কবিতার কালিমাটি ১৪০ |
মন খারাপ
(১)
মন খারাপ এখন বৃষ্টিতে ভিজছে
চরাচর ভিজে যাচ্ছে মুষল ধারায়
তার সাথে মন খারাপও ঝরছে
একটানা কখনো থেমে থেমে
আকাশে বিদ্যুৎ চমক
সারা দুনিয়া ধূসর হয়ে উঠেছে
বৃক্ষচারীরা মাটিতে নেমে এসেছে
নূহের প্লাবন মনে পড়ছে
প্রাণীকুল জোড়া বেঁধে আছে
তুমি শুধু একজন একক
লাটিমের মতো ঘূর্ণায়মান
সারা আসমান ব্যাপী মাশরুম চাষ
ঝাঁকে ঝাঁকে মিগ্ টুয়েন্টিফোর
চোয়ালের মাংস কিছুটা ঝুলে পড়েছে
কোনো কিছুই চিরন্তন নয়
কোনো মানুষ, প্রেম-ঘৃণা-ভালোবাসা
তবু যেন এই মুহূর্তে দারুন এক টর্নেডো
ভেদ করেছে তোমাকে
এফোঁড় থেকে ওফোঁড়
চারদিকে ধু ধু প্রান্তর
কোথাও কেউ নেই
ক্রমাগত শুনতে পাচ্ছ নিজেকেই
এ যেন অনন্ত বহমান
আদি নেই অন্ত নেই
খুঁড়ে চলেছো পাতালের ঠিকানা
বুক থেকে গল গল করে রক্ত ঝরছে
চোখ থেকে অশ্রু বৃষ্টি
তোমরা কেউ এখানে এসো না
শূন্যতা ভেদ করে অচিনের খোঁজে
বাড়ির পাশে আরশিনগর
সেথায় এক পড়শী বসত করে
আমি একদিনও না দেখিলাম তারে
এ এক অনন্ত যাত্রা
মন খারাপ আজ মাটিতে লম্বমান
ঝরে পড়ছে অঝোর ধারায়
গুঁড়ো গুঁড়ো মিহিদানা
জামদানির ঝালরকাটা প্রকৃতির জলরঙে
(২)
বহুদিন ধরে মন খারাপ
আগে রাতে ঘুম না হলে
সারারাত জানালা দিয়ে আকাশ দেখা
নয়তো গভীর সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে
অন্য কোনো পৃথিবীতে
অন্য কোনো গ্যালাক্সিতে
সেখানে মাছ আর পাখিরা আকাশে খেলা
করে
এখন শুধুই ওষুধের কৌটা খোঁজা
সারাদিন পথে পথে হেঁটে
সারারাত নির্ঘুম
তবু তোমার মন খারাপ কাটে না
বিষাদসিন্ধু শেষ করে ডলু নদীর হাওয়া,
শহীদুল জহির এখন নৌকাতে
তারও ভীষণ মন খারাপ
আগে মন খারাপ হলে মরে যেতে ইচ্ছে
করতো
এখন কেন মরে যাবে সেজন্য মন খারাপ
শহীদুল জহির পুরান ঢাকার ডালপট্টিতে
সেখানে সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ,
ফরিদ কবির চা খাচ্ছে
সৈয়দ তারিককেও দেখা যাচ্ছে মালিবাগ
রেল লাইনের দিকে
তখন ছেলেরা পেথেডিন নিতো
আর ডাইল খেয়ে কড়া চিনি দিয়ে চা
খেত
এখনো এসব চলে তবে বেশি চলে ইয়াবা
পাবলিক- লাইব্রেরির চিপায় লাইন
লেগে থাকতো
একজন বের হলে অন্যজন
ম্যাক্স খেয়ে কয়েকজন চোখে সব উল্টা
দেখতো
এসব ভাবতে ভাবতে মনখারাপের রাজ্য
থেকে বসুন্ধরা শপিং মল
সেখানে ফুডকোর্টে মেক্সিকান ফুড,
লেবানিজ শবর্মা
এসব খেতে খেতে ক্লান্ত হয়ে গেলে
বইমেলা
সেখানে ঔপন্যাসিক মাসরুর আরেফিন
সে লিখেছে আগস্ট আবছায়া
লোকজন ভাবছে শেখ মুজিবকে নিয়ে লেখা
বই
মাসরুর যতই বলছে এর মধ্যে আছে ফুয়েন্তেস,
মার্কেজ, বোর্হেস
ট্যাক্সি ড্রাইভার আয়ার যে চব্বিশ
ঘন্টার মধ্যে দুই ঘন্টা ঘুমায়
মাথায় একবার কিছু ঢুকে গেলে সিলগালা
হয়ে যায়
একবার আর্ট কলেজের লিটু বলেছিলো
ভাল্লাগেনাও আর ভাল্লাগে না
তুমি ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে নিলে
শিনার মাংস
ইলেক্ট্রিক্যাল ওভেনে বার্বিকিউ
হবে
সাথে পার্সলি পাতার সালাদ
যদিও রেড মিট বহুদিন নিষেধ
শামীম কবীর চব্বিশে ভাবলো নাথিংনেসের
কথা
এখন ওর বন্ধুরা রোজ সকালে ভদকায়
ডুবিয়ে বনরুটি খায়
প্রত্যেকেই কচ্ছপের মতো আয়ু নিয়ে
ঘাপটি মেরে আছে সুড়ঙ্গের ভেতর
এখানে সবার পথ আলাদা
কতোকাল পর জহির রায়হানের বরফগলা
নদী
মাহমুদ এখনো স্বপ্ন দেখে
একদিন বিপ্লব আসবে
যারা কুকুরের মতো দালান চাপা পরে
মারা গেলো
তাদের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবে সময়
কালের নিয়তি নয় যেন এক প্রকাণ্ড
ঝড়
দুমড়ে -মুচড়ে দেবে সভ্যতার হিংস্র দাঁত
হাজার হাজার বছর ধরে তৈরী হয়েছে
যে লাঞ্ছনার ঘেটো
তা কখনো চিরকাল রয়ে যেতে পারে না
একজন মানুষ দিনে দু -ঘন্টা ঘুমিয়ে
কেমন করে বেঁচে থাকে?
যেখানে শুধুই ভাগাড়
শিকের উল্টো পাশে গাঁথা মানুষ
পাকিস্তানিদের প্রেতাত্মারাও কখনো
ফিরে আসতে চায় না
এই জল্লাদখানায় -
মানুষ যুদ্ধ করে কখনো স্বাধীনতার
জন্য
কখনো খাবারের জন্য
কখনো তেলের জন্য
তুমি আজ কোন বধ্যভূমিতে?
ওখানে কি নীল স্থল-পদ্ম ফোটে
তোমার মন খারাপের কি কোনো শেষ আছে
বসন্তের বাতাস বইছে চারপাশে
সেখানেও একরাশ ধুলো এসে চোখ ঢেকে
দিলো
যা কিছু সত্য তুমি আর তা দেখতে
চাও না
যা কিছু মিথ্যা তুমি আর তা শুনতে
চাও না
একটা ত্রিশঙ্কু ভঙ্গি
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন