কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / নবম সংখ্যা / ১৩৬

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / নবম সংখ্যা / ১৩৬

বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫

কানাইলাল জানা

 

কবিতার কালিমাটি ১৫১


সময়ের স্রোত

কেউ কি দেখেছে গোল গোল চোখে আনাজের খোসা কিভাবে তাকিয়ে থাকে কুটুনির দিকে? কেউ কি ভেবেছে বন্ধ চোখের মণিও রচনা করে একসঙ্গে কতগুলো স্বপ্ন! কেউ কি এড়াতে  পারে আধফোটা কুসুমের হাতছানি বা ছায়া শরীরের গুহা জীবন ? কে-ই বা জানে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে পায়ে দলা ঘাসই একনাগাড়ে শুনতে থাকে খোলা আকাশের কন্ঠস্বর। কে যেন বলেছিল শূন্যের আড়ত থেকেই নদী পায় যৌবন এবং চোরা স্রোত পাঠায় বাঘের ডাক। কে ভেবেছিল অরণ্যরাত্রি থেকে নামা নির্জনতাই হতে পারে চুক্তিশিবিরের জলসত্র...

কখনো জেনেছ কি পথের বাঁকে বাঁকে জমা থাকে পিপীলিকার পান্ডুলিপি। ঘুমন্ত শ্বেতপাথর বাজায় অলস ঘুঙুর। স্বেচ্ছা নির্বাসন বিলোয় মরুজ্যোৎস্না, নাগকেশরকে বিশল্যকরণী জোগায় মন্ত্রমুগ্ধ জাদুদন্ড। বাঁশির সুরে নামে বৃষ্টি, স্পর্শের ছোঁয়া স্বীকার করে হরিদ্রাবর্ণের গুঞ্জন।  এতোগুলো উন্মোচনের পর নিঃসঙ্গ জারুল-ই এনে দেয় শীতের কম্বল...

 

সম্ভাবনার সাত সতের

সকালের প্রশ্ন রাতের স্বপ্নকে বড় করে আসলে তার খিদে বাড়িয়ে দেয়। সকালের ছায়াকে ডিঙিয়ে বিকেলের ছায়া ছুঁতে চায় অতীতের স্বর্ণশিখর। শুয়ে পড়া ধানগাছের ওপর শূন্যের খেলাকে ধমক দিয়ে প্রাকৃতজন বলে 'তোমার দেহে যদি সামান্য মায়া দয়া থাকত'! গল্প বুনতে বুনতে রহস্য ঘন হয় উদ্বাস্তু শিবিরে। নতুন বউ-র সংসারে খিদে ঘুরঘুর করে মেঘমল্লার সেজে। যে জীবন উদাসী মনের খোঁজ রাখে না সে আজ বাউল  হয়ে ঘুরে বেড়ায় সাগরপাড়ে...

খুব ইচ্ছে অন্ধকারে ঢিল ছুড়ে গুঁড়িয়ে দিই মৃত্যুর ভুবন। ভালবাসা বিলিয়ে-ই যে কেউ একদিন পেতে পারে  বোধিবৃক্ষের তলায় সুজাতার পায়েস। ঘুঙুরের শব্দে ভেঙে যাবে শীতঘুম যেদিন বৃষ্টির শুশ্রূষা পাবে গভীর প্রত্যাশা। সুগন্ধে ছাওয়া হবে খড়ের চাল। লোকালয়ে যা হওয়ার হোক্ খুশির দেশ জেগে থাক্ খোঁপার বাঁধনে। শুধু আলাপ দিয়ে গড়া হোক্ মোরাম রাস্তা যার ওপর হেঁটে যাবে কেবল হলদে দাঁতের মাধুকরী  জীবন

 

একটি কলম যা চায় 

মা-কে লেখা চিঠি দুঃখে খুব ভারী হয়ে গেল বলে কলম নিজেই মুছে দেয় তার বেশ কিছুটা। বরং আমার কলম চায় সব বৃষ্টি উড়ে যাক্ চড়ুই হয়ে।  সব রোদ ঝরে পড়ুক সুখ হয়ে। সমস্ত অভিশাপ বন্য শূকর হয়ে ঢুকে পড়ুক ঘন অরণ্যে। সমস্ত দুঃখ কষ্ট আল্পনা হয়ে ফুটে থাকুক সামনের উঠোনে। ম্যাজেন্টা রঙের দুপুরগুলো ঠায় বসে থাক্ বৈঠকখানায়। অন্তত দুটো ফিঙে তিনটে শালিক যেন যোগ দেয় যে কোনও আড্ডায়। সন্ধ্যের হাওয়া লেগে ব্যথা বেদনা দিক জোনাকির আলো। গা থেকে অপমান এবং গ্লানি ঝেড়ে সোজা হেঁটে যাক্ ঘাত প্রতিঘাত। চিন্তাশক্তি হোক্ সুন্দরের পুজারি...

কলম আরো চায় পাহাড় চূড়ায় গিয়ে বসে হাওয়া খাক্ আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অস্তিত্ব। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বার্থ চলে যাক্ জোঁক পাড়ায়। ঝড় বাদলের শরীর থেকে খসে পড়ুক ধ্বংস করার ক্ষমতা। পা টিপে টিপে এসে শুশ্রূষা লাল ফিতে দিয়ে বেঁধে দিক্ অভুক্ত সংসারের বিনুনি। হিংসে বিদ্বেষ সরল মনের বড় খোকা ছোট খোকা হয়ে জন্ম নিক ঘরে ঘরে। ডাকবাক্স খুলে চিঠি পড়া শুরু করুক কনকচাঁপা হাসি। ফোঁটা ফোঁটা মেঘ জমে দেহতত্ত্বে আসুক শীতকাতরতা...


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন