কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / তৃতীয় সংখ্যা / ১২৩

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / তৃতীয় সংখ্যা / ১২৩

শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

কাজল সেন

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৮


স্বপ্ন

তারাপদ হাজরা সেই কাঁচা বয়সে ওয়েল্ডিঙয়ের কাজ শিখে সারাটা জীবন ওয়েল্ডারের চাকরি করেই কাটিয়ে দিল। অথচ চাকরিতে তার বিশেষ মন ছিল না। সে ব্যবসার কথা ভাবত। যে কাজ সে জানে সেই কাজের যদি একটা দোকান খুলে ব্যবসায় নামা যায়, তাহলে তার উপার্জন যাবে অনেকগুণ বেড়ে। সে তখন মালিক হয়ে বসবে সেই ওয়েল্ডিংশপে। কয়েকজন কাজ জানা ছোকরাকে মায়নে দিয়ে রাখবে তার অধীনে। নিজে তখন আর বিশেষ কাজ করবে না, বরং বিভিন্ন ছোটবড় কোম্পানিতে ঘুরে ঘুরে কাজের অর্ডার নিয়ে আসবে।

যেদিন থেকে শম্পার সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে, সেদিন থেকেই শম্পা জেনেছে, তার বর বেশিদিন আর চাকরি করবে না, সারাটা দিন খেটে সামান্য কিছু টাকা মায়নের জন্য জীবনপাত করবে না। বরং নিজে সুখে থাকার জন্য, শম্পাকে সুখে রাখার জন্য খুব শিগগিরি ব্যবসায় নামবে। তারাপদর স্বপ্নের কথা জেনে শম্পা একদিকে যেমন খুশি হয়েছিল, তেমনি উত্তেজিতও হয়ে পড়েছিল। কিন্তু তারপরই তার মনে সংশয় জেগেছিল, তারাপদকে প্রশ্ন করেছিল, ব্যবসা করবে তো বলছ, কিন্তু ব্যবসা করতে হলে কত টাকার দরকার, তা ভেবে দেখেছ? তারাপদ তার বৌয়ের নির্বুদ্ধিতায় হেসে বলেছিল, সে কী আমি ভাবিনি নাকি? খুব ভেবেছি। আর সেজন্য টাকা সঞ্চয়ও করছি। তারাপদর কথায় শম্পা আশ্বস্ত হয়েছিল। যাক, তাহলে মানুষটার বিচার-বিবেচনা আছে, নিজের ভবিষ্যত গুছিয়ে নেবার মতো বুদ্ধিও যথেষ্ট আছে। কিন্তু সেইসঙ্গে তার মনে অন্য ভাবনাও এলো, যে ব্যবসাটা করবে বলে ঠিক করেছে তারাপদ, তা শুরু করতে কতটাকা দরকার! আর এখনও পর্যন্ত মোট কতটাকা সঞ্চয় সে করেছে! মনের মধ্যে ভাবনাটা সেদিন খুব বেশি ছটপট করতে শুরু করলে, প্রথমরাতে বাচ্চাটাকে ঘুম পাড়িয়ে মধ্যরাতে তারাপদর শরীরে নিজের শরীর পিষে ফেলতে ফেলতে হুট করে প্রশ্নটা করে বসেছিল, আচ্ছা, তুমি এখনও পর্যন্ত কতটাকা জমিয়েছ? জমানো টাকা কোথায় লুকিয়ে রেখেছ? ইচ্ছে করলে তুমি আমার কাছে টাকাটা রাখতে পারো। আমি সাবধানে রাখব। তারাপদ বৌকে হতাশ না করে শান্তস্বরে বলেছে, তুমি চিন্তা কোরো না শম্পা, আর কিছুদিনের মধ্যে ব্যবসা শুরু করলে তুমি সব কিছুই জানতে পারবে।

কিন্তু দিন গেল মাস গেল বছর গেল, বাচ্চা বড় হলো, শম্পা প্রবীণ হলো, তারাপদর মাথায় টাক পড়ল, কিন্তু সেই জমানো টাকার কোনো হদিশ যেমন শম্পা পেল না, তেমনি ব্যবসা শুরু করারও কোনো উদ্যোগ-আয়োজন দেখতে পেল না। জিজ্ঞেস করলে তারাপদ একই কথা বলে, আর বেশি দেরি নেই, এখনও আরও কিছু টাকার দরকার, না হলে ব্যবসাটা ঠিকমতো শুরু করা যাবে না।

শম্পা সারাটা বাড়ি আতিপাতি খুঁজেছে। ব্যাংকের কোনো পাসবই পায়নি। মানে ব্যাংকে টাকা রাখেনি। আবার ঘরের আলমারিতেও রাখেনি। অথচ তারাপদ মিথ্যেকথা বলার মানুষও নয়। শম্পার খুব অভিমান হয়। নিজের স্ত্রীকে কি তাহলে বিশ্বাস করে না তারাপদ? আর ঠিক এই পরিস্থিতিতে সেদিন দুঃসংবাদটা এলো। দুর্ঘটনায় তারাপদ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এখন কোমায় আছে।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন