কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৩ |
আমি মাধুরী দীক্ষিতের
বাড়ির চাকর হতে চাই
রাজভবনের উল্টোদিক দিয়ে ট্রামলাইন ধরে যেতে গিয়ে রাজা হোঁচট খেল। এখানে এমনভাবে ট্রামলাইন পাতা যে এবড়ো-খেবড়ো ইঁট যে কোন কাউকে একবার না একবার ধাক্কা মারবেই। নিচু হয়ে রাজা দেখতে পেল জুতোর শুকতলা একটু ফেটেছে। জুতো পরীক্ষা করার জন্য নিচু হতেই সামনে চোখ গেল। এক স্লিম তরুণীও একটু দূরে স্লিপ কেটে পড়তে পড়তে বাঁচল। আলুথালু। বুক থেকে ওড়না খসে গেছে। পাশের ব্যাগ নিচে পড়ব পড়ব করছে। ফর্সা বুকের খাঁজে স্পষ্ট তিল। অপূর্ব! রু রু রু রু রু... রু রু রু রু রু। ‘দিল তো পাগল হ্যায়’। রাজা মুচকি হেসে ফেলল। ওকে আড়চোখে দেখতে পেয়েছে তরুণীও। তারপর ওড়না গুছিয়ে আবার হাঁটা লাগাল।
‘সো গয়া য়ে জাঁহা, সো গয়া আসমা... সো গয়ি, হ্যায় সারি মঞ্জিলে... সো গয়া হ্যায় রাস্তা’ রাজার বুকের মোবাইলটা বেজে উঠল। বিশু।
‘কী
বলছিস?’
‘কোথায়
বস্? বার? নাকি কোন প্রেমিকা জুটিয়ে মোহনবাগান মাঠ?’
রাজার
মুখে একটা খিস্তি উঠে এসেছিল। কোনমতে আটকাল।
‘কী
ভাবিস রে আমাকে? পেট চালানোর দায় নেই? একটা অর্ডার সাপ্লাই দিতে চলেছি’।
‘ওকে
ওকে। রাত্রে কথা হবে। ক্লাবে আসবি?’
‘দেখি’।
রাজা ব্যাগপত্র তুলে এদিক ওদিক তাকাল। খানিক দূরে একটা মুচি দেখা যাচ্ছে। দুবার ঘাড় ঘুরিয়ে সেই তরুণীকে দেখার চেষ্টা করল। ভোঁ ভাঁ। ভ্যানিশ্।
মুচি এক কমবয়সি ছোকরা। ওর বাক্সে পা তুলে দাঁড়ানোর সময় খেয়াল করল বাক্সে মাধুরী দীক্ষিতের ছবি। সেই হাসিমুখ। ‘সাজন’।
মুচি
মোবাইলে ওর এক বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছে। কোথাও ফাংশন দেখতে যাবে, সেই নিয়ে।
‘দে
বাপ, আমার জুতোটা একটু তাড়াতাড়ি ঠিক করে দে! তারপর কথা বলবি’।
‘থোড়া
সবুর কর বাবু... ‘এক দো তিন, চার পাঁচ ছে...’
রাজা
হেসে ফেলল, ওর কথা বলার ধরনে।
ট্রিং ট্রিং ট্রিং ট্রিং... ট্রাম এগিয়ে আসছে। বৌবাজারের। ফাঁকা ট্রাম। ট্রাম দেখলেই রাজার মনে পড়ে মাধ্যমিকের পরে একবার মাধুরী দীক্ষিতের বাড়ি যাবে বলে ভুল করে শ্যামবাজারের ট্রামে চেপে বসেছিল। সেখানে গিয়ে অচেনা রাস্তা দেখে খানিক দমে গেছিল। অবশ্য রাস্তায় মাধুরীর মালা পরানো বিশাল কাট-আউট দেখে আবার মন ভাল হয়ে গেছিল। সেদিন কিন্তু রাস্তার কেউ মাধুরীর বাড়ির ঠিকানা বলতে পারেনি।
হাতল ধরে রাজা উঠে পড়ল। ওর ব্যাগভর্তি রূপোর গয়না। আজ দোকানে সাপ্লাই দিতেই হবে। এখনো অনেকটা রাস্তা।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন