| কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৪১ |
পিতৃপরিচয়
সন্তানের সঠিক পিতৃপরিচয় সন্তানের
পিতা নয়, একমাত্র মা দিতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবশ্য মাও নিশ্চিত হতে পারে না, কোন পুরুষের ঔরসে সে গর্ভধারণ
করেছে। এই যেমন আমাদের তথাগত। ইস্কুলে ভর্তি হতে গিয়ে তার অ্যাডমিশন ফর্মে লেখা হয়েছিল
মায়ের নাম, সন্ধ্যারানী সমঝদার। আর লেখা হয়েছিল দাদুর নাম, সদানন্দ সমঝদার, অভিভাবক
হিসেবে। না, বাবার নামের উল্লেখ করা হয়নি, কেননা, তথাগতর বাবার নাম কারও জানা নেই,
এমনকি তথাগতর মা সন্ধ্যারানীরও নয়। নিছকই শিশু তথাগতর অবশ্য এব্যাপারে আদৌ কোনো মাথাব্যথা ছিল না।
দাদু-দিদা আর মায়ের স্নেহে প্রশ্রয়ে আদরে বুঁদ হয়ে একটু একটু করে বড় হচ্ছিল। তাদের
পরিবারেও বাবা সম্পর্কিত কোনো আলোচনার স্পেস ছিল না।
কিন্তু মুশকিল হল, তথাগত আরও একটু
বড় হয়ে ওঠার পর। ইস্কুলের প্যারেন্টস-টিচার মিটিঙে সব ছাত্রছাত্রীর কখনও মা, কখনও বাবা,
আবার কখনও মা-বাবা দুজনেই উপস্থিত থাকত, কিন্তু তথাগতর মা ও দাদু। ভাবনাটা এই সময়েই
মাথাচাড়া দিয়েছিল, তাই তো! সবার মা-বাবা আছে, অথচ তার মা থাকলেও বাবা নেই কেন! একদিন
তার ক্লাসের বান্ধবী নেহা নেহাতই কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করে বসল, হ্যাঁ রে তথাগত, তোর
বাবা নেই? মরে গেছে? ক্লাসের আর এক ফাজিল বান্ধবী রত্না টিপ্পনি কেটে বলেছিল, না রে নেহা, মরে টরে যায়নি, পালিয়েছে।
ক্লাসের বান্ধবীদের ফাজলামি তথাগতকে
এতটাই বিব্রত করে তুলেছিল, শেষপর্যন্ত অস্থির হয়ে মা’কে প্রশ্ন করে বসল, আমার বাবা
কে? বাবা আমাদের সঙ্গে থাকে না কেন?
অদূর ভবিষ্যতে সন্তানের এই প্রশ্নের
মুখোমুখি যে হতেই হবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত ছিল সন্ধ্যারানী। উত্তরটা ভেবেও রেখেছিল,
বলেছিল, তোর বাবা আছে। কাছাকাছি কোথাও আছে। তবে কাজে খুব ব্যস্ত, তাই আসতে পারে না।
তথাগত পালটা প্রশ্ন করেছিল, তাহলে
কি আমার বাবা পালিয়েছে?
অস্বস্তিতে পড়েছিল সন্ধ্যারানী।
-না, ঠিক পালায়নি, পালিয়ে আর কোথায়
যাবে! একদিন দেখবি তোর সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে।
মায়ের কথাটা কেমন যেন ধাঁধাঁ বলে
মনে হয়েছিল। সমাধানও জটিল মনে হয়েছিল। আর মা যে বলল, একদিন দেখা হয়ে যাবে, তা কবে?
কীভাবে? কোথায়?
বাবা সদানন্দকে তথাগতের কৌতূহলের কথা জানিয়েছিল সন্ধ্যারানী। সদানন্দ মেয়েকে বুঝিয়েছিলেন, তথাগত যথেষ্ঠ বড় হয়ে না ওঠা পর্যন্ত, তাকে তার জন্মরহস্য জানালে, অপরিণত মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে! মনে হীনমন্যতা বাসা বাঁধতে পারে! আমি তাই তোকে বারবার বলেছিলাম, গর্ভপাত করাতে। কিন্তু তুই কিছুতেই শুনলি না। জিদ ধরে বসলি, সন্তানের জন্ম তুই দিবি। তাও যদি আইডেন্টিফাই করতে পারতিস, সন্তানের বাবা আসলে কে!
সন্ধ্যারানী জানে, তথাগতর প্রকৃত
বাবা কে, তা অনায়াসে জানা যেতে পারে, যদি তার চারজন ধর্ষণকারীর ডিএনএ টেস্ট করা হয়।
বিশেষত সেই চারজনই তার পরিচিত। কিন্তু কী লাভ, একটা কামুক নিষ্ঠুর ধর্ষককে তার সন্তানের
পিতা রূপে স্বীকৃতি দিয়ে!
তথাগত সন্তর্পণে চোখ রাখে চেনা-অচেনা
মানুষদের মুখে, যদি তার বাবার সঙ্গে দেখা হয়ে যায়!
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন