কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৩ |
পেটখারাপ মনখারাপ
বেশ ভালোই ব্যাটিং করছিল ধৃতিমান। ব্যাটিং অর্ডারে যখন দুটো উইকেট পড়ে যাবার পর চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছিল ধৃতিমান, তখন দল বেশ বেকায়দায় ছিল। একে তো দু’ দুটো উইকেট হারিয়েছে, এদিকে স্কোরবোর্ডে রানের অঙ্ক একেবারেই সুবিধের নয়। আবার অন্যদিকে কুড়ি ওভারের খেলায় ইতিমধ্যেই সাতওভার খেলা হয়ে গেছে। এখন দলের মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান ধৃতিমানের ওপর দলের একমাত্র ভরসা। কেননা পাঁচ ও ছ’ নম্বরে যে দুজনের নামার কথা, তারা ভালো ব্যাটসম্যান হলেও একজন গতকাল থেকে ভুগছে পেটের গন্ডগোলে, আর দ্বিতীয়জন ভুগছে মনের গন্ডগোলে। আসলে গতকালই দ্বিতীয়জনের ফিঁয়াসে তাকে জানিয়েছে, মা-বাবা তার বিয়ে এক ডাক্তারের সঙ্গে প্রায় পাকা করে ফেলেছে। তাই যদি তারা অবিলম্বে না পালায়, তাহলে চিরদিনের জন্য সে তার ফিঁয়াসেকে হারাবে। খুব স্বাভাবিক, এরকম মানসিক টানাপড়েনে ব্যাটিংএ মনোসংযোগ করা কঠিন।
খেলার আগে পেটখারাপ এবং মনখারাপ দুজনেই ধৃতিমানকে পাকড়ে তাদের কষ্টের কথা জানিয়েছিল। তারা ধৃতিমানকে বলেছিল, তাকে বাকি তেরো ওভার উইকেটে থাকতেই হবে এবং যথেচ্ছ পিটিয়ে রান তুলতে হবে। দলের ক্যাপ্টেন সমস্যাটা জানতে পেরে ছুটে এসেছিল ধৃতিমানের কাছে। তার দু’হাত আঁকড়ে ধরে অনুনয় বিনয় করে বলেছিল, ধৃতিমান আজ তোকেই বাঁচাতে হবে দলের সম্মান। যেমন করে হোক ন’দশ এভারেজ রান তুলতেই হবে। ফিল্ডিংএর সময় বাকিটা আমি বুঝে নেব। দুজন পেস-বোলার আছে আমাদের দলে, সিধু আর কানু। দুজন স্পিনারও আছে কমল আর রমল। যদি ফিল্ডিংটা টাইট করা যায়, তাহলে আমরা হাসতে হাসতে জিতে যাব। তার আগে তোকে তোর কাজটা করতে হবে। তোর নিশ্চয়ই জানা আছে, ইনিংস ওপেন করতে নেমে শ্রীকান্ত অথবা সেহবাগ কেমন বেপরোয়া ব্যাট চালাত। বল মেরে ছাতু করে দিত। আজ তোকেও তাই করতে হবে ধৃতিমান। কেননা আমি পেটখারাপ ও মনখারাপ, তারা যত ভালোই ব্যাটসম্যান হোক না কেন, আজ দলকে নির্ঘাত ডোবাবে। অগত্যা ধৃতিমানকে আশ্বাস দিতেই হলো, তুই চিন্তা করিস না ক্যাপ্টেন। আমি লড়ে যাব।
তা ভালোই লড়াই করছিল ধৃতিমান। ডিফেন্সিভ এবং অফেন্সিভ, দুটোতেই সমান দক্ষতা তার। খুব বেশি মারমুখি না হয়েও প্রতিটি বলেই এক দুই করে রান তুলে নিচ্ছিল। এদিকে আর একটা উইকেট পড়ে গেল। পাঁচ নম্বরে খেলতে নামল পেটখারাপ। তাকে দেখে রীতিমতো কষ্ট হচ্ছিল ধৃতিমানের। বেচারা পাতলা পটি করে করে খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে। ধৃতিমানের ভয় হলো, ব্যাটিং করতে করতে মাঠেই না পটি করে ফেলে! অগত্যা তাকে তাড়াতাড়ি রানআউট করিয়ে প্যাভিলিয়নে পাঠিয়ে দিল। এবার ছ’নম্বরে নামল মনখারাপ। সত্যিই ফিঁয়াসেকে হারানোর দুশ্চিন্তায় একেবারে পাগলা হয়ে গেছে ছেলেটা। ধৃতিমান বুঝল, এই পাগলামিটা কাজে লাগাতে হবে। পর পর দুটো বলে ধৃতিমান ক্রিজ ছেড়ে এগিয়ে এসে বিশাল ওভার বাউন্ডারি হাঁকালো। এবার স্ট্রাইকারে মনখারাপ। ধৃতিমান মনখারাপকে কাছে ডাকল। বলল, দেখ, তোর হাতে ব্যাট। আর মনে কর বলটা তোর ফিঁয়াসের ডাক্তার বর। বলটাকে পেঁদিয়ে ফাটিয়ে দে তুই আজ!
সরস ঝুরো
উত্তরমুছুন