কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২১

অমলেন্দু চক্রবর্ত্তী

 

সমকালীন ছোটগল্প


 ০ = খেলাহ্ হবেক আঁইজ্ঞা = ০


এ ডুগ ডুগ ডুগ ডুগ ডুগ ডুগ - - দেখোবাবু খেলা দেখো রে, বাঁদর লাচবে ছোকরি লাচবে। পয়সা পড়বে, এ ডুগ ডুগ ডুগ ডুগ। খালি ডুগডুগি কেন? ঢোল্ নয় কেন? ঢোলে কী হল, কী দোষ করল ঢোলুক ট! শীবতান্ডব হব্যেক কি শীব  লাচবেক। নটরাজ স্বয়ং মহেশ্বর। নাকি অপ্সরা লাচবে। অসুর বধ লিত্য হব্যেক। সে তখুন বনবাদাড় ঠিলে বেরাঞ আসছে ধুন্দা্ মাহাতো মনে লাইগতেছিল কালভৈরবের পারা। গুড় গুড় গুড় গুড় ক‍ইরে ধামসা্ মাদৈল বাইজে উঠত ছৌ-এর পারা দুরু দুরু বুকের ভিতর ধামসা মাদৈলের ভয়ানক কম্পন গিড় গিড় গিড় গি্ড়ধা তাং তাং গিড় গিড় গিড় - - পিথিমীট আজৈ শ্যেষ।  

পিথিমটতে যদি বাঁচাতে চাও আমি যেমন যেমন ব‌ইলব সবকে মানতে হব্বেকেই। নাইত পিথিমি শ্যাষ, ব্যাশ। এ্যায় স‌ইত্য মিথ্যা কে দেইখছে বল দেখি! পিথিমিট যেমন গোলকধাঁধা জীবনট‌ও তেমনই গোলকধাঁধা! ভেলকি বঠে? ভেলকি।

খেলাহ্ হব্বেক যি খেলা কুনোদিন কেহু দেখ‌ই নাই, আজি হমে সিই খেলা দিখাবি! চোইখ কাইন খুলা রহিবেক, হাতের মুঠি, হাত দুটিই খুলা রাইখবেন তবে তো খেইলের মজা।

--সকাললে্ ভৌ ভৌ ভঁকছিস খেলা

হব্বেক্ খ্যেপড়া কুথাউ কুছুনাই খেলা! পিথিমি ট তর বাপের যে, তুঁই খেলাবি। রাইখবি ভাঙ্গবি, হঁ তর পারা দুচার ট বরাহ বধ হব্বেক বৈকি।

--অ পিসি ইমন ব‌ইলতে নাই, তুমহার বয়স হয়ৈছে না অংবং বললেই হব্যেক? লাগাম দাও জুবানে। আমি সিদ্ধপুরুষ, নিমন নিমন বল নিমন।

 --সকাললে ভঁকছিস! হঁ হঁ  জানি লে তর সব সিদ্ধ্ আলুপটল, পুরুষ! সিদ্ধপুরুষ! তুঁই খেল্ দেখাবি ন ডাইলগ দিবি।" 

--সার্কাস দেখতে যাও সিনিমা দেখতে যাও চিঁচালেই দেখাঞ দেয় নাকি ইন্তেজার করতি লাগে কিনা? সময় না হলি। ধয্য না থাকলি কি দেখবা ফুফু। মা কামাক্ষার কিরিয়াই সোউব উড়াঞ পুড়াঞ দিবক জানুন।

--তুঁই বেরহা্ তুঁই ইখানলে বেরহা্।"                   

--অ পিসি থাউকগা্ দেখ‌ই না! কি দেখাই।" আবার ডমরু বাজানো শুরু। পিসি সরে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। কাঁথাস্টিজ ব্যাগের ভেতর দুহাত ঢুকিয়ে একহাতে ডমরু অন্য হাতে আড়বাঁশি বাঁশি ধরা হাতের চেটোতে একটি ছোট্ট হাড় তাতে সিন্দুর কাজল ল্যেপা, বাঁশির সুরে হিন্দি গানের সুর ভারি সুন্দর বাজাচ্ছে। সঙ্গে ডমরুর তার। এই মোহন বাঁশিই তো মোহিত্ করে তুলেছে। আর মন্ত্র তন্ত্র কি দরকার! আসলে খেল্ দেখানোর অভিপ্রায়ে যে খেলাটি শুরু করতে চেয়েছিলেন। তিনি সাংসারিক মোহগ্রস্ত! অলক্ষ্যের খেলা বুঝি কতকাল হলো!

খুচরা টাকা যা জুটলো পকেটে, বাদবাকি পোঁটলা পুঁটলিতে ভরে বাঁধাছাঁদা করে। জাদুকর, তাস মার্বেল ফুল পায়রার। খেলা দেখানোর সরঞ্জ গুছিয়ে নিতে  লাগল। মাঝে মাঝে মজার কথা কৌতুক রঙ্গ করে দর্শকের মন জয় করছে হাসির ফোয়ারা। পিসির আর সহ্য হচ্ছে না। রাগের মাথায় কার যেন বালতিতে লাথিয়ে নিজের পাটি ভাঙ্গলেন। এইবার পাড়ার মানুষজন বুঝতে পারলেন, পিসির বয়স হয়েছে। এ পিসি সে পিসি নয়। যে একদিন সংয়সিদ্ধা ছিলেন। নিজে আহত হলেও অনেক জীবন তিনি বাঁচাতে পেরেছিলেন। আজ তিনি নিজেই অন্ধ ভালোবাসায় হারিয়ে গেছেন। জাদূগর বাঁশি বাজিয়ে বাঁশুরিওয়ালার মতো নতুন আলোর দিশা দেখাতে নীল আকাশের নিচে সবুজ নরম মাটির সন্ধানে জল আর জঙ্গলের। চির শরৎ কিম্বা বসন্তের, ধান কিম্বা মান কিম্বা গান।  বৃদ্ধের জন্য যখন সংকীর্ণতা মনে লাগে। অতীতের কথা তখন কাছের মানুষেরা বেশি বেশি করে ভুলে যায়। তাই তাঁদের একান্ত বাসকেই বেছে নেন।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন