কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / নবম সংখ্যা / ১৩৬

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / নবম সংখ্যা / ১৩৬

বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫

শাহনাজ নাসরীন

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৪১


স্বপ্ন

 

প্রতিদিন ব্যালকনিতে কয়েকদফায় কিছু পাখি আসে। আমি দানা ছড়িয়ে দিতে গেলেই উড়ে যায়। তাই এখন  আর কাছে যাই না, পর্দার আড়ালে বসে চোখ মেলে রাখি। একটি বুলবুলি কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করে চলে  যেতেই একটি শালিক এলো। আমি চোখ ঘুরিয়ে এদিক-ওদিক তাকাই আরেকটির খোঁজে, কিন্তু পাই না। ভাগ্যিস মা নেই কাছেপিঠে! থাকলে হাহাকার করে উঠত। এক শালিকে দু:খ কীনা! মা খুব সুখী মানুষ।  অল্পতেই কেঁদে ভাসাতে পারে, এক শালিক দেখে হাহাকার করতে পারে।

ভাবতে ভাবতে একজোড়া চড়ুই এলো। এরা দম্পতি। ছেলেচড়ুই আর মেয়েচড়ুই আমি আলাদা করতে পারি। কিন্তু লেবুর পাতায় সংসার পেতেছে যে টুনটুনি দম্পতি, তাদেরকে প্রায়ই গুলিয়ে ফেলি। কী সুন্দর করে পাতাটাকে ঠোঙার মতো বানিয়ে ভেতরে বসে আছে একজন!  তার গলা পর্যন্ত ডুবে আছে। এতো বুদ্ধি করে ঘর বেঁধেছে, চোখে প্রায় পড়েই না!

চড়ুই দম্পতি উড়ে চলে গেলো। আবার এলো আরেক জোড়া। তারাই বেশি আসে। বেশি আসে, নাকি এক জোড়াই ঘুরেফিরে আসে বুঝতে পারি না। ওদের আলাদা করে চেনার কোন পদ্ধতি আছে কিনা জানি না। হঠাৎ দেখি ছেলেপাখিটা কাপড় ঝোলানোর দড়িটা ঠোকড়াচ্ছে। আর দেখতে দেখতে খানিকটা আঁশ ঠোঁটে তুলে নিয়েছে। আমি অবাক চেয়ে আছি, খড়কুটো না খুঁজে সে এখান থেকে বাড়ি তৈরির মালমশলা জোগাড় করছে কেন? শহরে কি ঘাস লতা পাতা নাই হয়ে গেছে!

এমন সময় কমল আসে। আমি পাখিটার কাণ্ড দেখাই তাকে। ও বিশেষ গুরুত্ব দেয় না। বলে, লিখেছ? আমি চুপ করে থাকি। ও আবার জিজ্ঞেস করে, বসেছিলে? আমি মাথা নাড়লে ও বিষণ্ণমুখে বলে, আর কতো?

তারপর বলে বসতে তো হবে। নইলে আর লিখতেই পারবে না।

আমি মনে মনে লি, কেন আমাকে লিখতে বলো এতো, আমি কী লিখতে পারি? ছাইপাশ যা লিখেছি এতো কাল কেউ তো পড়েনি! তোমার কী দায়! তুমি কেন পিছে লেগে আছো কমল?

আমাকে চুপ দেখে কমল আবার বলে, এড়িয়ে যেও না। একটা জীবনে কতো কী ঘটে, সেটাই তো সব নয়, সুখ দু:খ সাফল্য ব্যর্থতা সব মিলিয়েই তো জীবনকে যাপন করতে হয়। তুমি না লেখক, তোমাকে এসব বলতে হবে কেন?

আমি উত্তর দিই না। কমলকে যথেষ্ট কষ্ট এক জীবনে দেয়া হয়েছে। আর দেবো না। যদিও এ প্রতিজ্ঞা প্রতিনিয়তই করি, কিন্তু প্রতিদিন ওকে কষ্ট পেতেই হচ্ছে আমার কারণেই।

হায় কমল, রাবণের নিবিড় প্রেম ফেলে রেখে আমি ছুটেছি রামের পিছে, আর রূপবান রাম নিরাবেগ প্রশ্ন করে গেছে! নিষ্ঠুর হেসে জর্জরিত করেছে কঠিন পরীক্ষায়। আমি বারংবার ফেল করেও নির্লজ্জের মতো স্বপ্ন দেখছি, একদিন রামের প্রেয়সী হবো।

হঠাৎ অনেক দূর থেকে যেন কমলের উদ্বিগ্ন কণ্ঠ ভেসে আসে, কী হলো?

আমি চমকে তাকাই।

ও বলে, উত্তর দিলে না? শুনেছ আমার কথা?

কী বলবো, আমি আসলে কিছুই শুনতে পাইনি!


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন