Casa Loma : এক হৃদয়স্পর্শী আখ্যান
কানাডা ভ্রমণে গেলে, বিশেষ করে
টরোন্টো ঘুরতে আসা পর্যটকরা এমন এক অদম্য আকর্ষণে ছুটে যান নায়াগ্রা জলপ্রপাতের দিকে,
যেন পৃথিবীর আর কিছুই দেখার বাকি নেই! অথচ, সেই তৃষ্ণা একটু সংবরণ করলেই জানা যায়,
টরোন্টো শহরেও লুকিয়ে আছে কত রোমাঞ্চকর ছোট ছোট বিস্ময়।
আমরাও তাই একদিন নায়াগ্রার টান সামলে চলে গেলাম Casa Loma টরোন্টোর সেই বিখ্যাত দুর্গ-প্রাসাদে। প্রাসাদের বাইরে সোনালী সন্ধ্যায় দাঁড়িয়ে ছিল এক প্রাচীন Rolls-Royce, যেন নিজেই ইতিহাসের পৃষ্ঠা থেকে বেরিয়ে এসেছে। গাড়িটি ছিল একসময়কার মালিক স্যার হেনরি পেলাট-এর, বিশ শতকের গোড়ার দিকে টরোন্টোর সর্বাধিক বিত্তশালী ও স্বপ্নদ্রষ্টা মানুষদের একজন।
পেলাট ছিলেন সাধারণ কেউ নন। দূরদৃষ্টি, সাহস আর ঝুঁকি নেওয়ার অদম্য মানসিকতা তাঁকে বানিয়েছিল শহরের প্রতীক। তিনি প্রথম নায়াগ্রা জলপ্রপাতের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পথ খুলেছিলেন, আর ১৯০৫ সালে তাঁর কীর্তির স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নাইটহুড। Rolls-Royceটি ছিল কেবল তাঁর রাজকীয় জীবনযাত্রার এক ক্ষীণ আভাস। তাঁর প্রকৃত আসক্তি ছিল Casa Loma — পাহাড়চূড়ায় ৯৮ কক্ষবিশিষ্ট Gothic style-এ গড়া দুর্গ, যেখানে ছিল একাধিক প্রযুক্তি ও নকশার নবত্ব, এক ব্যক্তির স্বপ্নের স্মৃতিস্তম্ভ হয়ে উঠবার প্রত্যাশা নিয়ে নির্মিত।
কিন্তু নিয়তি অন্য কথা লিখে রেখেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিরতা আর যুদ্ধ-পরবর্তী মন্দা একে একে সব কেড়ে নিল। করের বোঝা বাড়ল, সম্পদ ভেসে গেল, আর দশ বছরের মধ্যেই পেলাট হারালেন সবকিছু - এমনকি তাঁর প্রিয় Casa Loma-ও শহর প্রশাসন দখল করে নিল।যিনি একদিন টরোন্টোকে নিজের ইচ্ছেমতো গড়ে তুলেছিলেন, শেষে ভেঙে পড়লেন নিঃস্ব হয়ে। শুধু সেই প্রাসাদ, Casa Loma, আজও নীরবে দাঁড়িয়ে আছে এক স্বপ্নদ্রষ্টার মহিমা ও পতনের মর্মস্পর্শী প্রতীক হয়ে।




0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন