ফ্ল্যাশব্যাকে থিয়েটার পাঁচালি # বিনোদিনীর লেখায় রঙ্গমঞ্চের ইতিহাস দর্পণ
ছবিঃ সুকুমারি দত্ত
|
প্রতি,
এটা
একটু বেশিই ফ্ল্যাশব্যাক… বুঝলেন হে পাঠক! এই পর্বে একটু আলোচনা আইন ও নাটক।
আইনের সরাসরি প্রভাব ও বাংলা রঙ্গমঞ্চ? এমন আবার হয় নাকি? হ্যাঁ, হয়,
হয়ে বসে আছে। এই তো ইতিহাসের পাতা ওলটাতে ওলটাতে পেলাম, মামলা
মোকদ্দমায় গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার জেরবার হয়ে বন্ধ হয়ে গেল। দেনার দায়ে বিক্রি হয়ে
গেল থিয়েটার। থমকে গেল সুকুমারীর অভিনয়জীবন।
এত
বড় কাণ্ড! কিন্তু কেন? একটা থিয়েটার হলের বিরুদ্ধে মামলা করল কে বা কারা? কাদের এত
সময় ছিল যে, ওই যারা থিয়েটার করে, শহরের একপ্রান্তে
থিয়েটার বানিয়ে মন্দ মেয়েদের নিয়ে, তাদের এমন কাজের পেছনে অর্থ নষ্ট করবে?
এদিকে,
ইতিহাস আরও বলছে, আরেকজন অভিনেতা বিহারীলাল চট্টোপাধ্যায় পুলিশে
চাকরি নিয়ে আন্দামান চলে গেলেন। অমৃতলালও বিলেত চলে যেতে চাইলেন। কিন্তু বাড়ির
অমতে যেতে পারলেন না। পরে তিনিও গেলেন আন্দামান, অবন্দী
বাঙালি হিসেবে। নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় কন্যার বিবাহের
অজুহাতে থিয়েটার ছাড়লেন। বিনোদিনী যোগ দিলেন বেঙ্গল থিয়েটারে।
আরও
ঘটল ঘটনা, এখানেই শেষ নয়। একটা থিয়েটার থেকে কাণ্ড এই? উপেন দাস এই
মামলা নিষ্পত্তির আগেই টিবি আক্রান্ত হয়েছিলেন। মামলায় জড়িয়ে প্রচণ্ড অর্থাভাবে
এসে পড়েন। তাঁর দ্বিতীয়া স্ত্রী আত্মহত্যা করেন। সবদিক থেকে
সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন উপেন।
এদিকে, শিবনাথ শাস্ত্রীও বিদ্যাসাগরের মধ্যস্থতায় পিতা শ্রীনাথ দাসের সাহায্যে উপেন
অসুস্থতা কাটিয়ে লন্ডন পাড়ি দেন। তাঁর এই পর্বের থিয়েটার জীবন এখানেই সমাপ্ত হয়। সবচেয়ে
উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড এই পর্যায়ে বাংলা রঙ্গমঞ্চের এক ইতিহাস। কিন্তু আইনের গ্যাঁড়াকলে কেন পড়ল এই থিয়েটার? এই যে সমাপন, তা
ক্ষণস্থায়ী
নাকি চিরস্থায়ী?
বাংলা রঙ্গমঞ্চের প্রতিবাদী নাটকের ইতিহাস ঘেঁটে গবেষণা হয়েছে। এমনকি
উচ্চতর ডিগ্রি কাঁধে চলেছে গবেষকরা। কিন্তু, কেন আইন এল থিয়েটারে? প্রায়
সবাই-ই জানে একটা নাটক ঘিরে হয়েছিল। তাই আইনি মামলা মকদ্দমা
এবং রচনার গাঁথতে এই পর্ব…
হে পাঠক,
কলকাতা শহরকেন্দ্রিক রঙ্গমঞ্চের ইতিহাসে ‘নীলদর্পণ’
থেকে যে আলোচনা গড়ে উঠেছিল, তার শেষ হল না। উপেন্দ্রনাথের নাটক হয়ে
এই ধারা বাংলা নাটকের জন্য স্থায়ী হল। কীভাবে? যেমন,
সমাজের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সম্পর্ক যত হল, ততই
নাটকের বিষয়ে সেগুলো উঠে এল। আগেও, বিধবা বিবাহ
নিয়ে নাটকের কথা জানা গেছে। এরসঙ্গে জুড়ে গেছে নারীশিক্ষা ও সমাজ সংস্কারের আরও
বিষয়। এসব
বিষয় নিয়ে বাংলা রঙ্গমঞ্চের ইতিহাস এগিয়ে চলল। আইন ও শিল্পের সম্পর্ক
রইল অবিচ্ছিন্ন। ১৮৭৬
সালের আইনের ধারা রইল অপরিবর্তিত। কারণ, ততদিনে তো বিত্তশালীর
শখ-আমোদের বাগানবাড়ি ছেড়ে নাটকের এক নিজের জায়গা তৈরি হচ্ছে। আগের বাগানবাড়ির নাটকে
ছিল না প্রতিবাদ। কেননা, তার লক্ষ্য ছিল
বিনোদনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু, সাধারণ রঙ্গালয়
তৈরি হতেই এই উদ্দেশ্য পাল্টে গেল। কেন?
প্রথম কারণ তো, বাগানবাড়ির নাটক সবার জন্যে ছিল না। বা, কোনও পারিবারিক
ক্ষেত্রে পরিবেশিত হওয়া নাটকও সর্বশ্রেণির মানুষের জন্য ছিল না। অনেক সময়
উচ্চস্তরের নাটকগুলোও ব্যক্তিগত মালিকানার পছন্দ-রুচিতে না মিললে
তা চলত না। এবং
তার প্রবেশ সাধারণের জন্য না-থাকায়, একপেশে রুচির মধ্যেই থাকত।
এইসময়েই নাটকের চর্চা করার জন্য সাধারণ রঙ্গালয় তৈরি হল। নাটকে ইচ্ছুকদের
সংখ্যা কম ছিল না। একে
একে তৈরি হয়, থিয়েটার। বেঙ্গল থিয়েটার। ন্যাশনাল থিয়েটার। গ্রেট
ন্যাশনাল থিয়েটার,
ওরিয়েন্টাল থিয়েটার এবং আরও অনেক। এখানে শুরুর দিকের আলোচনা
হচ্ছে। তাই, প্রথম দিকের
আলোচনা হবে শুধু। সাধারণ নাট্যশালা যখন হল, তখন সময়টাও বুঝতে
হবে। ১৮৭২
সাল নাগাদ জাতীয়তা বোধ তৈরি হচ্ছিল এরকমই লেখা-টেখা আমাদের বিদ্বানদের। একটু তলিয়ে তথ্য
অনুসন্ধান করলে দেখা যাচ্ছে, দলের নাম ন্যাশনাল থিয়েটার রাখার পেছনে যুক্তি ছিল। ওই নাম দিয়ে জাতীয়তাবাদী
আন্দোলনের এক উদ্যমী নবগোপাল মিত্র, একাধিক কাজ করেছিলেন। যেমন, গ্রেট ন্যাশনাল
থিয়েটার। যেমন, ন্যাশনাল
পেপার নামের কাগজ। যেমন, ন্যাশনাল স্কুল নামের ব্যায়ামাগার। যেমন, ন্যাশনাল
সার্কাস। প্রধানত
তাঁর উদ্যোগেই ন্যাশনাল সোসাইটি বা জাতীয় সভা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর
হিন্দুমেলার আয়োজন করে জাতীয়ভাব প্রচারের কাজে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন নবগোপাল।
নবগোপাল শুধু এই থিয়েটারের নাম দেননি। এই নাট্যগোষ্ঠী কোন্ কোন্ নাটক করবেন সে
ব্যাপারেও যথেষ্ট কর্তৃত্ব স্থাপন করেছিলেন তিনি। এমনকী তাঁর হিন্দুমেলার বেশ
কয়েকটি সভাও হয়েছিল ন্যাশনাল থিয়েটারের মহলাকক্ষে। আবার ভারতমাতা নাম দিয়ে রূপক
নাটক নবগোপাল ন্যাশনাল থিয়েটারের শিল্পীদের প্রযোজনা করার অনুরোধ করেন। নবগোপাল
তাঁর ন্যাশনাল পেপারে ‘নীলদর্পণ’ নাটক অভিনয়ের প্রশংসা করেন। তিনি উক্ত নাটক 'The event is of national importance', এটাও লেখেন। বাহহ, একটা
ন্যাশনাল ব্যাপার কেমন ভালই লাগছে!
কিন্তু নাট্য নিয়ন্ত্রণ আইন? আর বাংলা নাটকের ভবিষ্যৎ? সবই যেন একতাক নাটকের প্লট। সেসময়, আপাতভাবে সুরেন্দ্র-বিনোদিনীর ওপর 'নৈতিকতা ও শালীনতা'র অভিযোগ আনা হলেও, বাস্তবে এই মামলার প্রধান উদ্দেশ্য সম্ভবত প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক। একথা অনুমান করা যায় যে, উপেন ও তাঁর সহসাথীদের রাজনৈতিক ভাবে পর্যুদস্ত করার উদ্দেশ্যেই এই মোকদ্দমা করে ইংরেজ প্রশাসন। সুবীর রায়চৌধুরী এই ঘটনার বিশ্লেষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশ করেছেন। আইন পাশ হওয়ার আগে পর্যন্ত উপেন্দ্রনাথ দাস প্রমুখ যেভাবে পুলিশের হুমকিকে অগ্রাহ্য করছিলেন, তাতে মনে হয়েছিল এই জাতীয় আইন বিধিবদ্ধ হলে তাঁরা সমবেতভাবে প্রতিরোধ করবেন।... সাধারণভাবে নাট্যশালার কর্মকর্তারা এই অবস্থাকে মেনে নিলেন। এরপরে তিনি বলেছেন, সংবাদপত্রের ওপর যেমন বিধিনিষেধ আরোপ করার জন্য যূথবদ্ধ প্রতিবাদ হয়েছিল, নাট্য জগতে আদৌও তেমন কিছু ঘটল না। একটাও নাট্যশালা বন্ধ হল না। হিন্দুমেলা বা জাতীয়মেলার অধিবেশনেও নাট্য নিয়ন্ত্রণ আইন নিয়ে কোনও প্রস্তাব গ্রহণ করা হল না।
এর কারণ,
নাট্যশালায় সাধারণের জন্য আসন থাকলেও, সাধারণ সমাজ
এর বিশেষ দরকার রয়েছে বলে মনে করত না। সাধারণ সমাজের দৃষ্টিতে
নাটকের স্থান, নাটকের পরিবেশ নিয়ে সংশয় ছিল। সেখানে, বৃহত্তর সমাজের
অংশগ্রহণ হবে, সেটা ভাবা যায় না। তাই, নাটকের জন্য
আইন রইল বলবত।
এই ঘটনাটি ছাড়া উনিশ শতকের বাংলা থিয়েটার জগতের তেমন কোনও
উল্লেখযোগ্য প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক পদক্ষেপ চোখে পড়ে না।
বাগানবাড়ির নাট্যচর্চায় তো রাষ্ট্রবিরোধী কোনও বক্তব্য প্রকাশ করেনি। এবং সেই সময়ে
রাষ্ট্র চেতনাও তেমনভাবে তখনও পর্যন্ত সংজ্ঞায়িত হয়ে ওঠেনি বলেই মনে হয়। এরপর বাংলা
নাটকের জগতের মানুষের মধ্যে কোনও সংগ্রামী চেতনার বিকাশের তেমন বিশেষ কিছু উদাহরণ
মিলবে না, যাতে বাংলা নাট্যজগত বৈপ্লবিক চরিত্র প্রতিষ্ঠা করে এবং নাট্য নিয়ন্ত্রণ
আইন হয়। নাটকের
বিষয়ে তখন দু-ধরণের প্রতিবাদ ছিল। এক, সামাজিক প্রতিবাদের
নাটক। যেখানে
নিজেদের দেশিয় সমাজের সংস্কার করা ছিল লক্ষ্য। আর দুই, রাষ্ট্র ক্ষমতার
বিরুদ্ধে হওয়া নাটক, যেখানে চরিত্রের প্রতীক ব্যবহার করা হল। পাশাপাশি আড়ালে চলে গিয়ে, ইতিহাসের চরিত্র,
পুরাণের চরিত্রের মধ্যে দিয়ে নাটকের চর্চা চলল। কিন্তু, ঘটনা ছিল এটুকুই?
১৮৭৬ সালে উপেনদের মামলার পর ৯ এপ্রিল থেকে ২০ অক্টোবর প্রায় সাতমাস গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার বন্ধ থাকে। অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়নের পর গ্রেট ন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ভুবনমোহন নিয়োগী আর থিয়েটার চালাতে পারছিলেন না। তাঁর কাছ থেকে থিয়েটারটি লিজ নিয়ে নেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ। এরপর থিয়েটার খুললে সব দায়িত্ব এসে পড়ে গিরিশ ঘোষের ওপর। কিছুদিন পরে তিনিও দায়িত্ব হস্তান্তরিত করে দেন। ক্রমাগত হস্তান্তরিত হতে থাকল থিয়েটার। অনেক হাত ঘুরে ঘুরে শেষে দায়িত্ব নেন প্রতাপচাঁদ জহুরী।
১৬ ডিসেম্বর ১৮৭৬। নাট্যাভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন বলবৎ হল। 'AN ACT
FOR THE BETTER CONTROL OF PUBLIC DRAMATIC PERFORMANCES', আইনে বলা
হল, কোনও 'প্রকাশ্য স্থানে' কোনও অভিনয়, মূকাভিনয় বা অন্য কোনও নাটক যদি কুৎসা যা
মানহানিকর হয়, সরকার বিরোধী হয় বা নীতিভ্রষ্টকারী হয় তাহলে
সরকার তা নিষিদ্ধ করতে পারবে। 'প্রকাশ্য স্থান' বলতে 'যে ভবন বা বেষ্টনীতে জনগণকে অর্থ প্রদানের
বিনিময়ে অনুষ্ঠান দেখতে দেওয়া হয়, তা এই ধারার 'প্রকাশ্য স্থান' হিসেবে গণ্য'। অর্থাৎ
টিকিটের বিনিময়ে আয়োজিত নাট্যানুষ্ঠানগুলিই এই আইনের আওতায় এল। ব্যক্তিগত পরিসরে
অভিনীত নাটকগুলো নয়। আবার আইনের নির্দিষ্ট কিছু সেকশন ৬ অনুসারে এই ধরনের অভিনয়ের
অংশগ্রহণকারী, সহায়ক, মালিক এমনকি দর্শকও এই আইন মোতাবেক দোষী
সাব্যস্ত হবেন, এরকম লেখা হল।
আইন পাস হওয়ার পর নাট্য জগতকে একেবারে কড়া আটকে বেঁধে ফেলল সরকার। ফলে নাট্য নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়নের পর থেকে ইতিমধ্যে গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারে কোন্ কোন্ নাটক চলতে থাকল সেটাও লেখার… মেঘনাদবধ, কৃষ্ণকুমারী, পলাশীর যুদ্ধ, মৃণালিনী, দোললীলা, বিষবৃক্ষ, আলিবাবা ও চল্লিশ চোর, দুর্গেশনন্দিনী, বুড়ো শালিখের ঘাড়ে রোঁ ইত্যদি সমসাময়িক রাজনীতির নিরিখে ঝুঁকিহীন বিষয় নিয়ে নাটক। হারিয়ে গেল গ্রেট ন্যাশনালের প্রত্যক্ষ বৈপ্লবিকতার সুর। সেসব নিয়ে নাট্য ইতিহাস প্রশ্ন ভোলে না। গিরিশের লেখা বিপ্লবী রসে জারিত নাটকগুলো মঞ্চস্থ হয়েছিল আরও পঁচিশ বছর পর। সিরাজদ্দৌল্লা, মীর কাশিম ও ছত্রপতি শিবাজী নিষিদ্ধ হয় বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় অর্থাৎ বিশ শতকের গোড়ার দিকে। কিন্তু উপেনের ঘটনার সময়কালে বা তারপরেও নাট্যজগতের 'ঘরের লোক' বা বাংলা নাট্যাঙ্গনের সর্বক্ষণের কর্মীরা মোটামুটি নিশ্চুপ থাকাই শ্রেয় মনে করেছেন।
পুরো ঘটনাটি সম্পর্কে উৎসাহ ছিল সকলের। তাই নিরাপদ দূরত্ব বজায়
রেখে ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর রেখেছিলেন তাঁরা। কেউ আর গভর্নমেন্ট হাউস পর্যন্ত
যাওয়ার ঝুঁকি নেননি।
১৯২১ সালে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলার নাট্যজগতের যে প্রবণতার
তীব্র সমালোচনা করেছিলেন,
সেই একই প্রবৃত্তির প্রতিফলনই যেন দেখা গেছিল এই সময়ে। 'সত্য ও মিথ্যা' প্রবন্ধে শরৎ স্পষ্ট লিখছেন,
'এই যে আজ আসমুদ্র-হিমাচল ব্যাপিয়া ভাবের বন্যা, কর্ম ও উদ্যমের স্রোত বহিতেছে, নাট্যাগারে তাহার
এতটুকু স্পন্দন, এতটুকু সাড়া নাই'।
যেহেতু তেমন কোনো নামের উল্লেখ নেই, তাই বোঝা যায় খুব
অল্প সংখ্যক নাট্যকর্মী,
বা এক-দুজনই হয়ত বা এক্ষেত্রে ভূমিকা পালনের
চেষ্টা করেছিলেন। আমাদের দেশের নিরিখে দেখা যায় আবেগধর্মী, জনদরদী,
ধর্মীয়, পৌরাণিক নাটক পর্যন্ত দর্শকের ভূমিকা রয়েছে। কিছু নাটকে ইংরেজদের
সমালোচনা করেও আবার বলা হত যে, ইংরেজের স্বেচ্ছাচারী ব্যবহারের ব্যাপারে রাণী ভিক্টোরিয়া
বা মহামান্য যুবরাজ জানতে পারণে নিশ্চয়ই এই স্বেচ্ছাচারী অত্যাচার বন্ধ হবে।
এক্ষেত্রে আরো বলার যে, 'স্মরণীয়, নীলদর্পণ
নিয়ে অত হৈ-চৈ-র পরও দীনবন্ধু মিত্র রায়বাহাদুর হয়েছিলেন'। খেয়াল করুন পাঠক… যার নাটক নিয়ে এত কাণ্ড, তিনিই খেতাব পেলেন? কিন্তু, তাহলে থিয়েটারের হলটা
কি?
এক পেশাদারী কাঠামোয় কোন্ কোন্ উপকরণের জোগান দিলে বাঙালি দর্শকের মন প্রসন্ন হবে, সেই দিকেই তাদের লক্ষ্য ছিল। আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য বা ব্যবসাটাই মূল তখন। কারণ, আমরা গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারের হাতবদলের কথা জানতেই পারলাম। ঠিক এরই আগে দশকে যখন উপেন-অমৃত- সুকুমারীদের ওই নাটক চলছিল, তাতে কোনও ভয় ছিল না? তাঁরা সাহস দেখালেন কীভাবে, সেই প্রশ্ন ওঠে। বিশেষত এই ঘটনার পর উপেন-সুকুমারী প্রমুখ, একেবারেই সহায়সম্বলহীন হয়ে পড়েন।
এখানে এই ঘটনার জের টেনে লেখা নটী বিনোদিনীর আত্মজীবনীতে। তাঁর রচনায় গ্রেট ন্যাশনাল ছেড়ে বেঙ্গল থিয়েটারে যাওয়ার কোনও কারণ দর্শানো হয়নি। তিনি লিখেছেন, 'তার পর বোধহয় পাঁচ ছয় মাস পরে গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার বন্ধ হইয়া যায়। তৎপরে আমি মাননীয় শরৎচন্দ্র ঘোষ মহাশয়ের বেঙ্গল থিয়েটারে প্রথমে ২৫ টাকা বেতনে নিযুক্ত হই’। তিনি আরও লিখেছেন, 'ঠিক মনে পরে না, কি কারণবশতঃ আমি গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার ত্যাগ করি'। বিনোদিনীর বয়স তখন কতইবা! কি করে বুঝবেন ওই বয়সে? তবে, পরে বিনোদিনীই বুঝেছিলেন, এবং তিনিই এক দ্রোহী সত্তার জন্ম দেন।
_ ইতি
একুশ শতকের ফ্ল্যাশব্যাক সত্ত্বাধিকারী…



0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন