কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩০ |
শীত
ঘরের বাইরে পা রেখে অমল কুয়াশায়
প্রায় হারিয়ে যাওয়ার জোগাড়। শীত অবশ্য তেমন লাগছে না। বুলবুলের বুকের ওম এখনো ওকে জড়িয়ে
আছে। আর কে-ই বা আছে অমলের! এক কাজের মাসি। সারাদিন থেকে রাত্রে ঘরে ফিরে যায়। অমল
ওকে আম্মা ডাকে। অমলের ভালোমন্দ সব ওরই হাতে। ও জানে, অমল মাঝেমধ্যে রাত কোথায় কাটায়।
তাতে আম্মার কিছু যায় আসে না। এই শহরতলীর অনেকেই অমন যায়। তার লোকটাও কি যেতো না! অমল
তো তবু একা। অমলও ঠিক বোঝে না, বুলবুলের কাছে ও কি পায়। শুধু বোঝে, কারখানার হৈহল্লা
থেকে বেড়িয়ে বাকি সময়টায় যে একাকীত্ব ওকে গ্রাস করে থাকে, সেসব থেকে ও মুক্তি পায় এখানে
এসে। বুলবুলের কাছে যে অন্য লোক আসে, অমল জানে। বুলবুলও ওকে সব বলে। আর বলে, হারিয়ে
যাওয়া এক নদীর গল্প, একটা পুরনো বটগাছ আর এক মেঠোপথের ঠিকানা। অমল বলে তার মৃত বাবা-মায়ের
ভালবাসার, খুনসুটি আর ঝগড়ার কথা। বুলি মানে বুলবুল খুব হাসে। হাসতে হাসতে চা করে, মেটেচচ্চরি
করে, গেলাসে মদ ঢেলে দেয়। হ্যাঁ, অমল এখানে এসে বুলির জন্য ভালোমন্দ খাবার নিয়ে আসে
আর কম দামী রাম। একবার শাড়ি আর ব্রা-প্যান্টি নিয়ে এসেছিল। তা দেখে বুলির হাসি আর থামতেই
চায় না। ও হাসলেই বাঁদিকের গজদন্ত বেড়িয়ে আসে আর দুই গালে টোল। অমল সেসময়ে সামান্য
পৃথুলা বুলবুলিকে দেখতে থাকে, দেখতেই থাকে। হাতের গ্লাস আর ঠোঁটে ওঠে না। শীতটা এবার
ভালোই পড়বে মনে হচ্ছে। আজ কারখানায় নাইট শিফট। গিয়ে স্নান করে আম্মার রাঁধা ভাত খেয়ে
টানা ঘুম। ওর তো আর কেউ নেই, কিচ্ছু নেই। পি এফ-এর নমিনি আম্মা আর বুলির নামে করে
দিয়েছে।অমল সাবধানে হাঁটে। এই ভোরে রাস্তা প্রায় দেখাই যায় না। হঠাৎ কুঁি কুঁি শব্দ
শুনে থমকে দাঁড়ায়। একটু ঠাহর করার চেষ্টা করে শব্দের উৎস। পেয়েও যায়। রাস্তার পাশের
শুকনো ড্রেনের ভিতর পড়ে গিয়েছে একটা কুকুর বাচ্চা। সামনে অসহায় ওর মা আর আরও তিনটে
বাচ্চা। ও গিয়ে সাবধানে তোলে। ভয় পাচ্ছিল, মাকুকুরটা তেড়ে না আসে। |
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন