| কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৪১ |
পোড়ামাটির বেহালা
আমার নিজের বলতে এ-সংসারে আর তেমন
কেউ নেই। একে একে সবাই চলে গেছে। বাবা, মা, পিসি পর্যন্ত। থাকার মধ্যে আছে একমাত্র
ছোটকাকা। বাবার আপন মামাতো ভাই। আমার খুব প্রিয়। সে তো যাযাবর! দেশ দেশান্তরে ঘুরে
ঘুরে বেড়ায়। বছরে একবার, দুবার বাড়িতে আসে। দুএকদিন থেকে আবার পালায়।
তার তো কোনো চাহিদা নেই। একটা জামা-প্যান্ট, সোয়েটার, টুপি, মাফলার আর অজন্তার হাওয়াই চপ্পল পেলেই সে খুশিতে ডগমগ করে। সত্তর ছুঁইছুঁই এহেন ছোটকাকা প্রায় দু’বছর বাদে এলো আমাদের বাড়িতে। অসুস্থ শরীর নিয়ে। এসেই বলল, আর বোধহয় বাঁচব না রে!
আমি তাড়াতাড়ি তাকে ধরে বসাই।
গায়ে হাত দিয়ে দেখি, গা পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে। একগ্লাস জল এগিয়ে দিয়ে বললাম, জলটা
খেয়ে নাও। তারপর বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম করো। আমি ডাক্তার ডাকছি বাড়িতে। ছোটকাকা
কিছুতেই ডাক্তার ডাকার পক্ষে নয়। তার কথা, সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই কাছে থাকলেই আমার
সব রোগ সেরে যাবে। ঠিক আছে, তুমি এই প্যারাসিটামল ট্যাবলেটটা খেয়ে নাও তো লক্ষ্মীছেলের
মতো, জ্বর সেরে যাবে! এবার আর তোমাকে যেতে দেব না। ছোটকাকা শুয়ে শুয়েই একচোট হেসে
নিল।
ইতিমধ্যে কেটে গেছে দুই দুটো মাস। ছোটকাকার বিছানা থেকে ওঠার ক্ষমতা নেই। ক্ষীণ কন্ঠে ছোটকাকা কাছে ডেকে বলল, আমার একটা আবদার রাখবি? আমি বললাম, কী বলো? অবশ্যই রাখব। ছোটকাকা বলল, একটা পোড়ামাটির বেহালা এনে দিবি? বললাম, তুমি বেহালা দিয়ে কী করবে? ছোটকাকা আমার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল, একসময় তো বাজাতাম! ও তুই বুঝবি না! এনে দিবি তো?
প্রায় দুই মাসাধিক কাল শয্যাশায়ী, বিছানা থেকে ওঠার ক্ষমতাশূন্য একটা আবদারের দিকে আমি এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি। বাইরে দাঁড় করানো অ্যাম্বুলেন্সের হর্ণের আওয়াজ ভেসে আসছে...
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন