প্রতিবেশী সাহিত্য
সুভাষ রায়-এর কবিতা
(অনুবাদ : মিতা দাশ)
কবি পরিচিতি: জন্ম ১লা জানুয়ারি ১৯৫৭। জন্মস্থান বড়া গাওঁ মাও
নাথ ভঞ্জন। ইমার্জেন্সির সময় আন্দোলনের জন্য জেলও খেটেছেন। তাঁর প্রকাশিত
কাব্যগ্রন্থ ‘সলীব পর সচ’ এবং নিবন্ধ সংকলন ‘জাগ মছন্দর জাগ’। তিনি সাহিত্য রচনার
জন্য ইতিমধ্যে মাটিরত্ন সন্মান ও নাইধারা রচনা সন্মানে সম্মানিত হয়েছেন। বর্তমানে
তিনি লাখনৌতে ‘জন সন্দেশ টাইমস’এর চীফ এডিটার।
নিজের খেয়াল
কিছু কিছু মানুষ ঘড়ির কাঁটা মেনে চলে
এলার্ম বাজলেই ওদের ভোর
ওরা ঘড়ির এলার্মের অভ্যস্ত হয়ে গেছে
তাই আর কোনো রকমের এলার্ম
ওদের কানে যায় না
ওরা ওদের ঘড়ির নিয়মে এতই আবদ্ধ
ওরা এখন সেই গন্ডি পেরোতেই চায়না
ওরা ডাক্তারের সব পরামর্শ মেনে চলে
ডাক্তারের কথামত নিজের বেশ যত্ন নেয়
তাই ওরা শুধু নিজের খেয়াল রাখে।
দূরত্ব
দূরত্ব এতটাই যেন হয়
চোখের জল অব্দি পৌঁছতে পারে হাত
এত বেশি ও নয় কী কথা শুনতে অসুবিধে হয়
বুকের স্পন্দন
এত বেশি তো একেবারেই হওয়া উচিত না
মানুষ কি নিজের অস্ত্বিত্বের উপর
সন্দেহ করে!
চোখের ভাষা
কোন মানুষের যখন মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়
চোখ তখন তার কথা বলতে শুরু করে
মুখের ভাষা সবার আলাদা আলাদা হতে পারে
সম্পূর্ণ পৃথিবীর মানুষের
কিন্তু এক হয় চোখের ভাষা।
মৃতদেহ যে কোনো জায়গায় থাকতে পারে
সব সময় কিন্তু মৃতদেহ থেকে দুর্গন্ধ উঠে না
আর ওরা যেখানে সেখানে আসতে ও যেতে পারে
চলতে ফিরতে ও কোনো বাধা ছাড়া খাবারও খেতে পারে
কথাবার্তাও বলতে শুনতে পারে
যখন কোন নির্দোষের গলায় কেউ বা
কোন সরকার হাঁটু দিয়ে চেপে বসে
ওর নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়
তখনি মৃতদের চিনে নেয়া হয়
মৃতদেহ থেকে হু হু করে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
শুনছি
(এক)
শুনছি আমি
ভয়াবহ নিস্তব্ধতায় কাশি হাঁচি আর
শূন্যতায় ডুবে যাওয়ার আওয়াজ
মৃতদেহের হাসি শুনছি
হাসপাতাল আর শ্বশানের
অসমর্থতার কথা শুনছি
প্রথমবার এত কাছ থেকে
শুনতে পারছি মৃত্যুর স্পন্দন
সাফল্যের আত্মগান শুনছি
ভোরের পক্ষে রাত্রির বয়ান
তীক্ষ্ন স্বরে শ্লোক শুনছি
ভাষার ক্রুরতা শুনছি
ট্যাংক শুনছি তোপ শুনছি
মিথ্যার ঘন্টানাদ শুনছি
সহযোগিতার জন্য দেয়া ধন্যবাদ শুনছি
মূর্তি হয়ে উঠা জঙ্গলে পাথরের
জয়জয়কার শুনছি।
(দুই)
শুনছি
নিরাশার অন্ধকার চিরে
নেমে আসছে একটি অতিচেনা স্বর
কেউ কথা বলেই চলেছে অনবরত
আমি শুনছি
অন্তরে ছড়িয়ে পড়ছে গভীর ভাবে
সে বোধ হয় আমার পূর্বপুরুষ
সেই আওয়াজেই মিশে গেছে
হাজার হাজার আওয়াজ
সেই শব্দ থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছুরণ ছড়াচ্ছে
আর ভোরের ঘুম ভাঙছে।
ঈশ্বর
গোটা শহর যখন দাঙ্গায় মেতেছিল
আর আমার মুখ থেকে রক্ত ঝরছিল
‘হে ঈশ্বর’ আমি চিৎকার করে উঠলাম!
সত্যি সত্যি বল
তুমি কি এটাই চেয়েছিলে
মানুষেরা নিজেদের মধ্যে মারকাট করুক?
সে চুপ ছিল।
যখন একটি ছোট্ট মেয়েকে
কিছু পশুরা বেশ রগড় দিয়ে ধর্ষণ করল
তারপর পুড়িয়ে মেরে ফেললো
আমি ঈশ্বরকে ডাকলাম
আমি জানতে চাইলাম
ছোট্ট মেয়ের দোষটা কোথায়?
সে চুপ ছিল।
যখন কোন সংকটের সম্মুখীন হলাম
আমি বারবার ডাকলাম
সে চুপ ছিল।
শেষমেশ আমার একদিন
ওর অস্ত্বিতের উপর সন্দেহ হল
আমি চিৎকার করলাম-
অস্বীকার করি আমি তোমার অস্ত্বিত্বকে!
আমি ভাবলাম বোধহয় সে নিজেও
এইভাবে নিজেকে অস্বীকার করাটা
মেনে নিতে পারলো না
তাও সে চুপ ছিল।
আমি প্রত্যেককে জিজ্ঞাসা করলাম
কোনোদিন তোমাদের বেদনার মুহূর্তগুলিতে
ঈশ্বর কি কখনো তোমাদের মাথায় হাত রেখেছে?
সবাই চুপ ছিল।
কেউ কিছুই বললো না।
উত্তরমুছুনখুব স্পর্শকাতর কবিতা ও প্রাঞ্জল অনুবাদ ।