কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / নবম সংখ্যা / ১৩৬

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / নবম সংখ্যা / ১৩৬

বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫

জয়িতা ভট্টাচার্য

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৪১

ডোম

 

শুধু দু তিনটে বিড়ির আগুন দূরে দূরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আর কিছু নেই। অতল অনির্বাণ অন্ধকার শুধু। এত অন্ধকার যে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে মলয়ের। এত মরা পুড়িয়েছে বিগত পনের বছর ধরে, এমন অদ্ভুত আঁধার দ্যাখেনি সে।

বাপ সনাতন দুম করে মরে না গেলে তাকে জবরদস্তি সরকারি ডোমের চাকরিটা নিতে হতো না। কলেজে পড়ে অফিসে চাকরি করবে কোট-টাই পরে এমন স্বপ্ন দেখত। মল্লিকা তার কলেজ বান্ধবীর চেয়েও একটু বেশি ছিল বৈকি। কিন্তু ডোমকে আর কে বিয়ে করতে চায়? কলকাতার কলেজে পিসির দেওরের বাড়ি থাকতে কস্মিনকালেও বাপের পরিচয় দেয়নি। তবু ভেস্তে গেল সব। আজ এই অন্ধকারে দাঁড়িয়ে মলয় ভাবল একবার মন্দিরার কথা। স্লিপ এই নামেই কাটা হয়েছিল। মন্দিরা মণ্ডল বাপ মৃত হরেন মণ্ডল। সাকিন বদনপুরা মগরাহাট। চারপাঁচদিন ধরে ইলেক্ট্রিক চুল্লী খারাপ। একটা প্যাঁচা ডেকে উঠল বিকট স্বরে। বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। মল্লিকা এখন কত দূরে। বর বাচ্চা চাকরি নিয়ে ব্যস্ত। ফেসবুকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। আজ যে বডিটা এসেছে এবং এখনও যার আগুন নেভেনি, সে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে, প্রেমিকের জন্য এমন লেখা হয়েছে। ঘাড়ের কাছে খসখস করে আওয়াজ হলো। চোখ সয়ে এলে  বোঝা যায় ল্যাংড়া কুকুরটা শোবার তোড়জোড় করছে। মাথা চুলকোয় মলয়। আসলে ওরও কিছু করার ছিলো না। মন্দিরার আঠারো হতেই টাকাটা ব্যাঙ্কে ওর জমা পড়ল কন্যাশ্রীর ২৫০০০। মন্দিরা। তার বোন। মলয়ের পেছনে লোক লেগেছিল। অনেক ধার। অন্তত এই পঁচিশহাজার তাকে বাঁচাবে। তবুও ভেবেছে অনেক। মন্দিরাকে দিয়ে টাকা তুলিয়েছে। কিন্তু টাকা মন্দিরা কিছুতেই দেবে না বলে জেদ ধরল। এই টাকা সরকার তাকে দিয়েছে পড়াশোনা করতে। বোনটা মায়ের মত জেদি। বড় দিদিমণি মীরা ম্যাডামকে বলে দেবে বলে  দরজা খুলে বেরিয়ে যাচ্ছিল। তর্কাতর্কি কার না হয়! বড়দাদা ছোটো বোনকে শাসন করতেই পারে। করছিল। কিন্তু  মন্দিরা নড়াচড়া করেনি আর। মরে গেছে আচমকা মাথায় খাটের কোণাটা লেগে। বোন হয়ে দাদার দেনা শোধ হবে বুঝলোই না। তারপর ঝুলিয়ে দিয়েছে পাখা থেকে। কন্যাশ্রীর টাকাটা ওর খুব দরকার ছিল। মলয় অভ্যস্ত হাতে খুঁচিয়ে দিচ্ছে নিভু নিভু আঁচ।

 

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন