কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ১৪ মার্চ, ২০২১

তমাল রায়

 

সমকালীন ছোটগল্প


ফুটপাথ বদল হয় না আর মধ্যরাতে

লোকটা মদ খেত, না'কি মদই লোকটাকে, এ বিষয়ে বিস্তৃত জানা যায় না। তবে অনুমান করা যায়, লোকটির গল্প বলতে পারার এক স্বাভাবিক এলেম ছিলো! যদিও মানুষ তাকে কবি বলেই চিনত। কবিতা আর গল্পে তো মাত্রাজ্ঞানের ফারাক! অবশ্য গল্প বল বা কবিতা, সংখ্যালঘুর চর্চার বিষয়! এই মানুষ কারা, যারা তাকে চিনতো?

শাকবিক্রেতা বউটা? যে ভোরের ফার্স্ট লোকাল ধরে এসে বাজারের বাইরে কালভার্টে বসতো। খোঁড়া চাওলা? লেংচে লেংচে বাজারে আসা যাওয়া মানুষগুলোকে চা দিতো। নিস্তব্ধ পুকুর? যেখানে এখনও ভরদুপুরে চিল এসে মাছে ছোঁ... গলির গলি, তস্য গলি? যেখানে তাড়াখাওয়া ছোকরাগুলোকে টপশটে নিলেই একটা বিপ্লবের সিনেমা!

লোকটা মদ খেতে ভালোবাসতো, না'কি মদই লোকটাকে, জানা যায় না। কারণ শব্দটি 'ভালোবাসা'।  কারণ ভালোবাসার কথা বললেই লোকটা বেসুরো গলায় গেয়ে উঠতো, 'ভালোবাসিলে যদি সে ভালো না বাসে কেন সে দেখা দিল'। 'কে' দেখা দিলো? এ প্রসঙ্গে তদন্তের ফলাফল - লোকটার না'কি সকলকেই কম বেশি ভালো লাগতো। কেবল বুড়োকবি ব্যতীত! অবশ্য প্রাতঃভ্রমণে বের হয়ে সময় কাটাতে, বুড়ো লাগে। বাকি সময় তা লাগবেই কেন? লোকটাকে দেখলে, শুনলে বুড়ো মনেই হত বটে। তবে তার সঠিক বয়স কে জানবে! কেবল দশক ধরেই যা অনুমান!

লোকটার কবিতা লেখার কালি ছিলো মদ! না'কি মদই লোকটাকে লিখতো, সে  কথা বলার সময় এখনও আসেনি। কেবল আছে তো ওই ডাঁটিভাঙা চশমাটা! সেটাই পাওয়া যায়! আর তারপরেই শুরু হয় এইসব গসিপ বা সত্যসন্ধানী আলোচনা! গসিপ থেকে সত্যের দূরত্ব একটা একফালি ক্যাম্পখাট। খাটের নীচ জুড়ে অন্ধকার। খাটের ওপর জুড়ে চড়ুই-এর শূন্য বাসা!

লোকটা আর সব ছাড়তে পারলেও মদ ছাড়তে পারেনি। না'কি মদই লোকটাকে? তবে লোকটার কথা কমে এসেছিলো। কারণ অকারণে হাসত! একপাটি চটি পাবার আগে অবশ্য এসব কথা ঘুণাক্ষরেও কেউ মাথাতেও আনেনি! মানে তাকে নিয়ে তো ভাবারই বা কি আছে!

লোকটা আছে অথবা নেই। মদ আছে অথবা সেও নেই৷ শেষ তাকে দেখেছিলো একটা ভাঙা চাঁদ, আর রাস্তায় পেচ্ছাব করা একটা কুকুর। তখন কবিতা এফএম-এ মধ্যরাতের স্লটে বাজছে,

‘মধু অধরের মধুর হাসি, প্রাণে কেন বরষিল।

দাঁড়িয়ে ছিলেম পথের ধারে, সহসা দেখিলেম তারে

নয়ন দুটি তুলে কেন, মুখের পানে চেয়ে গেল।

লোকটা আছে অথবা নেই! মদ হয়ত রইলো, কবিতা বা গল্পের লাইনে বেলাইনে যেমন লুকিয়ে থাকে। রইলো লোকটার মত্ত আখরমালা! অথবা রইলো না।  স্মরণসভা এরেঞ্জ করা যায়নি, অথবা যাবে! গসিপ তো রইলো, শেষপর্যন্ত সেটুকুই... কবিতা বা গল্প থেকে যেমন কিছুটা দূরে অকারণ দাঁড়িয়ে, দাঁত বার করে হাসে বাংলা বাজার। মদ এক ধ্রুবক! নিত্য। অনিশ্চল। পরম। যেমন আত্মা। মদ এখন আধার খুঁজছে। আর লোকটা?

কে যেন অলক্ষ্য থেকে ছিটিয়ে দিচ্ছে করোটি নিসৃত পিপাসা, সেইসব তৃষ্ণার্ত বন্ধু পরিজনের উদ্দেশ্যে - এ নাও সোমরস! জন্ম হোক কবিতার, আবার! হে আলো না দেখা সন্তান, তুমি জন্ম নাও আবার...

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন