পরী
শ্রাবণী দাশগুপ্ত
নীলাব্জ পরী হইয়া গিয়াছে। বেগুনি বেগুনি আকাশ, অদূরে গোলগাল চাঁদ, মাঝখানে বিধিসম্মত কৃষ্ণকলঙ্ক। পরী হইয়া আরাম লাগিতেছিল। হাত দুইখানার উপর হইতে ডানা পাতলা চামড়ার চাদরে পালকের ন্যায় সাঁটা। একটু ভারি ভারি ঠেকিতেছিল প্রথমটায়, যেন বাড়তি বোঝা। উঠিয়া আসার পরে মন্দ লাগিতেছে না। কুঞ্চিত থাক্থাক্ মুক্তকেশের ঢল -- যেমনটা কার্টুনে হয়। রেশমকোমল হাতের দীর্ঘ আঙুল। আপাতত এটুকু সে দেখিতে পাইতেছে। মাথায় টায়রার ন্যায় মুকুট। ছুঁইয়া বোধ হইল, দামি পাথর গাঁথা। এ্যাই নীলু, তুই পরী না পরা? তুই পরী না পরা? শ্রমণা বলিতেছে, মানে প্রাক্কৈশোরে বলিত। পরীর গল্প খুব হইত তখন, লালপরী নীলপরী মেঘপরী ফুলপরী। পদ্মডাঁটা শ্রমণার হাত, ফ্রক উঠিয়া গেলে মাখন পা। নীলাব্জর হাফপ্যান্টের বাহিরে শ্যাম ও শীর্ণ, কিছু অমসৃণ পা। বড় লোভ হইত ওইরকম...। শ্রমণা বলিত, দিম্মাকে বলে দেব কিন্তু। ছেলে না তুই...! ছেলে? কে বলিয়াছে? লুকাইয়া শ্রমণার ফ্রক পরিয়া দেখিয়াছিল, তাহার বৈচিত্রবিহীন রেখাঙ্কিত শার্টের চেয়ে ঢের মানাইতেছে। সরস্বতীপূজায় তের বছরের শ্রমণার কদমফুলরঙা তাঁত শাড়িটিতে অতর্কিতে প্রথম নারী হইবার চিহ্ন... পুষ্পাঞ্জলি পারিল না। আহা, বড় কাঁদিয়াছিল। নীলাব্জ বিষণ্ণতা বুঝিবার প্রয়াস করিতেছিল। নদীটির যেইখানে নীলাব্জ সেখানে শ্রমণা নাই। শ্রমণার মতো কেহ নাই। নীলাব্জর মতো কষ্ট শ্রমণার নাই। শ্রমণার মতো অন্য কাহারও নাই। বহমানা স্রোতস্বতীর পাড়ে অন্তর্জলি বালুচর। মধ্যকার আঠালো কদর্মাক্ততায় আকণ্ঠ তৃষ্ণা ও অতৃপ্তি। আজ পরী হইয়া তাহার চোখে জল আসিয়া পড়িতেছে। ইহাই কি আন্তরিক ইচ্ছা ছিল? কলেজে প্রথমদিন গভীর বাসনা ঘিরিয়াছিল বর্ণিকাকে দেখিয়া। কোত্থেকে কিনিস্ কুর্তি?... খুব সুন্দর... চমৎকার। উরে বাবারে... কেন রে? পরবি? না গার্লফ্রেন্ডের জন্যে? নীলাব্জর সামনে অকস্মাৎ ধৈবত। ফাস্টট্র্যাকের বৃহত্তম ডায়ালশোভিত চওড়া কবজি নীলাব্জর হাতের পাতা দেখিতেছিল। হুঁ... ছবিটবি আঁকিস্? শোন্ বর্ণিকার সাথে এগোলে বিপদে পড়তে পারিস। আজ যাঃ। দেহ জুড়িয়া অবণর্নীয় ঝঙ্কার... ধৈবত... ধৈবত... পুরুষালি গন্ধস্পর্শ! বণির্কার ভাগ্য। ইমনের সাগ্নিক, ফাল্গুণীর শীর্ষ...। ধৈবতের বাহুতে বর্ণিকা! ধৈবত কি তাহার হইতে পারিত? শ্রমণা একদিন সুপর্ণর সঙ্গে পরিচয় করাইল। নীলু, একটা গার্লফ্রেণ্ড জোটাতে পারলি না এ্যাদ্দিনে? সে নীলবর্ণ হইয়া গিয়াছিল এমন শ্বাসরোধী প্রশ্নে। পরী নীলাব্জ দেখিতে পাইতেছে না বক্ষোদেশে চিরাকাঙ্ক্ষিত প্রত্যঙ্গ ধারণ করিতেছে কিনা! নবনীতকোমল পদদ্বয়ের মধ্যবর্তী... কে জানে! সমস্তটি জুড়িয়া ছায়াময় আচ্ছাদন তাহাকে দ্বিধাগ্রস্ত করিয়া রাখিয়াছে। আজও শ্বাসে পুরুষালি ধৈবত...। পেলব বাহুতে মণিময় গহনা দেখিয়া এখন সে ফুলিয়া উঠিতেছে, আহা! প্রকাশ করিতে কতবার শরম আসিয়া ঘেরিয়াছে... মা-কেও বলে নাই। নীলু তুই পরী না পরা? পরী না পরা? সে মনে মনে বলিল, অপরা।
শ্রাবণী দাশগুপ্ত
নীলাব্জ পরী হইয়া গিয়াছে। বেগুনি বেগুনি আকাশ, অদূরে গোলগাল চাঁদ, মাঝখানে বিধিসম্মত কৃষ্ণকলঙ্ক। পরী হইয়া আরাম লাগিতেছিল। হাত দুইখানার উপর হইতে ডানা পাতলা চামড়ার চাদরে পালকের ন্যায় সাঁটা। একটু ভারি ভারি ঠেকিতেছিল প্রথমটায়, যেন বাড়তি বোঝা। উঠিয়া আসার পরে মন্দ লাগিতেছে না। কুঞ্চিত থাক্থাক্ মুক্তকেশের ঢল -- যেমনটা কার্টুনে হয়। রেশমকোমল হাতের দীর্ঘ আঙুল। আপাতত এটুকু সে দেখিতে পাইতেছে। মাথায় টায়রার ন্যায় মুকুট। ছুঁইয়া বোধ হইল, দামি পাথর গাঁথা। এ্যাই নীলু, তুই পরী না পরা? তুই পরী না পরা? শ্রমণা বলিতেছে, মানে প্রাক্কৈশোরে বলিত। পরীর গল্প খুব হইত তখন, লালপরী নীলপরী মেঘপরী ফুলপরী। পদ্মডাঁটা শ্রমণার হাত, ফ্রক উঠিয়া গেলে মাখন পা। নীলাব্জর হাফপ্যান্টের বাহিরে শ্যাম ও শীর্ণ, কিছু অমসৃণ পা। বড় লোভ হইত ওইরকম...। শ্রমণা বলিত, দিম্মাকে বলে দেব কিন্তু। ছেলে না তুই...! ছেলে? কে বলিয়াছে? লুকাইয়া শ্রমণার ফ্রক পরিয়া দেখিয়াছিল, তাহার বৈচিত্রবিহীন রেখাঙ্কিত শার্টের চেয়ে ঢের মানাইতেছে। সরস্বতীপূজায় তের বছরের শ্রমণার কদমফুলরঙা তাঁত শাড়িটিতে অতর্কিতে প্রথম নারী হইবার চিহ্ন... পুষ্পাঞ্জলি পারিল না। আহা, বড় কাঁদিয়াছিল। নীলাব্জ বিষণ্ণতা বুঝিবার প্রয়াস করিতেছিল। নদীটির যেইখানে নীলাব্জ সেখানে শ্রমণা নাই। শ্রমণার মতো কেহ নাই। নীলাব্জর মতো কষ্ট শ্রমণার নাই। শ্রমণার মতো অন্য কাহারও নাই। বহমানা স্রোতস্বতীর পাড়ে অন্তর্জলি বালুচর। মধ্যকার আঠালো কদর্মাক্ততায় আকণ্ঠ তৃষ্ণা ও অতৃপ্তি। আজ পরী হইয়া তাহার চোখে জল আসিয়া পড়িতেছে। ইহাই কি আন্তরিক ইচ্ছা ছিল? কলেজে প্রথমদিন গভীর বাসনা ঘিরিয়াছিল বর্ণিকাকে দেখিয়া। কোত্থেকে কিনিস্ কুর্তি?... খুব সুন্দর... চমৎকার। উরে বাবারে... কেন রে? পরবি? না গার্লফ্রেন্ডের জন্যে? নীলাব্জর সামনে অকস্মাৎ ধৈবত। ফাস্টট্র্যাকের বৃহত্তম ডায়ালশোভিত চওড়া কবজি নীলাব্জর হাতের পাতা দেখিতেছিল। হুঁ... ছবিটবি আঁকিস্? শোন্ বর্ণিকার সাথে এগোলে বিপদে পড়তে পারিস। আজ যাঃ। দেহ জুড়িয়া অবণর্নীয় ঝঙ্কার... ধৈবত... ধৈবত... পুরুষালি গন্ধস্পর্শ! বণির্কার ভাগ্য। ইমনের সাগ্নিক, ফাল্গুণীর শীর্ষ...। ধৈবতের বাহুতে বর্ণিকা! ধৈবত কি তাহার হইতে পারিত? শ্রমণা একদিন সুপর্ণর সঙ্গে পরিচয় করাইল। নীলু, একটা গার্লফ্রেণ্ড জোটাতে পারলি না এ্যাদ্দিনে? সে নীলবর্ণ হইয়া গিয়াছিল এমন শ্বাসরোধী প্রশ্নে। পরী নীলাব্জ দেখিতে পাইতেছে না বক্ষোদেশে চিরাকাঙ্ক্ষিত প্রত্যঙ্গ ধারণ করিতেছে কিনা! নবনীতকোমল পদদ্বয়ের মধ্যবর্তী... কে জানে! সমস্তটি জুড়িয়া ছায়াময় আচ্ছাদন তাহাকে দ্বিধাগ্রস্ত করিয়া রাখিয়াছে। আজও শ্বাসে পুরুষালি ধৈবত...। পেলব বাহুতে মণিময় গহনা দেখিয়া এখন সে ফুলিয়া উঠিতেছে, আহা! প্রকাশ করিতে কতবার শরম আসিয়া ঘেরিয়াছে... মা-কেও বলে নাই। নীলু তুই পরী না পরা? পরী না পরা? সে মনে মনে বলিল, অপরা।
নদীটির যেইখানে নীলাব্জ সেখানে শ্রমণা নাই। ভাল লাগল।
উত্তরমুছুন-প্রশান্ত গুহমজুমদার
ধন্যবাদ জানিবেন। শ্রাবণী।
উত্তরমুছুন