কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩০ |
রাজা ঔর রানী
রাজা যেদিন খসে পড়ল, বাড়িতে কেউ ছিল না। ও ফিরে এসে দেখলো, ঝুলছে কেবল রানী। রাজা মেঝেতে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। আত্মহত্যা আর স্বাভাবিক মৃত্যু পাশাপাশি ঘটলে যেরকম একটা অস্বস্তি হয়, বোঝা যায় না কোনটা কী, কেমন করে হল, ওরও তাই হচ্ছিল মনের মধ্যে। রানী কি বিষ দিয়েছিল রাজাকে? এটা কি খুন? হত্যাও তো একপ্রকার আত্মহত্যা। অপরকে হত্যা করলে নিজের মধ্যেও একটা মৃত্যু ঘটে যায়। অনেকসময় সেই মৃত্যু ঘটানোর জন্যই আমরা অপরকে হত্যা করি, তাই না?
সুতোর জোড় হাল্কা হয়ে আসছিল। ও অনেকদিন ধরেই ভাবছিল কে আগে খসবে, রাজা না রানী? ওর মন বলছিল রাজা, কারণ ওর মন চাইছিল রাজা। ও বরাবর সবার আগে চলে যেতে চায় যাতে অন্য কারুর চলে যাওয়া ওকে না দেখতে হয়। ওর প্রিয় মানুষেরা এজন্য ওকে আত্মকেন্দ্রিক ভাবতে পারে, তাতে কোন সমস্যা নেই। ও জানতো যে আগে খসবে সে আগে যাবে। তা বলে ও যে কাঁচি দিয়ে সুতো কেটে দিয়েছে এমনটা নয়। শুধু রোজ সকালে চা খেতে খেতে রাজার দিকে তাকিয়ে থেকেছে। তারপর রানীর দিকে। লক্ষ করেছে সুতোর জোড়। সময়ের হাল্কা হাওয়ায় একেক মুহূর্তে দুর্বল হয়ে যাওয়া জোড়ের তুলনামূলক সাহিত্য খেলা করেছে ওর মাথায়। তবে কি ওর নজরেই খুলে গেল রাজার সুতোর জোড়?
রাজাকে তুলে নিয়ে স্টোররুমে রেখে দিয়ে এসেছিল ও। স্টোররুমের বাল্বটা কাজ করছে না। ঠান্ডা অন্ধকারে শুয়ে থাকুক রাজা। রানী দিব্বি ঝুলে রয়েছে। সুতোর জোড় সময়ের মতোই সজাগ। চা খেতে খেতে এখন ও আর রানীর দিকে তাকায় না।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন