বার্ধক্যভাতা
পিনাকী সেন
‘স্যার, ভ্যান-কেসগুলো একটু আগে ছেড়ে দেবেন। কখন মরে টরে যায়?’ বার্ধক্য-ভাতা বিতরণ। ষাট পেরোলে মাসে চারশো, আশি পেরোলে সাতশ। তিনমাসের টাকা একসঙ্গে এসেছে। দূর দূরান্ত থেকে সরকারী বৃদ্ধদের লাইন। অশক্তদের সঙ্গে ছেলে-পিলে নাতি-নাতনি যার যেমন সামর্থ্য। অফিসের ভিতর ভিড় থিক থিক। পাবলিক জানে, বুড়োবুড়ি দিবস। দোতালা অফিসের দক্ষিণদিকে ফাঁকা জায়গাটা, যেখানে অন্যদিন পথচলতি অটো এসে গ্যারেজ করে, আজ শুধু ভ্যান আর সাইকেল। অথর্বদের ভ্যানের উপর শুইয়ে রাখা। ভ্যান-কেস। কাঁথা কম্বল বিছানা। অনেক সময়ই অনেকের সার থাকে না, আবার অসারে হেগে মুতেও রাখে। ‘দেবু, চলে যাও। ভালো করে ফোটো মিলিয়ে ঠিক লোককে দেবে কিন্তু! ভুল হলেই গণ্ডগোল’। এই হয়েছে এক জ্বালা; একবার মুখ মিলিয়ে টিপ নাও, আবার মুখ মিলিয়ে টাকা দিয়ে এস।
জানতাম, তবু অজান্তেই হোঁচট খেতে হলো। বেরোনোর ঠিক মুখটাতে গুঁড়ি সুঁড়ি মেরে দলা-পাকানো ময়লা ন্যাকড়ার মতো পরেছিল। অবলম্বনের একমাত্র মোটা বাঁশের লাঠিটা একহাত বাইরে। তাতেই হোঁচট। ‘কি গো? সাইড করে বসতে পারো না? আরও লোকজন তো আসবে যাবে নাকি?’ কুণ্ডলী কোনোক্রমে মুখটা বের করে ধূসর আবছা চাইল। আর্ট-ক্রাফট বাজার থেকে দাম দিয়ে কিনে আনা বার্ধক্যের সেই পুরনো পপুলার ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট ছবি। তোবড়ানো গাল। চোখের কোণে পিচুটি। বইয়ের ভাঁজে শুকিয়ে ঝরিয়ে নেওয়া অশ্বত্থ-পাতার আর্টিস্টিক বলিরেখা। জমা করে রাখা ভিজে কাপড় যেমন ভক করে ওঠে, ভরা ভাদ্রের ভ্যাপসানো গরমেও গায়ে সবুজ কম্বলের চাদর। ‘শরীর খারাপ নাকি? সঙ্গে আর কেউ আসে নি?’ ঘোলাটে চাউনি কি শুনল কি বুঝল, বোঝা গেল না। ‘নানীর জ্বর’। এতক্ষণ খেয়াল পরেনি, দেওয়ালের আড়ালে বছর দশেকের রঙ-চটা ফ্রক তখনও নখ খুঁটছে। সিঁড়ি বেয়ে সারি সারি বুড়োবুড়ির দল। সবার মুখে প্রায় একই রকম ভাঙনের ছবি, অসার অভিব্যক্তি। ‘সরে বস, সরে বস, যাতায়াতের জায়গা রেখে বস’।
ভ্যানে শোয়ানো যে বুড়োটার ফটো মিলিয়ে টিপ নিয়ে এসেছিলাম, তারও গা গরম ছিল। ব্যাঙ্কের বইটা শক্ত করে মুঠোয় নিয়ে শুয়ে। চার ছেলে, কারুর হাতেই দেয়নি, ব্যাঙ্কের লোক ছাড়া। জ্ঞান একেবারে টনটনে। ‘দেখি চাচা, মুখটা দেখি।’ সেই অবিকল ধবধবে সাদা মৌলবি দাড়ি। চোখ কাটানো কালো মোটা ফ্রেমের চশমা। খুব সম্ভবত একদিকের গ্লাস ভেঙে যাওয়ায় লিউকোপ্লাস্ট সাঁটা। ফটো মিলিয়ে ঠিক লোককে টাকা’কটা গুণে মুঠোয় গুঁজে দিতে গিয়ে দেখি ঠাণ্ডা হাত। চার ছেলে সমেত আরও জনা সাতেক তখনও উদগ্রীব দাঁড়িয়ে।
পিনাকী সেন
‘স্যার, ভ্যান-কেসগুলো একটু আগে ছেড়ে দেবেন। কখন মরে টরে যায়?’ বার্ধক্য-ভাতা বিতরণ। ষাট পেরোলে মাসে চারশো, আশি পেরোলে সাতশ। তিনমাসের টাকা একসঙ্গে এসেছে। দূর দূরান্ত থেকে সরকারী বৃদ্ধদের লাইন। অশক্তদের সঙ্গে ছেলে-পিলে নাতি-নাতনি যার যেমন সামর্থ্য। অফিসের ভিতর ভিড় থিক থিক। পাবলিক জানে, বুড়োবুড়ি দিবস। দোতালা অফিসের দক্ষিণদিকে ফাঁকা জায়গাটা, যেখানে অন্যদিন পথচলতি অটো এসে গ্যারেজ করে, আজ শুধু ভ্যান আর সাইকেল। অথর্বদের ভ্যানের উপর শুইয়ে রাখা। ভ্যান-কেস। কাঁথা কম্বল বিছানা। অনেক সময়ই অনেকের সার থাকে না, আবার অসারে হেগে মুতেও রাখে। ‘দেবু, চলে যাও। ভালো করে ফোটো মিলিয়ে ঠিক লোককে দেবে কিন্তু! ভুল হলেই গণ্ডগোল’। এই হয়েছে এক জ্বালা; একবার মুখ মিলিয়ে টিপ নাও, আবার মুখ মিলিয়ে টাকা দিয়ে এস।
জানতাম, তবু অজান্তেই হোঁচট খেতে হলো। বেরোনোর ঠিক মুখটাতে গুঁড়ি সুঁড়ি মেরে দলা-পাকানো ময়লা ন্যাকড়ার মতো পরেছিল। অবলম্বনের একমাত্র মোটা বাঁশের লাঠিটা একহাত বাইরে। তাতেই হোঁচট। ‘কি গো? সাইড করে বসতে পারো না? আরও লোকজন তো আসবে যাবে নাকি?’ কুণ্ডলী কোনোক্রমে মুখটা বের করে ধূসর আবছা চাইল। আর্ট-ক্রাফট বাজার থেকে দাম দিয়ে কিনে আনা বার্ধক্যের সেই পুরনো পপুলার ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট ছবি। তোবড়ানো গাল। চোখের কোণে পিচুটি। বইয়ের ভাঁজে শুকিয়ে ঝরিয়ে নেওয়া অশ্বত্থ-পাতার আর্টিস্টিক বলিরেখা। জমা করে রাখা ভিজে কাপড় যেমন ভক করে ওঠে, ভরা ভাদ্রের ভ্যাপসানো গরমেও গায়ে সবুজ কম্বলের চাদর। ‘শরীর খারাপ নাকি? সঙ্গে আর কেউ আসে নি?’ ঘোলাটে চাউনি কি শুনল কি বুঝল, বোঝা গেল না। ‘নানীর জ্বর’। এতক্ষণ খেয়াল পরেনি, দেওয়ালের আড়ালে বছর দশেকের রঙ-চটা ফ্রক তখনও নখ খুঁটছে। সিঁড়ি বেয়ে সারি সারি বুড়োবুড়ির দল। সবার মুখে প্রায় একই রকম ভাঙনের ছবি, অসার অভিব্যক্তি। ‘সরে বস, সরে বস, যাতায়াতের জায়গা রেখে বস’।
ভ্যানে শোয়ানো যে বুড়োটার ফটো মিলিয়ে টিপ নিয়ে এসেছিলাম, তারও গা গরম ছিল। ব্যাঙ্কের বইটা শক্ত করে মুঠোয় নিয়ে শুয়ে। চার ছেলে, কারুর হাতেই দেয়নি, ব্যাঙ্কের লোক ছাড়া। জ্ঞান একেবারে টনটনে। ‘দেখি চাচা, মুখটা দেখি।’ সেই অবিকল ধবধবে সাদা মৌলবি দাড়ি। চোখ কাটানো কালো মোটা ফ্রেমের চশমা। খুব সম্ভবত একদিকের গ্লাস ভেঙে যাওয়ায় লিউকোপ্লাস্ট সাঁটা। ফটো মিলিয়ে ঠিক লোককে টাকা’কটা গুণে মুঠোয় গুঁজে দিতে গিয়ে দেখি ঠাণ্ডা হাত। চার ছেলে সমেত আরও জনা সাতেক তখনও উদগ্রীব দাঁড়িয়ে।
Style ta darun. . . .
উত্তরমুছুনAmi sahitter temon bujhina,
But apparently ur style has its own value and signature. . .and they are simple yet subtle in argumentation. . .