![]() |
| কবিতার কালিমাটি ১৫১ |
অসুরভিত কিছু টিপস
(১)
পালিশ করতে করতে সকালকে টেনে নামানো হচ্ছে আঙিনায়। যদ্দূর মেঘের নেলপলিশ। বহুল-চর্চিত সেই আমবাগান। তার বুকেও আজ রোদের পরম। তৃষ্ণা সাজানো থরে থরে। চেতনার প্রভু বলেই হয়তো এই গাবগাছ আজও মুখস্থ করছে পাখির পালক। শান্ত ছায়াঘন বন্যার ঢেউ ডাক্তারের বুকে লাগে। আঠারো মিনিট বড়োই আঠালো। প্রলেপের কামনায় আবার উনুন সাজবে
(২)
কাঠের অংশটুকু সরিয়ে দিচ্ছে বাদাম। কিছু অয়েলপ্যাস্টেল মুখরোচকভাবে বলার কৌশল। নাচের আসরে অচেনা পাখির ঝুমুর। কিছু গাঁদাফুল একেবারে হতচকিত ফিরবে অজানায়। পোস্টারের বাইরে একটি কুয়াশাজড়ানো খামার। লেবুফুলে পালিশ করছে সবুজ। অল্প হলুদের মিশ্রণ। ছবির পরিসর আরও আরও প্রশস্ত করে তুলবে। হয়তো কাঠগোলার ফুল নিয়ে একদিন অপেক্ষা করবে গোপালঠাকুর। হয়তো বাদামেরই ভিতর জমে উঠবে সেই কাঠেরই পরিকল্পনা
(৩)
রেলগাড়ির বিলম্ব স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিচ্ছিল সময়। হাতের বাইরে ওদের ওড়াউড়ির আকাশ। রংকরা একেবারেই নিজস্বতা। ঘরানার বাইরে বেরিয়ে। নালা-কেটে নদী থেকে অনেক দূরে বাঁচার অছিলায়। আয়নার সজীব চোখ চুরচুর ছড়ানো। হয়তো বাতাসও বাউল হবে একতারায় নেমে। হয়তো সেই সুর খুঁড়েই মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসবে ঘাস। হয়তো বাতাস এমনভাবেই অভিনয়ে পটু হবে একদিন
(৪)
হয়তো পাখির ভিতরের অন্ধকার তাড়িয়ে দিচ্ছিল কাঠবিড়ালি। খোসা উড়িয়ে বেছে দিচ্ছিল বাদাম। আর পরম আনন্দযোগে বাচ্চা-ছেলেটির লালসার সনাক্তকরণ। বয়স ফুরফুরে কাচের। মন পালতোলা নৌকোয়। হাঁটুজলের কাছে নতজানু একবুক পাথর। ধ্যানমগ্ন বুদ্ধে প্রবাহিত হতে হতে হয়তো বাসা বানাবেই
(৫)
এইসব পিতল কিংবা লৌহসামগ্রী আলতোভাবে জোনাকির আলোয়। গণিত হাজির। কিছু ভক্তের শূল-চোখ। কিছু ফিকে রং জলের অভিযোজন। অন্যমনস্ক কথার ডানায় রূপান্তরিত প্রাণের প্রাচুর্যময়তা। আবহমান সেই কালী-সাধনায় ডুবতে ডুবতে থৈ-হারা অথৈ সেই অ-তল। নিরাকার ব্রহ্মে ছাত-খোলা অন্য এক মিথের রং। মৃত্যুকেও দশনাম্বার দিতেই জানে। আবার সেই জীবনই হয়তো মৃত্যুকে ছাপিয়ে নদীকে সহযোগিতা করবে নিজের ভাষায়
(৬)
ব্যবহারে অতিথি পরায়ণ হতে শিখছে কলম। তোমাকে দেখেই বড়ো হচ্ছে তার এই মনস্কাম। নিষ্ঠুর-রোদের ফাঁকে পাতারাও খেলতে শিখবে। খেলতে খেলতে কখন যে ঝুঁকে পড়বে ক্যামেরায়। একটা নৈর্ব্যক্তিক রূপ থেকে পরিসর উলটে ব্যক্ত সঙ্গমে। চড়াই থেকে একেবারে নেমে পথচারীর অভিনয়। সহজ-সরলভাবেই রংগুলো মেনে নিচ্ছিল শিল্পীর সেই কামনা। হয়তো রঙের ভেতর স্বাধীনতার সেই পরখ আমাদের বোঝাপড়ার বাইরেই অপেক্ষা করবে
(৭)
হাড়কেও বাঁশি বানিয়ে বাজাচ্ছে বাতাস। বাতাসের সেই বাঁশিই হয়তো তীব্র করবে কবরকে। কাঁচামাংসের ভিতর কাঁচা হাড়েরই সেই ছায়া সন্ত্রস্ত করবে বারবার। কিছু অভিনয় এভাবেই খসে পড়বে। হাড়ের বৈষ্ণব থেকে অবশিষ্ট তুলির অ-বৈষ্ণবে। ক্ষয়ে যাওয়া হাড়ের জীবাশ্ম শুয়োরের আমিকেই তাজা করে তুলবে কবরে
(৮)
মৃত্যুর ভিতর সেঁধিয়ে যাচ্ছে জীবন। খসড়ার তেলঘাম মাঝির মাস্তুলে আঁকা। শুকনো তালপাতা। খরখরে বাতাসকে বাজায়। মৃত্যুও কি জীবনের ভিতর সেঁধিয়ে যাবেই। সূক্ষ্ম আমির ভিতর সেই সংশয়। আলো দিতে দিতে মোমও কি পুড়িয়ে ফেলবে জীবন। যে জীবন সেই-ই মৃত্যুর মুখোশ-ঢাকা। মিথ্যে তুষের ভিতর গনগনে অঙ্গার। ঘুমের ভানে চিতা সেজে
(৯)
আঠারো মিনিটের অভিনয়। সেই মিনিট-আঠারোকেই বাঁচিয়ে রেখেছে। জ্যোতির্ময়ই জোনাকির আলো দিয়ে তোমাকেই জাগিয়ে তুলেছে। আর জ্যোতির্ময়ই হয়তো আজ ঈশ্বরের সেই উপহার। যে তোমার স্বরূপের ভিতর আলোকেও বুনে দিচ্ছে গোপনভাবে। সেই অভিনয়ের ভিতরেই হয়তো বেঁচে আছে পুরনো সেই আঠারো মিনিটের গড়পড়তা ইতিহাস

0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন