কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০

অপরাহ্ণ সুসমিতো


কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯১


 

ভাত ও পা


ভাত খেতে চাইলাম। সে আমাকে ভাত দিলোনা। বলল, সেই সকালে তো  খেয়েছো। আরে সকালে খেয়েছি বলে এখন খাবনা? এখন কম করে হলেও বেলা আড়াইটা। মানুষের পেটে খাবার কতক্ষণ থাকে? তিন-চারঘণ্টা?

আবার বললাম, খিদে লাগছে! চেঁচিয়ে বললাম, খি্দে লাগছে!  

চেঁচিয়ে বলার মাঝে যতটা ক্ষোভ, তার চেয়ে সুখ যে নিজের অধিকার প্রকাশ করা, জানান দেয়া।

কখনো এমন হয় যে যিনি অধিকার বাস্তবায়িত করবেন তিনি ক্ষোভের ভাষা ভ্রুক্ষেপ করেননা অথবা চুপ থাকেন এইভেবে যে, এই প্রকম্পন খুবই ক্ষুদ্র।  মিছিলের মতো না। মিছিল শব্দের মাঝে একটা সমষ্টি আছে, রাজানুগ্রহ ভয় পেতে পারে।

নিজে যে ভাত বেড়ে খাব, সেটার প্রয়োগ আচারাদি বন্ধ। রান্নাঘরে ঢোকার উপায় বন্ধ, তালা। নাক টেনে টেনে ভাতের ঘ্রাণ নেবার চেষ্টা করলাম, বোঝার বাসনা করলাম যে আজ দুপুরের ভাত রান্না হয়েছে কিনা, রান্না হওয়া গরম ভাতের একটা আগ্রাসী ঘ্রাণ থাকে, ছড়িয়ে পড়ে ভুখা প্রান্তর।

আমি: সানুনয় নিবেদন করি, ভাত দাও!  

সে: ভাত পাবেনা।

আমি: তার মানে ভাত আছে, তুমি দেবেনা?

সে: হ্যাঁ।

আমি: কেন কেন? আমি সকাতর ক্ষুধার্ত…

সে মুখ ফিরিয়ে গনগন বা গটগট চলে গেল অন্যকোথাও। তার হাঁটার গতির সাথে আপাতত এই দুটো বিশেষণ মাথায় এলো।

ভাত দেবার যার দায়িত্ব তাকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব যেন ক্ষুধার্তের। বাড়ি চষে তাকে বের করলাম। দেখলাম তিনি অংক কষছেন। সামনে দাঁড়িয়ে দেখলাম তিনি সাদা কাগজে লিখছেন;

If ভাত = x

ক্ষুধার্ত ব্যক্তি = y, মৌলিক অধিকার = z, পরিশ্রম = a, মানবিকতা = b

সুতরাং;

Y = z+b

আবার

X = z+a+b

মানে হলো ভাত = মৌলিক অধিকার + পরিশ্রম + মানবিকতা

যখন মৌলিক অধিকার ও মানবিকতা জিরো হয় তখন ভাত শুধু পরিশ্রমের সমান হতে পারে। আর যেহেতু ওয়াই মানে ক্ষুধার্ত ব্যক্তির পরিশ্রম জিরো তখন ভাত =  জিরো

 

এবার সে আমার দিকে সহাস্যে তাকাল। বিনয়ী ভঙ্গিমায় বলল;

: তোমার পরিশ্রম শূন্য সুতরাং তুমি ভাত পাবেনা। আর ধরে নিচ্ছি দরিদ্র দেশে মৌলিক অধিকার ও মানবিকতা থাকেনা।

আমি হতবাক হয়ে রইলাম। বললাম;

: পরিশ্রম করিনা বলে ভাত খেতে পারবনা? তাহলে তো মরে যাব। ক্ষুধায় আমি আরো জর্জরিত, কষ্টের সহ্যসীমারেখা অতিক্রম করার প্রান্তে এসে দহন হচ্ছি।

অনুনয় করে আবার বললাম;

: তোমার পায়ে ধরি, ভাত দাও!

সে নিষ্ঠুর উঠে দাঁড়াল। খনখনে গলায় বলল;

: ব্যাখ্যা করো, কেন পা-ধরার কথা বললে? হাতে ধরার কথা কেন বললেনা?

আমার মাথা কাজ করছেনা খিদের সন্ত্রাসে। শরীর কাঁপছে। হাউমাউ করে বললাম;

: আমরা পা-কে তুচ্ছ ভাবি। বড়দের পা ধরে সম্মান জানিয়ে নিজেকে ক্ষুদ্র ভাবি…

কোন কিছুই থেমে থাকেনা। দুপুরের রোদ বিকালের দিকে হামাগুড়ি দিলো। তারপর হয়ত বিকাল সন্ধ্যায় হাঁটবে। রাত সন্ধ্যার দিকে পা বাড়াবে। সে আমার দিকে পা বাড়িয়ে দিলো।

 

 

 

1 কমেন্টস্: