কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / নবম সংখ্যা / ১৩৬

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / নবম সংখ্যা / ১৩৬

বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫

সুবীর ঘোষ

 

কবিতার কালিমাটি ১৫১


পরিযায়ী হাজিরা

নিঃশ্বাস পড়েনি রাতে, তবু তার কথাগুলি ওড়ে। দু’পাশের ছিটকারি ফুলে সহসা সুরের ঝর্না। গা ভাসাতে পরির পরিযায়ী হাজিরা। অসামান্য বৈভব ফোটাতে কত-না সওয়াল জবাব বয়ে গেছে প্রান্তরের মুক্তিপথ বেয়ে। কবেই বা কার চোখ আটকে গেছে স্থাপত্যের খোঁজে। অনুসন্ধানপ্রয়াসী কিছু রূপবাহী তরুণীর দল ধূসর আকাশের নীচে রাশিফল লিখে রাখে খেরোর খাতায়। বদনামে কী কীর্তন জমে! দধিমুখী দক্ষিণের দরজা ঘেঁষে আমি অসম্ভব কিছু আশা নিয়ে বসি। আকাশে নক্ষত্রজল। তিরের ফলার দ্রুতি নিয়ে নেমে আসে শিলা। ঝঞ্ঝা নেই বৃষ্টি নেই শিলা আসে আগে। বাকি সব তার পর। তুষারডিম্বের দিকে তাকিয়ে থাকে নয়াবসন্তের কিশলয়। পৃথিবী যে কত কী ঘটায়! প্রকৃতি বৃদ্ধা হলে নব নব খেলাপাতি সাজায়। রাস্তা জুড়ে পড়ে থাকে হরিণের ছুট।

 

প্রহরব্যবসা

রবিবারে সমুদ্র আসেনি নইলে তখনই গুটিয়ে দিতাম যাবতীয় প্রহরব্যবসার ছড়ানো ফাঁদ। অনাহারী  মুখগুলোকে নিরাসক্ত রেখে কোনও ছবিতেই করা সম্ভব ছিল না ওয়াশের কাজ। মাস্তুলে পাখিটির নিরাপত্তা সহজ নয় বুঝে গেছিল জাহাজের ধোঁয়া। তবু বিনা পাসপোর্টে দেশ থেকে দেশান্তরে যাবার সু্যোগ ছাড়িনি। শঠতা নয় শুধু ওই পাখির ছদ্মবেশটুকু ছাড়া। এজমালি কুয়োতলায় বসে গাঁওবুড়োর চোখ কুয়োর গভীর থেকে গভীরতরতে নেমে যাওয়ার দিকে। বিগত প্রজন্মের কারোর এক হারিয়ে যাওয়া ঘটি ওঠে সেই কালের সঞ্চয় থেকে। সমতলে এসেও তার ধাতব কন্ঠস্বরে কোনও ছেদ পড়েনি। ঘটিটা গড়িয়ে যেতেই ফোকলা দাঁতের হাসিতে এসে দাঁড়ালেন ইন্দির ঠাকরুন। পথের গল্প এগিয়ে চলে। পা যত দিকবদল করে চিত্রনাট্য তত বদলে বদলে যায়।

 

বপনবুনোটহীন

মেঘশালী ছায়ায় বসে নিজেকে সতত খালি করি। সে-ছায়ার কাছে ক্লান্ত কালো চোখ ভাসে মরুতীর্থপথিকের একা। দুঃখ থাকে মজে যাওয়া খনির ভেতর। সদ্ভাবচুম্বন পেশাদারি আদানপ্রদান মাঝখানে অনতিদীর্ঘস্বর। নীল দুঃখে গন্ধের বিবাহমাত্রাযোগ। দায়বদ্ধ সংঘাতের দিকে হাঁটি, হাতে থাকে রক্তফুল। আনতবিস্তারী মেঘ ফিরে যায় জলশূন্য একা। মাথা আর ধরে রাখতে পারে না দুঃখবোধ যৌননীরবতা। চেনাপথ নাগরিক চটকের মুখে গুহামুখে ঝোলে। বালকের ধৃষ্টতায় চুপি চুপি চাঁদও সরে যায়। আমার খামার জুড়ে ধানের বদলে জমে পাথরসম্ভার। মৃত পাখিদের গন্ধ বাইরে এসে আমাকে সবার কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত করে তোলে। কাশের বন ভেদ করে বেরিয়ে আসে একরাশ বায়ুদূষণের ধোঁয়া। থেমে যাওয়া ঢেউয়ের মাথায় উঠে ফকিরের কেরামতি বাড়ে।

আমার মৃত্যু হয় পৃথিবীর বেপরোয়া বিষাক্ত কৌতুকে।                                                    

তবু যেন কিছু থাকে, থেকে যায় কিছুটা নিঃশ্বাস,গতি। মানুষের সম্রাটের পাশাপাশি চিরায়ত সবুজের স্বয়ম্বরসভা। যারা কথা বলে পুজোর আমেজে ভেজা প্রতিমার মতো তারা কিছু উদ্বৃত্ত যুক্তি নিয়ে বপনবুনোটহীন সময়কে মাপে।

 

ঈশ্বরের নিঃশ্বাস

অভাবের ময়লাহাতে ঈশ্বরের নিঃশ্বাস। দূরে ধঞ্চেবনে আগুনের মহড়া। নিজেকে নিজের কাছে সম্পূর্ণ পরিচিত করে নেবার সুযোগ বেখেয়ালে হাতছাড়া। অথচ চরিত্রে কোনও কালোবৃত্ত নেই। মহোৎসবে যজ্ঞভার সামলানোর অভিজ্ঞতাও হয়ে গেছে বহুবার। তারপরেও কোনও এক অকুতোভয় কঞ্জুষের হাড়মাসের ভেতর বাঁশি হয়ে বাজার অভিলাষে বলরামের চেলা হবার যে শখ তার কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারিনি মহামান্য ওয়াদালতের কাছে। যে মানুষ না-চেনার ভান করে --- তাকিয়ে দেখ তার আশে বা পাশে নিশ্চয় কোনও প্রেমিকা নিষিদ্ধ না সুসিদ্ধ তা জানার সফটওয়্যার নেই। তবে রাতপূরণের পরিকল্পনায় কীভাবে পরির কল্পনা সাজিয়ে নিতে হয় তা জানার জন্যে হস্তশিল্প দরকার দিনফুরনের আগেই। নইলে অযথা ভিড়ে মামুলি রেশনটুকু বন্ধ হয়ে ধুন্দুমার। তাই ঈশ্বরের নিঃশ্বাসই  শেষ ভরসা।

 

প্রত্যাশা--- বিগতবিলম্বে

নামগন্ধহীন চুলে সম্পর্ক বাসা বাঁধে পাখির ডিমের খোঁজে একতরফা হা-হুতাশ সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করে বিগতবিলম্বে চলি অরবিটগাজর ছেড়ে দূরবীনের প্রত্যাশায়। মাঝখানে ক্যালেন্ডারের গা ঘেঁষে ঘেঁষে চলছে নদী। অপরূপ জীবনযাত্রার বিবেক গান গাইছে শিস দিতে দিতে; শুকিয়ে যাচ্ছে গামছার জল, দূরের দিগন্তের রস। পূর্ণমাত্রায় তোমাকে পাবো বলে দাঁড়িপাল্লা কিনিনি কোনওদিন। মাঝখানে এসে বসে কথা বলে গেল মুশকিল আসানের প্রদীপের চারপাশে উড়তে থাকা হাউয়ের পাখি। সর্বনাশ সমূহ জেনেও আত্মসমর্পণ করেনি হঠযোগী ভুয়ো ম্যাজিক বানানোর বিনিয়োগকারী। গায়ে গায়ে লেপ্টে আছে ভাষা ও হাসির যন্ত্র;  নির্মীয়মাণ পরির রাজ্যে স্বয়ংবরসভা।

 

 

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন