কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / নবম সংখ্যা / ১৩৬

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / নবম সংখ্যা / ১৩৬

বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫

শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস

 

ধারাবাহিক উপন্যাস

দ্য ক্লাউড

 


(ষোড়শ পর্ব)          

মেয়েমানুষের সখের সংসারের ভেতরে থাকা কিছু কিছু কথা, যেমন নিমচাঁদ, আনন্দ আর বাবলুকে খেতে দিয়ে মনিরত্না নিজের খাওয়ার থালাতে ভাত বাড়তে গিয়ে মনে হলো, আমার এমন একটা পরিবার হওয়ার কথা ছিলো। স্বামী সন্তান আর স্বজন নিয়ে একটি মধ্যবিত্ত বাঙালি যৌথ পরিবার।

চোখ কচলাচ্ছে মনিরত্না। আনন্দ জিজ্ঞেস করলো- কী হলো? চোখে কিছু কি হয়েছে?

মনিরত্না ভরদ্বাজ তখন যেন তার জীবদ্দশায় চলে গেছে।

এমন একটা নারী চরিত্রই তো উৎপল চিত্রকর আঁকতে চেয়েছে, যে চরিত্রের আকাঙ্ক্ষাগুলো আকাশে ভোরের পাখির মতো গাছের বাসা থেকে উড়াল দিয়ে বেড়িয়ে গোধূলির আলোমাখা লালপথ ধরে আর ফিরে আসবে না সেদিক দিয়ে উৎপল এক্কেবারেই সফল আর্টিস্ট। ওর আঁকা প্যাস্টেল কালারের হীরার আলো কমে এলে যেমনটা হয়, তেমন অধোবদনা মনিরত্নার ছবিটি ভারতীয় পার্লামেন্টের নতুন ভবনের দেওয়ালে এখন জ্বলজ্বল করছে।

না। এ কোনো মোনালিসা নয়। এ ছবির গালে কোনো হীরক খচিত অশ্রুকণা আঁকেনি। তার বদলে হীরকের কমে যাওয়া আলোকে নিভু নিভু প্রদীপের শিখায় চিরন্তনী এক সন্ধ্যাকালকে এঁকেছে উৎপল।

এই তো সেদিন, যেদিন মনিরত্না রেড এরিয়ায় তার জন্য বরাদ্দ রাখা ঘর থেকে প্রেমিকের ছদ্মবেশে থাকা এক কুৎসিত বিকৃত পুরুষকে খুন করার অপরাধে আজীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হয়ে গেলো, সেদিনের ছবি যদি দ্বিতীয়বার উৎপল আঁকতে পারতো, তবে নিশ্চিত যে, সে হতে পারতো ভারতীয় সভ্যতার পথে পথে ছুটে বেড়ানো একটি তেজি ঘোটকী। কিন্তু এটা উৎপল করতে চায়নি। কারণ?

এই ভর সন্ধ্যায় কবরখানার মাঠ থেকে বেরিয়ে আসতে গিয়ে উৎপলের মনে হচ্ছে যে, এতো বড় মহাকাশ!   অফুরান বাতাস বয়ে চলেছে। সেই বাতাসে কতো কতো পরিত্যক্ত জীবজগতের অশরীর! একজন মনিরত্না বহু মনিরত্নাকে রিপ্রেজেন্ট করে দিয়েছে ইতিমধ্যেই। অতএব আর এসব নয়। ওই একজন-ই থাক।

আগামীকালের ভাবনায় একজন কৃষ্ণকায়, যে এক গভীর গর্তের মুখ। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বললে মহাভারতের শ্রীকৃষ্ণ।

সকালের রোদ হয়ে যেন মাখোমাখো করে দিলো নিমচাঁদ, আনন্দ, বাবলুকে নিয়ে মনিরত্নার অ-শারীরিক সংসারকে। ঘোর কাটলে ওরা চারজনেই বুঝতে পারলো যে, একটা নতুনতর তাৎপর্যে আমাদের মৃত্যু পরবর্তী সময় আলোকিত হতে চলেছে।

ওরা চারজনেই শুনতে পাচ্ছে সেই আলোকিত গাঢ় আঁধার থেকে এক বিশাল দেহ পরিত্যক্ত একজন পুরুষপ্রবর। তিনি বলছেন –

"বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায়

নবানি গৃহ্নাতি নরোহপরাণি,

তথা শরীরাণি বলে হায় জীর্ণান্যন্যানি,

সংযাতি নবানি দেহী"

ওরা চারজনেই একত্রে চোখ বুজে বলতে শুরু করলো, মানুষ যেমন জীর্ণবস্ত্র পরিত্যাগ করে নতুন বস্ত পরিধান করে, তেমনই 'শরীর '- জীর্ণ হয়ে গেলে পরিত্যাগ করে নতুন শরীর ধারণ করে।

তিনি এক অপরূপ! তিনি বলছেন - আমিই সেই, যে সকল শরীরের উদ্গম। সকল কর্ম, অথচ নিষ্কাম। যে অদ্বৈত থেকে বহুমাত্রিক রূপ। যিনি সৃষ্টি স্থিতি ও প্রলয়ের অধিকারী মূর্ত ও বিমূর্ত রূপের পরিচয়। সে মানে আমি। আমি মানে পরম জ্ঞান। এক কঠিন অন্ধকার হয়ে আছি। যাকে চিনতে ও জানতে গেলে মনঃসংযোগ করতে হয়।

ওরা চারজনেই একত্রে বলে উঠলো, কোথায় আপনি? কোথায় আমাদের ঘনশ্যাম?  কোথায় আমাদের ন'দের নিমাই?

(ক্রমশঃ)

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন