| কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৪১ |
নরকের পাঁচমাথা
--লোকটা কার সঙ্গে কথা বলছে?
--কেন?
--লিফ্টে আর কাউকে দেখলাম না।
--হয়ত কানে এয়ারপড বা ইয়ারফোন রয়েছে!
আজকাল তো সবাই নিজের সঙ্গে কথা বলে, অন্তত দেখে তাই মনে হয়।
--যা দেখলাম, কানে কিছু ছিল না।
--হয়ত আপন মনে বিড়বিড় করছে!
--হ্যাঁ, তবে আপন মনে বিড়বিড় করা
ব্যাপারটা সেকেলে হয়ে গেছে।
--তা অবশ্য ঠিক। আমরা মনে করতে
পারি, আপন মনে কথা বলছে, কিন্তু আসলে দৃশ্যভ্রম। সবাইকে দেখে মনে হয় নিজের সঙ্গে কথা
বলছে অথচ কেউই নিজের সঙ্গে কথা বলে না।
--হয় যন্ত্রের সঙ্গে, না হলে অন্য
কারুর সঙ্গে, যে নিজেই যন্ত্রস্থ হয়ে গেছে নিজের অজান্তে।
--আচ্ছা লোকটা তো লিফ্টের ভয়েসের
সঙ্গেও কথা বলতে পারে?
--মানে?
--লিফ্টের ভয়েসঃ 'গোয়িং আপ', 'গোয়িং
ডাউন' ইত্যাদি, প্রভৃতি যা শোনা যায় লিফ্টে উঠলে।
--হ্যাঁ কিন্তু তার সঙ্গে কী কথা
বলবে? কতক্ষণই বা বলবে?
--বিশেষ কিছু হয়ত বলার স্কোপ নেই,
কিন্তু কে জানে, লোকটা হয়ত মানুষদের সঙ্গে কথা বলতে চায় না!
--চায় না! কেন?
--হয়ত মানুষকে ওর আর কিছু বলার
নেই!
--তা হলে তো অন্যান্য প্রাণীদের
সঙ্গে কথা বলতে পারে! কুকুরবিড়ালের কি আর অভাব পড়িয়াছে? নেহাৎ গরু-ছাগল!
--হয়ত লোকটা ঐ মেকানিক্যাল ভয়েস
প্রেফার করে, যার মধ্যে মানুষ মানুষ ইলিউশন আছে!
--লিফ্টের ভয়েস কি আদৌ কোন মানুষ
রেকর্ড করে? নাকি যন্ত্রের আওয়াজ?
--গুড কোয়েশ্চেন! সঠিক জানা নেই,
তবে মানুষ রেকর্ড না করলেও মানুষ মানুষ মনে হয়! হয়ত সেটাই যথেষ্ট!
--হুম, লোকটা হয়ত ইলিউশনেই খুশি!
--আরেকবার লিফ্টে করে ওপরে গিয়ে
দেখলে হয় না, লোকটা কোথায় গেল? কে জানে, হয়ত লিফ্টে ওঠানামা করেই চলেছে আর বকবক জারি
আছে!
--না, তার দরকার নেই।
--কেন? রহস্যের সমাধান হবে, প্রশ্নের
উত্তর মিলবে। তুমি কি সেটা চাও না?
--উত্তরের কি দরকার! প্রশ্ন করতে
পারাটাই অনেক। এই যেমন আমরা করলাম। আশেপাশে যা ঘটছে তা নিয়ে ঔৎসুক্য হারিয়ে ফেললে বেঁচে
থাকার আর মানে থাকে না।
--তাহলে চলো গিয়ে দেখে আসি!
--আবার যা কিছু নিয়ে ঔৎসুক্য তৈরি
হচ্ছে তার সবটা জেনে ফেললেও বেঁচে থাকার মানে থাকে না।
--উফ, এই জন্যে তোমার দ্বারা উপন্যাস
লেখা হল না!
--আমি নিজেই এক দেড়-আঙুলে, গল্প-উপন্যাস
কীকরে লিখবো?
--কে যেন বলেছিল, সব লিফ্ট শেষপর্যন্ত
নরকের পাঁচমাথায় গিয়ে পৌঁছয়।
--নরকের পাঁচমাথা কেন? এ কি পঞ্চায়েত
নাকি? তিন কিম্বা চারমাথা কী দোষ করলো?
--সে না হয় আরেকদিন বলবো, আরেকখান
দেড়-আঙুলে গল্পে। ততদিন এই প্রশ্নটাই থাক: লোকটা কার সঙ্গে কথা বলছিল?
--থাক ঔৎসুক্য।
--থাক কল্পনা।
চমৎকার। ডায়ালগের ফরম্যাটটাই যেন লিফটের মতো ওঠানামা করছে।
উত্তরমুছুনখুব সুন্দর লেখা। ভাল লাগল।
উত্তরমুছুন