কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / নবম সংখ্যা / ১৩৬

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / নবম সংখ্যা / ১৩৬

বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫

তথাগত চট্টোপাধ্যায়

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৪১


ভৌতিক

 

নবপল্লির বাড়িটা একবার দেখেই পছন্দ হয়ে গেছিল সোমনাথের। অফিস থেকে নামমাত্র হাঁটাপথ। সামনে একফালি বারান্দা। আশেপাশের পরিবেশ বেশ নিরিবিলি।

নতুন চাকরি পেয়ে সোমনাথ প্রথমে একটি মেসে উঠেছিল। ভাল লাগেনি। বাড়িভাড়া তার আয়ত্তের মধ্যে হওয়ায় থিতু হয়েছিল নবপল্লিতেই।

বাড়িটায় উঠে আসার দিন সাতেক পর অফিস থেকে ফিরে বারান্দায় একটা সাদাখাম পড়ে থাকতে দেখে অবাক হয় সোমনাথ। নাম, ঠিকানা কিচ্ছু নেই। কে দিয়ে গেল?

খামটা খুলে সে দ্যাখে ভেতরে একটা সাদা কাগজে অচেনা হাতের লেখা, “তুমি একা নও।“

ঘাবড়ে গেলেও প্রথমদিন ব্যাপারটা হালকাভাবেই নিয়েছিল সে। ভেবেছিল, এ নিশ্চয়ই কারও তামাশা। মজা করবার জন্যই বোধহয়… আর কিই বা হতে পারে?

ব্যাচেলর সোমনাথ বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হোটেলে দুবেলা খাবার বন্দোবস্ত করেছে। তার লেখালিখির অভ্যেস। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটা লিটিল ম্যাগাজিনে তার লেখা ছোটগল্প ছাপা হয়েছে। কিন্তু সোমনাথের স্বপ্ন আরও বৃহত্তর ক্যানভাসে লেখার। মেসের হট্টমেলা আর আড্ডার ভিড়ে কলম ধরার মত একাগ্রতা আসছিল না।

সেই হোটেলে খেতে গিয়েই কথাটা শুনল সে। বিল মেটাতে ক্যাশ কাউন্টারে এসে দাঁড়াতেই ক্যাশিয়ার নিচু স্বরে বলল, “বেশিদিন থেকো না ওই বাড়িটায়, ভাল নয়!”

লম্বা সময় ধরে হোটেলে খাওয়ার দরুন ক্যাশিয়ার নকুলবাবুর সঙ্গে সোমনাথের একটা আলগা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। বাসা বদলানোর কথাটা নকুলবাবুর অজানা ছিল না।

কথাটা শুনে সোমনাথ হেসে নকুলবাবুর দিকে তাকিয়েছিল। কিন্তু তিনি আর কিছু না বলে আবার নিজের কাজে ডুবে গেছিলেন।

ক্যাশিয়ারের সতর্কবাণী সোমনাথ আমল দিতে চায়নি। ভেবেছিল গুজব। এখনও পর্যন্ত তো বাড়িটায় খারাপ কোনও অভিজ্ঞতা তার হয়নি!

কয়েকদিন পর অফিস থেকে ফিরে সে আবার একটা সাদাখাম পড়ে থাকতে দেখল। প্রথম খাম পাওয়ার দিন সাতেক পর। একই রকম সাদাখাম। ভেতরে সাদা কাগজে লেখা, “তুমি একা নও।“

পরদিন একইরকম খাম এবং তার পরদিন আবার। ঘটনাটা চলতেই লাগল। এবার অবিচ্ছিন্নভাবে।

সোমনাথ ভাবল, পাড়ার কোনও লোক কি তাকে কিছু বলতে চাইছে… তাহলে সরাসরি কিছু বলছে না কেন? বাড়িওয়ালাকে কিছু বলবে… নাকি আরও কিছুদিন দেখবে?

অজস্র প্রশ্ন তার মাথায় ঘুরপাক খায়। এই অচেনা শহরের নিস্তব্ধ রাতে লেখার খাতার ওপর তার কলম আচমকা স্থবির হয়ে যায়। চৌকির পাশে জানালা দিয়ে কখনও কখনও ঘরের ভেতর ঝাঁপিয়ে পড়া দমকা হাওয়া কী যেন এক রহস্যের কথা বলতে চায়। সোমনাথ স্থির হয়ে বসে থাকে। লেখা আসে না।

সপ্তম খামটা হাতে পেয়ে প্রচণ্ড রাগে এক ঝটকায় ছিঁড়ে ফেলল সোমনাথ। তখনই হঠাৎ খেয়াল করল সে, ভেতরের অচেনা হাতের লেখা এবারে আর সাদা কাগজে নয়, তার নিজের লেখার ডাইরির পাতা ছিঁড়ে নিয়ে লেখা। পড়ে স্তম্ভিত হয়ে যায় সে, “আমি তো বলেছি তুমি একা নও। আমি তোমার ঘরেই আছি, পাশেই আছি”।

বারান্দায় একটা দমকা হাওয়া বয়ে যেতেই সোমনাথের মনে পড়ে নকুলবাবুর সতর্কবাণী, “ভাল নয়, ভাল নয়!”

 

 

 

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন