কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪

সমরেন্দ্র বিশ্বাস

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩০


 

পদত্যাগ

বিশেষ অধিবেশন। লোকটা উঠে দাঁড়ালো। সারারাত ঘুম হয়নি। চুল এলোমেলো। চেহারা চোখ মুখ বিক্ষিপ্ত। মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারের দিকে এগিয়ে গেলো। তার হাতে তুলে দিলো একটা বন্ধ খাম। নিচু স্বরে জানালো – ‘আমার মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগপত্র’।

-‘কেন কী হয়েছে? আপনি তো একটা দায়িত্বশীল পদে আছেন। অনেক কাজ করেছেন। কীজন্যে এমন  সিদ্ধান্ত?’

-‘না, মানসিকভাবে কিছুটা অস্থির আছি! আমি ঠিকঠাক আমার সব দায়িত্ব পালন করতে পারছি না! আমার কার্যকালে অনেক দুর্নীতি, অনেক খারাপ কাজ চলছে – চারদিক থেকে এমনটাই খবর আসছে! সবদিক সামাল দেয়া যাচ্ছে না! তাই ভেবেচিন্তে আমি এই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

মুখ্যমন্ত্রী জানালেন – ‘এটা নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেবো। এখন আজকের পার্টি মিটিং-এর স্বাভাবিক কাজকর্ম চলুক।’

পরের দিন। মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন। একজন ঘনিষ্ঠ বিধায়ক ও দুজন মন্ত্রীর গোপন মিটিং! বিষয়, মন্ত্রী অকূলকুমার দত্ত-র পদত্যাগপত্র গৃহীত হবে কিনা?

দুজন মন্ত্রীই বললেন - ‘নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই! উই শ্যাল অ্যাকসেপ্ট দিস রেজিগনেশন! ওনাকে নিয়ে অনেক অনেক সমস্যা!’

উপস্থিত তৃতীয় জন চুপ।

মুখ্যমন্ত্রীর স্থির মতামত - ‘অকূলকুমার দত্ত খুব বিবেকবান ব্যক্তি। স্বাভাবিকভাবেই বিবেকের তাড়নায় তার ডিপার্টমেন্টের দুর্নীতি ও খারাপ কাজের অভিযোগে তিনি বিচলিত। আমাদের অধীনস্ত সবার ডিপার্টমেন্টে কিছু না কিছু খারাপ কাজ, কিছু কিছু দুর্নীতি নিশ্চয়ই হয়। আমরা কি তাতে ভেঙে পড়ি? এতো কিছু ভাবলে এতোবড়ো একটা দেশ চালানো সম্ভব না। অকূলবাবুর মতো বিবেকবান ও সৎ মানুষই আমাদের দেশে বেশী বেশী দরকার।’

মিটিং-এর শেষে মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হলো – ‘মন্ত্রী অকূল দত্তের পদত্যগপত্র গ্রহন করা হচ্ছে  না।’

এর দু’সপ্তাহ বাদে সেই লোকটা ঘর থেকে নিঁখোজ। তার তিনদিন বাদে লোকটার পচাগলা শরীর ভেসে উঠলো নদীর কিনারে। মন্ত্রী অকূলকুমার দত্ত সত্যি সত্যিই কি আত্মহত্যা করেছে? নাকি তাকে খুন করে জলে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে? আগামী তদন্তই কি প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করতে পারবে?

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন