাশবিক অবহেলা
আগামীর
জীবাশ্ম হ'য়ে ছিল।
মিতবাক
মুখে শুদ্ধসত্ত্ব ইঙ্গিতই যথেষ্ট সফল,
প্রতারণা
যোগী ভোগী কাউকেই পূর্ণমাত্রায়
প্রভাবিত
করেনি; বাতাসে রক্তে শর্করা, বীজাণু,
গরুড়ের
গন্ধপাগল সন্ত্রস্ত ব্যবসাজীবি প্রহরগোণা মুখে,
আদর্শ
রাজ্য যেন ইতিহাসে লেখা;
হ্যাঁ
একথা সত্যি ভূত,প্রেত
ঝাড়ফুঁক স্বার্থ মেনে স্বরচিত রথ।
বন্ধুত্ব,প্রমোদ
,খুশি পটে আঁকা না হোক সামঞ্জস্যের
ঘেরাটোপ
লঙ্ঘন করেনি।
তোরাজা
দ্বীপের মৃতরা কত সমাদরে জেগে
থাকে
জীবিতের সাথে একসাথে 'ম্যানেনে' উৎসবে!
এখন
এদেশে জীবিতের প্রতি আছে
মৃতের
আদর,তাই আদেশানুসারে
মৃত
সেজে থাকা।
যাদের
ফুল আছে, অশ্ব আছে, শব্দ আছে
তারা
অপেক্ষমাণ অবসরে ছবি আঁকতে
পারে;ঝরনার
শব্দমুখর ছবি।
বীতশোক
অরণ্যের ওপরের জংলা
আকাশে
শাদা ঘুড়ি ওড়ে সন্ধির
প্রস্তাব
নিয়ে; চুক্তিপত্রে কি লেখা
থাকবে
তা খানিকটা জানা,বাকিটা
দূর্গপ্রাকারের
ফার্নরচিত জটিল
আলপনা,অসহ্য
ক্ষমতাভার,ভাঙ্গা
সিংহাসন,
বিকেলের ঘুমে আসা
দুর্বোধ্য রচনা; ওরা যখনই মাথা
থেকে
চুঁইয়ে প'ড়ে আঙুলের ডগা
বেয়ে
নামে তখনই ইন্দোনেশিয়ার
লোকাচার,ওঝার
উল্লম্ফন,
আমাদের
অজস্র ডাইনিপ্রথা সংঘবদ্ধ
রূপ
নিয়ে গবেষণার মত শক্তিমান
অবাধ্য
নিঃশঙ্ক জগত;অস্পষ্ট পথচারীর
প্রতিধ্বনিময়
পদচারণা ফাঁকা ঘরে
কিংবা
প্রশস্ত অলিন্দে নির্বিচারে গণহত্যা
চালিয়ে
চ'লে যায় অল্প কিছু মানুষকে
নোয়ার
গুপ্ত নৌকায় ওঠার অনুমতি দিয়ে
যজ্ঞের
অনলে;রেখে যায় পরবর্তী শতকের
জন্য
আমাদের অধীর অপেক্ষা
কিংবদন্তী
প্রহারে প্রহারে।
(তোরাজা
দ্বীপ-ইন্দোনেশিয়ার একটি দ্বীপ। 'ম্যানেনে'
উৎসব-তোরাজা দ্বীপের একটি উৎসব। মৃত্যুর
পর থেকে অন্তিম সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত মৃতদেহকে
জীবিতের মতো দেখভাল করা এবং ম্যানেনে উৎসবের মাধ্যমে মৃতদেহের শেষকৃত্য সম্পন্ন করা। এটি একটি দীর্ঘকালীন প্রক্রিয়া।)
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন