কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / তৃতীয় সংখ্যা / ১২৩

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / তৃতীয় সংখ্যা / ১২৩

শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

শাশ্বত বোস

 

সমকালীন ছোটগল্প


জতুর্থ কলম  ও রুইতন  রেজোন্যান্স


বর্ষা কিংবা বসন্তের ঘন থকথকে হয়ে আসা একটা বিকেলবেলা। নদীর পাড়ের নগরবর্ত্তীকায় সূর্য্যের শেষ চিহ্নটা বিলুপ্ত হয়ে যাবে
, এমন আত্মঘন মুহূর্তের একটা সীমাহীন দখল কাজ করছে সর্বস্বান্ত সভ্যতার ক্যানভাসে। নদীতে হয়তো এক্ষুনি জোয়ার আসবে, জল বাড়ছে একটু একটু করে। নদীর পাড়ের শেষ প্রান্তে ঝুলে থাকা গাছটার শিকড় ভাবী ভাঙ্গনের মুখে অল্প খুঁড়িয়ে হাঁটা জমিটার শেষটুকুকে আষ্টেপৃষ্ঠে পেঁচিয়ে ধরতে চেয়ে বুনেছে দোষ আর আক্ষেপের স্পেক্ট্রামি কক্ষপথ। তার ছলাৎ ছলাৎ ভাবসম্প্রসারণে ভেসে উঠছেন শ্রাবস্তীর বনলতা। এতো অনুকূল পরিবেশেও গাছটির গায়ে একটাও পাতা নেই। তার বিবস্ত্র বিবরে দময়ন্তী নোটিফিকেশনের স্মৃতি উস্কে দিয়ে বেরোনো সাতপুরোনো ডালপালা বেয়ে, বুঝি নেমে আসবে মৃত্যুর হিমশীতলতা। পিছন দিক থেকে উঠে আসা আলগা একটা হাওয়ায় গা ভাসিয়ে একজন বৃদ্ধ, শূন্যচোখে তাকিয়ে আছেন তাঁর অস্বাভাবিক ফ্যাটফ্যাটে রঙের শরীর থেকে সব কলকব্জা বেরিয়ে যাওয়া, দ্রাঘিমার ঐশ্বরিক চরিত্র অববাহিকায়। সেই বৃদ্ধ হয়ত বিগত ৭৫ বছর ধরে প্রেমের কবিতা লিখে আসছেন সমানে। নদীর জলে পা ডুবিয়ে বসে একটি ছেলে আর একটি মেয়ে। হয়তো ছেলেটি নদীর উৎস আর মেয়েটি মোহনা। ছেলেটির আলজিভ থেকে বেরিয়ে নদীটা একটা আঁকা বাঁকা স্বার্থপর সরীসৃপ গতিতে ভেসে গিয়ে ব্রাত্যজনের বিলুপ্তির কড়চা লিখছে মেয়েটির পেলভিস বরাবর। গাছটার হাড় গিলগিলে শরীরটা জুড়ে দিনে দিনে যেন ফুটে উঠছে বিষণ্ণ দেশকালের মানচিত্র আর তাতে বিন্দুর মত ভেসে রয়েছে একটি পাখির বাসা। ‘হয়ত পাখিটাকে বুকে করে একদিন উড়ে যাবে গাছটা’, এমনটা মনে হয় এইরকমের আবছা আলো আঁধারিতে। গাছটাই হয়ত জগৎ সংসারের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ, একদিন সে বনবীথিকা হবে। ছেলেটি দিগন্তের নির্জনতার পেটের ভেতর খুঁজে চলেছে বিলম্বিত বিষক্রিয়ার সীমাহীন অসভ্যতা। ঈষৎ পৃথুলা মেয়েটি ছেলেটির সঞ্চারী দুচোখে সমানে খুঁজে চলেছে, দশমীর ভেজা গায়ে ঈশ্বরী মূকাভিনয়। ছেলেটি এবং মেয়েটি এই ক্ষণে একে অন্যতে মগ্ন, সমাধিস্থ। মেয়েটি তার গোল গোল হাতগুলি বাড়িয়ে দেয় ছেলেটির দিকে,

মেয়েটি: "তোমার ঠোঁটে আমার ঘ্রাণ, যেন অপরাহ্নে নবান্নের অঘ্রান

তোমার কানে আলতো চুমু, যেন প্রদাহের আতিশয্যে

অভিসারী তল মাপে নীরব অক্ষর।"

ছেলেটি হাতের মুঠো থেকে বার করে একটি সাদা খাম বাড়িয়ে দেয় মেয়েটির দিকে। A4 সাইজের খাম একটা।

ছেলেটি: "ফর ইউ! যেমনটা চেয়েছিলে রঙ্গীন পাতায় রঙ্গীন কালির দাগ, দুটোই আদ্যোপান্ত ভিন্ন সত্তা, কিন্তু বিকেলের উদ্বৃত্ত ছায়ায় মিলে মিশে একাকার।"

এই দৃশ্যটি সত্যি হয়ে যেত হয়ত সহজ জীবন্ত ধূলিকণার রোমকূপে আগডুম বাগডুমের জাগতিক সঞ্চারের মধ্য দিয়ে। কিন্তু সিচুয়েশনটা এন্টাগোনিস্ট হয়ে ওঠে সমান্তরাল সময়ে লীন দুটি নিসর্গ চিত্রে। নদীর মানচিত্র জুড়ে একটা অনিবার্য্য নৌকার প্রবেশ ও সেই সঙ্গে এই এলেবেলে কনভার্সেশনের মধ্যে প্রতিসরণের খেলা দেখায় খোলা আকাশের প্রিজম তর্জনীর গায়ে ধাক্কা খাওয়া, সূর্য্যের সদ্যঃপাতী তপশ্চর্য্যার প্রতিক্রিয়াশীল নিদর্শন স্বরূপ ঠিকরে আসা ‘শেষের দিকের আলো’। এই চিত্রটা হয়ত গোঙানির ধোঁয়ায় ঝাপসা হয়ে যাবে আর কিছুক্ষণের ভেতরে। নাগালের মধ্য থেকে স্থান-কাল-পাত্রের নৈসর্গিক রূপান্তরের মাঝে, শুক্লপক্ষের ঈশ্বরী জোয়ারের দিকে ভেসে যায় একদল সিঁদুরে মেঘ পাপিয়ার দল।

সুলগ্নাকে কৌশিক দেখে শুনেই বিয়ে করেছিল। মানুষের জীবনে একটা সময় আসে, যখন প্রেম করার আগ্রহ বা ধৈর্য্য কোনোটাই তার আর থাকে না। বিশ্বাসটা টোল খায়, এদিকে মন থিতু হতে চায়। ঠিক তখন প্রেমের ব্যাপারে আশাবাদী থাকাটা নিতান্ত বিপরীতগামীতার পর্যায়ে পরে। বত্রিশের কোঠায় দাঁড়িয়ে খানিকটা এমনতর ভাবনা চিন্তা থেকেই ম্যাট্রিমোনি সাইট, আনন্দবাজার পাত্র-পাত্রীর অ্যাড এ চোখ রাখা। অনলাইনে পাত্রী দেখা পর্ব সারার পর হুট করে একদিন সামনা সামনি মেয়ে দেখা। কয়েকদিনের ফোনালাপ ও অবশেষে বেদত্রয়ের নির্মেদ আচারে,মধুপর্কের মিছরি গল্পে ‘তুহু মম প্রাণ হে’। বিয়েতে দানসামগ্রী বেশ ভালোই পেয়েছিল কৌশিক। বাবা মায়ের একমাত্র ইঞ্জিনিয়ার ছেলে, খুঁতখুঁতে সৌখিন। ঘরদোর ভরিয়ে নিজের পছন্দের আসবাব করিয়েছিল ও। এটা অহং নাকি আত্মসচেতনতা জানি না। কিন্তু শিক্ষা, কোয়ালিফিকেশন, এল.পি.এ রুপী মানি মেকিং অ্যাবিলিটি এগুলো ক্রমশঃ কৌশিককে ঢেকে ফেলছিল। সেই কৌশিক যে একদিন মনে প্রাণে বিশ্বাস করত, মেয়ের বাড়ি থেকে কিছু নেওয়াটা অন্যায়, ওর বাবা নেননি ওও নেবেনা। যে কথাগুলো একদিন ও নমিতাকে বলেছিল গর্ব করে, সেগুলো নিজেই ভুলতে বসেছিল তিলে তিলে। হয়ত সেজন্য নমিতাই দায়ী। এই মেরুদন্ডহীন সমাজের দর কষাকষি, পাত্রের রোজগার সম্পর্কে অদম্য কৌতুহল, ডেটা ভেরিফিকেশনের রকমারি পদ্ধতি কৌশিককে ভেতর থেকে পাল্টে দিয়েছিল আমূল। এক মেয়ের বাবা তো রীতিমত গোয়েন্দা লাগিয়েছিলেন, কৌশিকের পেস্লিপ ভেরিফিকেশনের জন্য। একভাবে দেখতে গেলে পাত্রীপক্ষের এই আয়বহুল সুপাত্রের জাগতিক চাহিদা, ভুল কিছু নয়। তবু উপভোক্তা সম্প্রদায়ের সামনে নিজের এই ক্লীব পণ্যগামীতা আর অন্যায় ভোগবাদের নেক্সাসের মুখে পরে, ক্যামেরার লেন্সের সামনে নুহ্য ধূমকেতুর মত প্রায় নিভে আসা বিশ্বাসের একটা তেল কাসটে গন্ধ গায়ে মেখে, ওয়েব সিরিজের ঢঙে অনর্গল নিজের আজন্ম লালিত ছবিটা পাল্টে ফেলতে থাকে কৌশিক। সুলগ্নার সাথে ওর বিয়েটা নিয়ে কৌশিক নিঃসংশয় হয়েছিল, যখন সুলগ্নার বাবা ওর মাইনে নিয়ে প্রায় একটা কথাও জিজ্ঞেস করেননি। অবশ্য মফস্বলের বুকে কৌশিকের প্রাসাদোপম বাড়ি, গাড়ি এগুলো দেখে প্রশ্ন করার কথাও নয়। তবু যেন কৌশিকের মনে হয়েছিল পরিবারটা কোথাও আর চারপাঁচটা চলতি উদাহরণের থেকে আলাদা। অবশ্য কৌশিক বুঝতে পারেনি পাত্রীর বাবার সেদিনের সেই কৌতূহলহীন দর্শকশৈলী আসলে এসেছিল ওর উদারতার পুরস্কার স্বরূপ। সুলগ্নার একটা জন্মখুঁত ছিল। মেয়ে দেখতে গিয়ে অবশ্য ওর বাবা স্পষ্ট করে কৌশিককে জানিয়েছিলেন সে কথা। তবু না বললেও এমন কিছু মহাভারত অশুদ্ধ হত না কৌশিকের কাছে। কৌশিকের শিল্পী চোখ সুলগ্নার মুখশ্রী দেখেছিল, সুলগ্নার অমেধ্য দুটো চোখে নীহারিকার চারা বপন করেছিল মনে মনে। সুলগ্নার ঠোঁটের ওই চেরা দাগটা মালকোষ বিছিয়ে হেঁটে চলে গিয়েছিল কৌশিকের পেরিটাল লোবের পশ্চাৎভাগে। কিন্তু বিয়ের পর মগরা আতরের তুলো ভিজিয়ে চারপ্রহরী উপন্যাসে ঘটলো পার্থিব পরিবর্তন। সংসার নামের ভীষম বস্তুটি কৌশিকের কাছে হয়ে দাঁড়ালো এক মূর্তিমান মরীচিকার মতন। যে সুলগ্নাকে কৌশিক চেয়েছিল নিজের গৃহিনী হিসেবে, যে তার ঘর গৃহস্থালীর দিকে নিপুণ নজর রাখবে, তার সংসারের খুঁটি নাটি সামলাবে নির্মোহ, নির্বেদী পরিচ্ছন্নতায়, সেই সুলগ্না হঠাৎই ভীষণ বারমুখো হয়ে উঠলো। চাকরির পরীক্ষা দেবার নাম করে ঘন ঘন উঠে বসে থাকতে লাগল নিজের বাপের বাড়িতে। অথচ বিয়ের আগে সুলগ্না ও তার পরিবার স্পষ্ট বলে দিয়েছিল, চাকরীর বয়স তার পেরিয়ে গেছে সুতরাং ওর আর চাকরী হবে না ধরেই এগোতে। আসলে পরে কৌশিক বুঝেছিল এই বাংলা বাজারে চাকুরিরতা মেয়েই ছেলেরা খোঁজে, যাতে হাতখরচ কিংবা ডিভোর্স হয়ে গেলে খোরপোষ এই দুটোরই কোন ঝামেলা না থাকে। আসলে একটা উপযুক্ত চাকরীর অভাবে সুলগ্নার মত খুঁতি মেয়েকে কেউ বিয়ে করতে চাইছিল না। সেখানে কৌশিকের চাই ‘চাকরি করবে না’ এমন গৃহবধূ। অতএব ভুলের সাথে চিবিয়ে খাওয়া মানবিক প্রার্থনা ঢেকে দিল সহজ যামিনী খুঁত, আড়ালে মেপে নিল একে অন্যের ভগবতী খামতি। কৌশিক একদম গোড়া থেকেই জীবনের কাছে নিজের চাওয়া পাওয়ার ব্যাপারে খুব পরিস্কার ছিল। শিক্ষানবীশ গৃহিনী হিসেবে সুলগ্নাকে নিয়ে সংসারের নিয়মমাফিক গার্হস্থ্য দর্শনের অমৃতক্ষণ গোড়াতেই ধাক্কা খেয়েছিল কৌশিকের জীবনে। সুলগ্না ঘরের প্রায় কোনো কাজই জানতো না, এমনকি একটা দেশলাই জ্বালতেও ভয় পেত। মায়ের মুখের দিকে চেয়ে কৌশিক অ্যাডজাস্ট করত। হয়ত উল্টোদিকে সুলগ্নাও অ্যাডজাস্ট করার চেষ্টা করছিল। রেগে গেলে কৌশিকের মাথার ঠিক থাকে না, মুখে যা আসে দু চার কথা শুনিয়ে দেয় সুলগ্নাকে। বিছানায় রতিসুখ তবু সে এডজাস্ট করতে পারে কিন্তু সংসার সুখ? দাম্পত্যসুখ? ওদের বিবাহিত জীবনে রাতের আয়ু বাড়ে। ক্রমশঃ সেই রাত গভীর অসুখে ভুগতে থাকে। তারপর একদিন সাংসারিক সূচক নামতে নামতে অসুখী বারান্দায় ধুতরো ফোঁটে। তবু সেই নিশ্চুপ, নির্ভার, ছায়াচ্ছন্ন রাতগুলোয় বিশ্বাসের আগে বুকমার্ক লাগিয়ে সুলগ্নাকে কাছে ডেকে নিতে চেয়েছে কৌশিক। গভীর রাতে সুলগ্না ঘুমিয়ে পরার পর ওর খোলা চুলে আলগোছে হাত বুলিয়ে দিয়েছে। তবু আলগা ভূমিকার বিপরীতে আলগোছে বেঁধে ফেলা ভালোবাসার শিরা উপশিরায় কৌশিকের সম্ভোগ ক্ষুধা সুলগ্নার কাছে কুলকুচি প্রলাপ হয়েই রয়ে গেছে। তবুও শেষের রাতে যখন ওদের ভেতর অশান্তি চরমে, আশেপাশের ফ্ল্যাটের কৌতূহলী দেওয়াল কান পেতেছে স্থানু পরশ্রীকাতরতার হুটপাট প্রবণতায়। তখনও উত্তাল বিবাদী কলহে টলমল নিজের সংসার তরণী কৌশিক বাঁধার চেষ্টা করেছে, আপ্রাণ গল্পগুচ্ছের মুখবন্ধে। তবু প্রবল অভিযোগ আর উভমুখী বিস্ফুরিত তেজে তা তলিয়ে গেছে বারবার। তারপর যখন কাঠের বাক্সে ভিজতে থাকা বাদামের খোসার মতন ঘনীভূত উড়নচন্ডী প্রহরে সুলগ্না বলল, "আমি আর তোমার সাথে সংসার করতে পারবো না। আমি বাবাকে ফোন করে দিয়েছি। কাল এসে ওরা আমাকে নিয়ে যাবে।" কৌশিকের চোখে তখন ভেসে উঠেছে গতিহীন উপসর্গের পঞ্চভূতে পঞ্চমী চাঁদ। ঠিক যেমনটা এখন ও দেখতে পাচ্ছে ওদের বাড়ির ছাতে সার দিয়ে সাজানো ফুলের টবগুলোয়। জমি হাঙ্গরের বীভৎস থাবায় কল্লোলদের বাড়ি লাগোয়া বাগানটা থেকে বয়ঃবৃদ্ধ গাছগুলোকে মাটি সমেত উপরে ফেলে যখন কৌশিকের আজন্ম লালিত কবিতাময় দেশটার মানচিত্রের নবীকরণ হয়, তখন এই টবগুলোয় এক চিলতে কৃত্রিম মাটির আশ্রয় খুঁজে ও জন্ম দিয়েছিল একটা বিরিঞ্চি সভ্যতার, যেখানে কোনো উদ্ভিদের মৃত্যু নেই। এই খানটায় সুলগ্নার স্মৃতি লেগে আছে। এতদিন আপ্রাণ চেষ্টা করেছে কৌশিক, প্রতিদিন দশ ঘন্টার ওয়ার্ক ফ্রম হোম করে বাগানটাকে বাঁচিয়ে রাখতে। কিন্তু কদিন ধরে বেশ কিছু গাছ মরতে শুরু করেছে। সৌর ঝাড়ু প্রহরে একান্নবর্তী নিরন্তর একটা অসুখ যেন পেয়ে বসেছে ওদের। বুক ফাঁটা একটা আর্তনাদ ভিজে বারান্দাটার গায়ে কান পাতলে শুনতে পায় কৌশিক। ফুল গাছ ওর প্রথম প্রেম। রাতের হাসি আর কথা নিয়ে মামাবাড়ির বিশাল বাগানের মাঝে সারস্বত বোধ, শিক্ষা আর সাহিত্যের আঁচল বুনতো ওরা ছোট্ট কৌশিকের একাদশী শরীরে। ওকে জাপ্টে ধরতো গৃহিনী ঘরে সভ্য ছড়ানো গুঁড়ো কর্পূরের মতো। বিয়ের পর প্রথম প্রথম ও নিজে হাতে বাগানটা দেখভাল করতো। তারপর আস্তে আস্তে বাগানটার পুরো ভার তুলে দিতে চেয়েছিল সুলগ্নার হাতে। হর্টিকালচারে সুলগ্নার প্রায় কোন ইন্টারেস্টই ছিল না। এমনকি কৌশিকের আগ্রহের যে কোন ব্যাপারেই সুলগ্না নির্লিপ্ত থেকেছে চিরকাল। চিরকালই সে যেন স্বার্থপরতা আর অলস একঘেঁয়ে যাপনচিত্রের সংমিশ্রণে ঢিমে আছে সিদ্ধ হওয়া পাঁচমিশালি সবজি গোছের। অথচ বিয়ের আগে ওর মা বলেছিলেন ‘আমার মেয়ে এই পারে, ওই পারে, দেখো তোমাকে খুব ভালো রাখবে’। এরকম হয়তো সব মেয়ের মা ই বলে থাকেন বিয়ের আগে। হাজার হোক মেয়ের মা তো! "তবু একসাথে থাকতে থাকতে মেয়েদের সংসারে আগ্রহ জন্মায়", কেউ যেন বলেছিল কৌশিককে। সেকেন্ড লিস্টের চাকরীটা পেয়ে যাবার পর সুলগ্না তো আর ঘরের কোন কাজ করতেই চাইত না। ওর নাকি হাতের টাইপিং স্পিড কমে যাবে। সবই প্রায় ঠেলে দিয়েছিল কাজের লোক আর কৌশিকের প্রায় অথর্ব হয়ে যাওয়া বৃদ্ধা মায়ের ঘাড়ে। আজ প্রায় চোদ্দ মাস অতিক্রান্ত। এ বাড়ি থেকে চলে গিয়ে সুলগ্না যোগাযোগ অবধি রাখেনা কৌশিকের সাথে। উকিলের চিঠি পাঠালে কিছু মিথ্যে আরোপ এনে অস্পষ্ট উত্তর দেয়। এই অসহ্য একাকীত্ত্ব থেকে মুক্তি চায় কৌশিক। ওর মনের নর্দমা জুড়ে সুলগ্নার প্রতি ঘৃণা আর আক্রোশ মিলে মিশে স্নায়ু শাসনের বিশ্রী খেলা চলে। শেষ বিকেলের রোদটা তেরছা হয়ে টবের গাছগুলোর হলদেটে শরীর বেয়ে চুঁয়ে এসে পরে কৌশিকের অযত্ন লালিত আলুথালু চুলে। অবচেতনে হয়তো ও আজও সুলগ্নাকে চায়। যেমনটা ও একদিন নমিতাকে চেয়েছিল। আজ অনেকদিন পর ইউ টিউব সার্চ করতে করতে, একটা কণ্ঠস্বর ওকে ভাবাল। একটা আনকোরা নতুন চ্যানেল থেকে কিছু বাংলা ক্লাসিক পাঠ করে শোনাচ্ছে একটি যুবতী নারী কণ্ঠ। কণ্ঠটি কৌশিক চেনে ওদের পুরোনো বাড়ির সিঁড়ির খোলা ঘর থেকে ভেসে আসা, রুটির গন্ধে গা ঘষে। তখন ফেসবুক সবে শুরু করেছে ও, কলেজের ফাইনাল ইয়ার, কলেজ ক্রাশ ঘা দিয়েছে। সেবছরই ভ্যালেন্টাইন্স ডে এর দিন একটি অচেনা প্রোফাইলের সাথে পরিচয় হয়। কথা বললে বোঝা যায় প্রোফাইলটি একটি মেয়ের, কিন্তু ডিপি দেওয়া নেই। কথা বলতে বলতে এই ভার্চুয়াল মিডিয়ামে ওদের সম্পর্ক ক্রমশঃ গাঢ় হয়। মনের গোপনে জমে থাকা খুচরো কথা শেয়ার করতে করতে একদিন হঠাৎই কৌশিক খেয়াল বশে ‘ভালোবাসি’ বলে দিয়েছিল প্রোফাইলটিকে। ঘোলাটে নিভু নিভু ক্ষণে ওপাশ থেকেও সম্মতি আসে। ওই বাড়িটার একচালা ছাদে শীতের শুরুতে হামা দিয়ে মলাসনে বসে থাকত হলদে ইলশেগুঁড়ি রোদ। অনেকগুলো বছর পর আজ ছিটকে গেছে স্মৃতির ডিসর্ডার, যতদূর ছড়িয়ে যাওয়া যায়। এই অচেনা সুন্দরী কন্ঠটাই এক সময় দিবারাত্রির কাব্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল কৌশিকের কাছে। নির্বাক কাঁচের জানালাটার পেটের ভিতর ঢুকলে মনে পরে যায় কৌশিকের, ফাইনাল সেম এর আগের সেই রাতে হঠাৎ ফোনে ঝগড়ার কথা, মেয়েটির নিজের আরেক বান্ধবীকে দিয়ে ওর সাথে হানি ট্র্যাপে কথা বলিয়ে, রিলেশনের অনেস্টি টেস্টে ওকে জোর করে ফেল করিয়ে ‘ব্রেক আপ’ করে নেবার কথা। সেই রাতের পর থেকে ওপারের যতিহীন নিস্তব্ধতা ঢেকে ফেলেছিল কৌশিকের সব ঋতুর উৎসবময় জীবন। শুক্লাদ্বাদশীর চাঁদের তখন ভরা মাস, মিহি উড়ছে আষাঢ়-শ্রাবণ। একটা প্রতীকী প্রেম বা ফোনালাপ ভেঙে গিয়েছিল মুহূর্তেই। নিজের ফেসবুক প্রোফাইলটা ডিলিট করে দিয়েছিল কৌশিক। পরাবাস্তবে কি না হয়! স্বপ্নদোষ লেগে থাকে ভাঁটায়, নদীর বুকে। আজ এইক্ষণে মনে পরে যায় কৌশিকের কিবোর্ডের ব্যাক স্পেসে লাথি খেয়ে ফিরে যাওয়া নির্বিকার নির্বাক দৃশ্যগুলো। এ ঘটনার অনেক দিন পর, আবার কোন এক নির্লজ্জ রাতে কোন এক আননোন নম্বরে লেগেছিল মেয়েটির অ্যালিবাই মাখা কণ্ঠস্বর। ফোনটা কেটে দিয়েছিল কৌশিক। চোখ বুজে এসে ওর রন্ধ্রে রন্ধ্রে ফুটে উঠেছিল ইতর শোক। ফেসবুকে একটা ফেক প্রোফাইল খুলে মেয়েটির প্রোফাইলে চোখ রেখেছিল ও। মেয়েটি তখন মধ্য কলকাতার একটি নামজাদা কলেজে পড়ে। তখনও তার প্রোফাইল পিক নেই। খোঁজ নিয়ে জেনেছিল কৌশিক, বাক্যব্যঞ্জনার এঁটো কলম আর প্রবন্ধকালীন ভাব মানসে ভর দিয়ে যে মানবীকে নিয়ে সে কবিতা লিখেছিল একদিন, নিদ্রাহীন শর্বরীর সেই আস্তীর্ণ কঞ্জমটি আসলে রিয়েল লাইফে একটি এসকর্ট সার্ভিসের সাথে যুক্ত। শেষ রাতের ছদ্ম কলহের কারণটা মুহূর্তে পরিস্কার হয়ে গেছিল ওর কাছে। এই এককেন্দ্রিক তিলোত্তমার সম্পূর্ণ উল্টোপিঠে তখন সে একা দাঁড়িয়ে। ঠিক যেখান থেকে এসে নমিতা ওর হাত ধরেছিল। সেও ছিল কোন এক পঞ্চমুখী ভোরের সকাল। আক্ষরিক অর্থে সেই মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী ছিল সেই ভোরের গা ঘেঁটে খাবলে তুলে ফেলা কিছুটা অমনোযোগী সূর্য্যশোক। নমিতার সাথে ওর যেটা ছিল তাকে গোদা বাংলায় বলে ‘প্লেটোনিক লাভ’। প্রপোজ করার কয়েকদিনের মধ্যেই মোটা নমিতা পিএইচডি করতে চলে গেলো নর্থ ইস্টে। প্রেমের রং তখন গাঢ় কৌশিকের যুবক জীবনে। কিশলয় সুখের সময় পেরিয়ে নদীর পারে নেড়া গাছতলায় লোকচক্ষুর আড়ালে কমলা রঙের রোদটাতে, নমিতার দুটো জরিপ করা ঠোঁটের ভেতর থেকে কস্তুরী গন্ধের স্যালাইভাকে ও টেনে বার করে এনেছিল যেদিন, ক্ষিতি-মরুৎ-ব্যোম তখন শুধু হাসছে। মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেলো কয়েকটা সাদা রঙের পাখি, বোধহয় বালিহাঁস। কয়েকটা মৃত ফড়িং কিংবা প্রজাপতির দল বাতাসে মিশে মিশে গেলো। রাগী, জেদি, একগুঁয়ে সব আলোর তো আর রোদ হয়ে ওঠা হয় না, হওয়ার ইচ্ছেটা থাকা চাই। ওই ইচ্ছেটাকে বুকে করেই ওদের চারপাশটা দপ করে জ্বলে উঠেছিল সেদিন। সেই মুহূর্তটার যেন একটা অচেনা গন্ধ ছিল। যেমন ছিল সেই ফোনালাপের রাতগুলোর। বিয়ের পর গন্ধটা কৌশিক প্রায়ই পেত। নতুন ঘর, নতুন বিছানা সুলগ্নার সাথেই চেনা হতে থাকলো ক্রমশঃ। কিন্তু নমিতার নিজের জীবনের কাছে প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশী। যদিও সম্পর্কটায় নমিতাই এগিয়ে এসেছিল, তবু শেষ পর্যন্ত্য এস্টাব্লিশমেন্টের ব্যাপারে ও হয়তো ওর বাবা মায়ের পছন্দের বাইরে যেতে চায়নি। ত্রিযামার অন্তরীপে যে নারীমনে আটকা পরেছিল কৌশিক, বিচ্ছেদের পর অবচেতনে তাকে পাওয়ার আকাঙ্খাই যেন তীব্রতর হয়ে উঠলো কৌশিকের কাছে। নমিতা কি আদৌ ওকে কোনদিন ভালোবেসেছিল? একসাথে থাকতে, খুব করে ওদের বাড়িতে আসতে বলতো নমিতা। ‘নদীটার শেষের দিকে, তার আকাঙ্খা, তার ভয়-ক্রোধ-সমবেদনা-কল্পনা সব কিছু মিলেই যেন ওদের বাড়িটা তৈরী’, এমনটা ভাবত কৌশিক। আশপাশ থেকে একটা হারমোনিয়ামের সুর ভেসে এসে তাল কাটতো ওর ভাবনায়। ঠিক যেমন সেই নারীকণ্ঠ ওকে বলতো, ওদের বাড়ির ঠিক পাশেই একটা চাঁপা গাছের স্বেদ বরাবর ওঠাপড়ার খেলায় মেতে থাকা একদল পিঁপড়ের কথা। সূর্য্যের অতিবেগুনী রশ্মি হয়তো তখনও কুয়াশার সর সরিয়ে এসে স্পর্শ করেনি, নির্বিবাদে মরার মত পড়ে থাকা গাছটার জননাঙ্গকে।

সুলগ্নার দায়বদ্ধতা নিয়ে আজ কৌশিকের মনে বড় প্রশ্ন জাগে। চুনসুড়কি খসে পড়া রাতে ধীরগতির ইন্টারনেটের মত কচ্ছপের গতিতে ধূলিকণা উড়ে বেড়ায় ওর চারপাশে। সেই স্নায়ু শাসনের দরজা ঠেলে রাতের জটিল বর্গক্ষেত্রের মধ্যে বাহকহীন পালকিতে দোল খেতে খেতে আজকাল একটা স্বপ্ন প্রায়ই দেখে কৌশিক, একটি মেয়েলী সেলুনে বসে কোন এক অচেনা পৃথুলা মহিলা তার স্পা-শ্যাম্পু-মেনিকিওর-পেডিকিওর শেষ হয়ে যাবার পর উঠে যাবার সময়, কৌশিককে একটা টোকা মেরে জিজ্ঞেস করেন, "আপনার হয়ে গেছে? আমরা এবার বন্ধ করবো!" মুহূর্তে কৌশিকের চোখে ভেসে ওঠে শিয়ালদাহ গুরুদাস কলেজ থেকে একা গেট এর ক্লাস করে ফেরার সময় ফোনে নমিতার সঙ্গে কাটানো একটা নিশ্চিত ক্ষুধার রাত, গভীর ভাস্কর্য্য তার গোটা শরীর জুড়ে কিংবা চিৎপুর রোড ধরে গরানহাটা থেকে চিৎপুর ক্রসিং অবধি সুলগ্নার হাত ধরে হেঁটে পার করা জীবনবহুল রাস্তাটার কথা। সুলগ্নাকে কি ভুলতে পারবে মুহূর্তরা? কিংবা সুলগ্না কি ভুলতে পারবে কৌশিকের চারিপাশের মানুষজনকে? যে লোকটা ওদের বাড়ি দুধ দিত কিংবা যে লোকটা দীপাবলিতে ওদের বাড়িময় লাইট খাটাতে হাতে হাতে হেল্প করত, এদের কারোর গাফিলতিও কি ওকে আর ভাবাবে না? অনেকক্ষণ ধরে মন দিয়ে দেখার চেষ্টা করলেও না? এই বাড়িটার বন্ধ জানালা, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গাছের পাতা, হারমোনিয়ামের সুর, গলিটার কয়েকটা ল্যাম্পপোস্টের আলো এদের কাউকেই কি ও আর মনে রাখবেনা কখনো? নমিতা যাবার আগে বলে গিয়েছিল, "আমি তো দেখতে পাচ্ছি এই মোটা হাতির মত চেহারা নিয়ে তোর পাশে আমি ফিট করছিনা একেবারেই। একটা ছোট্টোখাট্টো লক্ষ্মী ঠাকুরের মত চেহারার মেয়ে তোদের সারা বাড়িতে ঘুরঘুর করছে আমি দেখতে পাচ্ছি রে। এরপর থেকে ফোনে হয়তো আমাদের আর কথা হবে না কিন্তু তুই আমার কথা ঠিক শুনতে পাবি। কখন কি করতে হবে আমি ঠিক তোর কানে কানে বলে দিয়ে যাবো।"

"আমার মেয়েকে তুমি আর ফোন করবেনা সাবধান করে দিলাম", সেদিনের নমিতার মায়ের এই আর্তনাদি স্বরের পর থেকে গলাটেপা মধ্যরাতগুলোতে নমিতা এসেছে কৌশিকের অবচেতনে বহুবার, কানের কাছে নির্দোষ বিষের মত বেজে গিয়েছে নমিতার তেজী কণ্ঠস্বর, আর প্রতিবারই হুঁশ ফিরে কৌশিক দেখেছে নমিতা ওকে পোক করার চেষ্টা করছে ভার্চুয়াল মিডিয়ামে। কখনো ফোন ম্যাসেজও করেছে। এমনকি যখন কৌশিক চাকরীর জন্য দিশেহারা, ওর দিবারাত্র ক্রমশঃ ঢেকে যাচ্ছে এক অন্ধকার প্রতিবন্ধী যাপনে, তখন সারেঙ্গীটার সপ্তম সুরের কম্পাঙ্কে ওর কানের কাছে ভেসে এসেছে প্রায় নিঃশব্দ ফিসফিস, "২৬ বছর বয়স হয়ে গেলো শিগগির কিছু একটা কর কৌশিক! বয়স বেরিয়ে যাচ্ছে, সফটওয়্যার এ সুইচ কর! এরপর ওখানেও দেরী হয়ে যাবে।" মনের দরজা খুলে যেন অমলতাসের ছায়া পেয়েছে কৌশিক, ওর দাড়ি কমা ভেসে গেছে উপসংহারের নীচে।

কদিন ধরে একটা অচেনা মেয়ের প্রোফাইলের আবির্ভাব হয়েছে কৌশিকের আপেক্ষিক দুনিয়ার বন্ধুবৃত্তে। গতকাল বিকেলে সুলগ্না ডিভোর্স পেপারে সই করে পাঠিয়ে দিয়েছে অথচ রাত্রে আবার কৌশিকের হোয়াটসঅ্যাপের স্ট্যাটাস দেখেছে। আজ সকালে সেই অচেনা মেয়ের প্রফাইলটি লিখেছে, "লাভ ইউ ফরএভার গুলু! ভালোবাসা ছিল আছে থাকবে", হাজতবাসের রোজনামচায় অকৃপণ ঘুমঘোরে চমকে উঠেছে কৌশিক। এই নামে তো আদুরে বেড়াল গলায় সুলগ্না ওকে ডাকতো!

নদীর পারে শব্দহীন, ক্লান্তিহীন ভাবে পৃথুলা মেয়েটির মুখের দিকে চেয়ে থাকে কৌশিক। অবয়বটার নরুন চেরা দুটো চোখ বেয়ে নমিতা নেমে আসে কখনও। আকাশের রং পাল্টায়, মুখোশহীন পৃথিবীটাকে বুকে করে ন্যাড়া গাছটা থেকে কাঁঠালিচাঁপার গন্ধ ভেসে আসে। চোখ জোড়া গোল পটল চেরা হয়ে ওঠে আস্তে আস্তে। টিয়াপাখির ঠোঁটের মত নাক, জন্মদাগ বয়ে চলা চেরা ঠোঁটে সেটা ক্রমশঃ সুলগ্নাকে এঁকে ফেলে পারিপার্শ্বিকের ক্যানভাসের গায়ে। তারপর সেটা বগলে করে নিয়ে একটা বড় নৌকার পেটের ভেতর ঢুকে পরে ইতিহাস আর টাকডুমাডুমের ধুলোকে জড়িয়ে ধরে। যেন এই নদীটার গতিপথ জোর করে ঘুরিয়ে দিতে চাইলে, ও একটা কাগের ডিম বগের ডিম মার্কা ডিমভাত খেতে খেতে ঘুমিয়ে পড়ার আগে একটা জোরদার প্রতিশোধ নেবে। পৃথিবীর তিনভাগ ঘুম আর একভাগ আলস্য। এই ঘুমিয়ে পরার মুহূর্তটায় নদীর বিকলাঙ্গ শরীরে আত্মার রজঃ সঞ্চার হয়। পরিচিত নারী স্বরেরা ভেসে আসে ক্রমশঃ। ছাতের টবে তখন সবে ব্রম্ভকমল ফুটছে। কার হাতে সে ভালোবাসা পাবে আর কার থেকে ফিরে পাবে অবহেলা, এটা ভাবতে ভাবতে সে ঝরে যাবে আগামী কাল ভোরে। মূক অথচ একটা চেতনাময় চলাফেরার মধ্য দিয়ে।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন