কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / প্রথম সংখ্যা / ১২৮

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / প্রথম সংখ্যা / ১২৮

শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

অভিজিৎ মিত্র

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৮


ভূত

ঠিক বকুলতলার পরেই রাস্তাটা যেখানে পোস্টের আলো ঢেকে বাঁদিকে ঘুরে গেছে, রিমঝিম সেখান দিয়ে পা চালিয়ে হনহন করে আসছিল। এখানে আলো এত কম যে পরের প্রায় ৫০ মিটার ঠাহর করে চলতে হয়। আবছা ছায়া দেখা যায়, মানুষ বোঝা যায় না। একদিকে জুট মিলের টানা পাঁচিল, অন্যদিকে পানা ঢাকা পুকুরের দুর্গন্ধ। ছোটবেলা থেকে এই তিরিশ বছর বয়স অবধি ছবিটা রিমঝিম বদলাতে দেখল না। কবে যে পুরসভা এই রাস্তাটা আলোকিত করবে কে জানে!

কয়েকজন পুকুর পাড়ে বিড়ি খেতে খেতে পেচ্ছাপ করছে। অ্যাজ ইউজুয়াল। রোজকার ছবি। রিমঝিম আরো জোরে পা চালাল। আজ এত দেরি হয়ে যাবে সে ভাবতে পারেনি। হোটেলের কাজ সেরে রোজ রাত ন'টার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসে, আজ এক পুরনো বন্ধুর সঙ্গে গল্প করতে গিয়ে আর হাউজকিপিং সেকশনকে নির্দেশ দিতে দিতে এত দেরি হল, এখন রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। বাবা নিশ্চয়ই বাড়িতে না খেয়ে বসে আছে। মা চলে যাবার পর থেকে ওর বাবা রিমঝিম না ফিরলে রাত্রে একা খায় না।

এমনিতে রিমঝিম এই রাস্তা দিয়ে এর আগে এর থেকেও অনেক বেশি রাত্রে ফিরেছে, মাঝে মাঝে জুট মিলের শ্রমিকদের বসে আড্ডা মারতেও দেখে, কিন্তু আজ গাটা একটু ছমছম করছে। অবশ্য কয়েক মিনিট, কারণ একটু দূরেই আবার আলো ফুটে উঠছে। যাক। কিন্তু ওই আলো থেকে চারটে ছায়া, কাঁপা, টলমল পায়ে, অন্ধকারে আস্তে আস্তে। ছায়া দীর্ঘ হচ্ছে।

রিমঝিম একবার পেছনে তাকাল। যারা পুকুর পাড়ে পেচ্ছাপ করছিল, তাদের আর দেখা নেই। হয়ত চলে গেছে।

চারটে ছায়া ওর পায়ের কাছে অন্ধকার ছুঁলো। রিমঝিমের হাত একটু যেন কেঁপে উঠল। আজ পেপার স্প্রে-টা ও ভুল করে অফিসে ফেলে চলে এসেছে। এইসময় প্রার্থনা ছাড়া ওর আর কিছুই করার নেই। ভগবান, ওই চারটে ছায়া যেন ভূতের হয়, চারটে মাতালের যেন না হয়...


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন