কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / তৃতীয় সংখ্যা / ১২৩

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / তৃতীয় সংখ্যা / ১২৩

শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

শান্তিরঞ্জন চক্রবর্তী

 


সমকালীন ছোটগল্প


পূর্বরাগ

হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ল কমনরুমে স্নাতক শ্রেণী’র ফার্স্ট ইয়ারের কিছু ছাত্র। সঙ্গে স্বাগতা। স্বাগতা সুন্দরী। মন টানে। গানটি গায় আরও ভালো। হৃদয় ছোঁয়া। বনেদী রক্ত বয় স্বাগতার শরীরে। গলায় রবীন্দ্র-অতুল। বন্ধুদের আবদার, গান শোনাতেই হবে। ‘খালি গলায়’? বিস্মিত প্রশ্ন স্বাগতার। ‘গলায় মধু নিয়ে জন্মেছিস, তোর আবার যন্তর কি দরকার রে’? এক বন্ধুর ঠেস। এককোণে পাঠে নিমগ্ন এক তরুণ। ইংরেজী কবিতার বই। এদিকে শ্রোতৃকুল নিমগ্ন গানে। গাইছে স্বাগতা, ‘ওই শুনি যেন চরণধ্বনি রে,…’। ওদিকে বইটা নেমেছে টেবিলের ওপর। পাঠকের মনোযোগ কি এখন তবে বই থেকে গানে? চোখে বিস্ময়, গায়িকা এই গানটিই বেছে নিল কেন? ‘বুঝি আমার মনোহরণ আসে গোপনে…,’ গেয়ে চলেছে স্বাগতা। হঠাৎ নজর আটকে গেল ওই নীরব পাঠকের ওপর। অপলক তাকিয়ে স্বাগতার দিকে। সুদর্শন তরুণ। বুদ্ধিদীপ্ত দুটি চোখ। গান থেমে যায় স্বাগতা’র। নিঃশব্দে মাথা নীচু করে বেরিয়ে গেল ছেলেটি। পুরো কমনরুমটা জুড়ে এখন নৈঃশব্দ্যের রাজত্ব। বন্ধুরা চেপে ধরে স্বাগতাকে, ‘বল্‌, হঠাৎ করে গান থামিয়ে দিলি কেন? ওই ছেলেটা কে’? কেউ একজন বলল, ‘আরে ও তো আমাদেরই সেকশনে, রোজ জানালার কাছে কোণের বেঞ্চিটায় বসে’। কিরে স্বাগতা, কেস্‌টা কী বলতো’? কী বলবে স্বাগতা? ও নিজেই তো বিস্ময়ের সাগরে হাবুডুবু।

পরদিন ফার্স্ট পিরিয়ড। রোলকল হচ্ছে। আরে সে কোথায়? জানালার ধারে ওই ছেলেটা? ইংরেজীর অধ্যাপক হাজরা তাকালেন সামনের দিকে। কাউকে খুঁজছেন যেন। জানতে চাইলেন ঐ বেঞ্চেরই এক ছাত্রের কাছে, ‘জানো, মনোহরণ আসেনি কেন’? বোঝা গেল স্যরের প্রিয় ছাত্র সে। টিউটোরিয়াল ক্লাসে ওর গ্রুপের ছাত্র ছাত্রীরা জানে সে কথা। মনোহরণ নামটি শুনে চমকে উঠলো স্বাগতা। গানে ওই শব্দটি শুনেই যে তরুণটি অপলক তাকিয়েছিল ওর দিকে! তোলপাড় স্বাগতার মন। তবে কি! মনের ক্যানভাসে ছবি আঁকা হয়ে গেল স্বাগতার। পরের পিরিয়ডে সে এলো। বসলো গিয়ে ওই জানালার পাশটিতেই তার নির্দিষ্ট জায়গায়। আর একটি ছেলে, মনোহরণের বন্ধুই হবে হয়তো, বলতে শুরু করলো নাটকীয়ভাবে, ‘স্যর আসার আগেই একটি বিশেষ সংবাদ পরিবেশন করব আপনাদের কাছে’। পুরো ক্লাসটির দৃষ্টির কেন্দ্রে এখন বক্তা ছেলেটি। মনোহরণের দিকে হাতটি বাড়িয়ে ধরে বলল সে, ‘এই যে দেখছেন, এ আমাদের মনোহরণ। কলেজের ওয়াল ম্যাগাজিনে একটি ইংরেজী কবিতা দিয়েছে সে। ছত্রে ছত্রে প্রথম প্রেমের উত্সার। জানি না, কোন প্রেমিকার মন হরণ করেছে সে! সুন্দর কবিতা। সকলকে পড়ে দেখার অনুরোধ রইল। মনোহরণ নতমস্তক। স্বাগতা তথৈবচ।

ফার্স্ট ইয়ারের পরীক্ষা সমাগত। পরীক্ষা শেষও হল যথারীতি। সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাস শুরু। সকলেই আছে তো? না, স্বাগতা নেই। ক্লাসে গুঞ্জন, পাত্রস্থ হয়েছে স্বাগতা। বন্ধুদের মুখে পাত্রের গুণগান। ক্লাস চলছে নিজের মত। পরদিন থেকে মনোহরণকে আর ক্লাসে দেখতে পায়নি কেউ। আর স্বাগতার মনের খবর? আছেই তো! বন্ধুরা বিয়ের দিন অনেক করেও হাসাতে পারেনি ওকে। চোখের দৃষ্টিও ছিল কোন সুদূরে উধাও।



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন