কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০

তমাল রায়

সমকালীন ছোটগল্প

 


আলুনি কথা বা বাঙালির বিবর্তবাদ

 

শীত আসার আগে ওই যৎসামান্যই, মানে কমে এসেছিলো। যেমন যায়। ওই যা তাও কখনও সখনও, সকাল আর সন্ধ্যেয়... তখনও অবশ্য পাতাঝরা শুরু হতে দেরি। বেলা পড়ে আসছে তখন, দিন ছোট... রাতে আকাশপ্রদীপ জ্বলে, ভোর একটু দেরিতে, কোনোদিন বা দেখা গেলেও সামান্য সময়ের জন্যইআর প্রশ্ন ধেয়ে আসতো অনেক, আফটার অল অভ্যেস তো! প্রতিদিন তার সান্নিধ্য, আর তিনিও বলতেন, অভ্যেস বুঝলে, অভ্যেস ভালো, আবার খারাপও। কোনো কোনো বাচ্চাকে দেখবে, ধেড়ে হয়ে গেছে, চার কি পাঁচ, তবু মা'র স্তন চাইই চাই! মা'র হয়ত তখন বুকে দুধ নেই আর স্বাভাবিক ভাবেই, তবু ওই শুকনো বুকই সার। অভ্যেস বড় বাজে জিনিস! অভ্যেস নিয়ে আলোচনায় স্বাভাবিক ভাবেই উঠে আসতেন প্লেটো, এরিস্টটল, ফ্রয়েড, ইয়ুং নিদেনপক্ষে মোদি বা মমতা!

তারপর, তার দেখা পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠলো ক্রমশ!  আর কে না জানে,  যা দুস্প্রাপ্য তাহাই দামী! ফলে অনেক সুহৃদ,শত্রু, মিত্র তার খোঁজ করতে শুরু করলো। তিনি হয়ত তখন শীতল ঘরে বসে, সে কথা ভাবেন, উপভোগ করছেন। তবু তাকে পাওয়া যায়, বলেন কম, শোনেন বেশি। এভাবেই কবি দার্শনিক জন্ম নেয়! তাই তিনি আরও বিরল... বুড়ো হলে এই এক সমস্যা! লোকজন ভেবে বসে, তার বোধহয় নিজ হাতে আর কিছুই নেই! বয়সে অনুজ অভিভাবক নির্ভর! তারাই হয়তো... তবু ওই অভ্যেস। না থাকা ক্রমশ পার্মানেন্ট ভয়েড হয়ে মুছে যায় চিরতরে। তাকে মিস করা কমতে শুরু করেছে। যারা অধীর আগ্রহে এতদিন অপেক্ষায়, আর তেমন করছে না!

তারপর? গাছের পাতাঝরা শুরু হলো। তবে দেখা কি কেউই পেতো না? যাদের তেমন ক্ষমতা আছে বা অর্থবল তারা হয়তো কখনও সখনও পেয়েও যাচ্ছিলো। এটাই সভ্যতার দস্তুর। ক্ষমতা দুর্লভকেও মিলিয়ে দেয়, ঈশ্বর সম্মন্ধেও এমনই শোনা যায়। তিনি নাকি একচোখো।

কিন্তু ক্ষমতাবান নয়, ক্ষমতাহীনেরাই অধিকাংশ। আর তাই অভ্যেস বা অনভ্যাস, আবশ্যিক ভাবেই সম্পর্কিত ক্ষমতাহীনেরাই।

তারপর? নদীতে জল কমলো, গাছগুলোর ন্যাড়া হবার শুরু, দিনের ভাগ কমলো, রাত আরও বড়, তিনি আর প্রায় নেই বললেই চলে। মানুষজন এরপরও যারা তাকে মিস করে, রাষ্ট্রকে গালাগাল দিলো অনেক। শোনা গেল, মিডলম্যান বা দালালরাই না'কি যত নষ্টের গোড়া। রাসপূর্ণিমা গেল। রাষ্ট্র তখন নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে সিদ্ধান্ত নিলো কিছু। ঈদের চাঁদ আর রাষ্ট্রের জনকল্যাণকর আচার আচরণ দুইই দুর্লভ! তবু, কিন্তু অথবা তিনি আরও দুর্লভই রয়ে গেলেন।

তারপর? অনভ্যাসও এক অভ্যাস। মিস করাও একদিন শেষ হয়। কথা কমতে কমতে শেষ! শেষবার গড়িয়াহাট ফুটপাথের দোকানদার প্রদীপকে দেখা গেছিলো, কুড়ি টাকায় তিন পিস কিনতে। ব্যাস আর নেই!

কথা হচ্ছিলো আলু নিয়ে, ভাত-আলুসেদ্ধর বাঙালির যেভাবে অভ্যেসের বিবর্তন হয়েছিলো! কথা হচ্ছিলো পরিতোষ নিয়ে। পরিতোষ আর নেই! পরিতোষের বড় সন্তান এবার প্রাতভ্রমণে যাবেন, বাবার স্থলাভিষিক্ত হবেন। যেমন হয়। বাজারে নতুন আলু হয়ত আসবে। হয়ত নয়। ততদিন বাঙালির অভেসের বিবর্তনের গল্প, বাঙালি আপাতত আলু ও পরিতোষহীন এক সময়ে... ভোট আসার আগের এই অধ্যায়ের নাম বাঙালির শীতকাল! দিল্লিতে কৃষকদের র‍্যালি চলছে। বিপ্লব? পরিতোষের কাছে সে খবর পৌঁছচ্ছে কি’না কে জানে! শীত নামছে ঘন হয়ে। সুধী সাবধান!


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন