কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৪ |
একটি বাড়ির গল্প
বাড়িতে ৪ খানা চেয়ার, স্বাভাবিকভাবেই ৪ খানা টেবিল থাকার কথা নয়। বাড়ির সদস্য ৬ জন বলে খাবার সময় ৪ জন চেয়ারে বসে জম্পেশ করে খাই। ২ জন পালা করে প্রতিবার খাবারের সময় দাঁড়িয়ে থাকে।
বাড়িতে লম্বা একটা সোফা আছে। ওখানেও পর্যাপ্ত বসার জায়গা নেই, ৩ জন বসে থাকে আর ৩ জন দাঁড়িয়ে। টেলিভিশন আদায়ের জন্য একবার আমরা কয়েকজন আমরণ অনশন শুরু করেছিলাম। আশ্বাস দিয়ে ফলের জুস খাইয়ে অনশন ভঙ্গ করানো হয়েছিল। টেলিভিশনের স্বপ্ন তিমিরেই রয়ে গেছে।
বৃটিশ পার্লামেন্টের মতো আমরা গাদাগাদি করে বসি। আমাদের বাড়ির সংবিধান অলিখিত।একবার আমার জৈষ্ঠ ভ্রাতার সামনে ফুল শার্টের হাতা গুটিয়ে পরার কারণে ও তাঁকে সালাম না দেয়ার কারণে গণরুমে নিয়ে গিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে ‘মুরগি’ বানানো হয়; মানে দুই হাঁটুর নিচ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে কান ধরে থাকতে হয়েছে।
আমাদের
বাড়িতে ৪ টি সংসদীয় উপকমিটি আছে। যথা;
ক.
বাজার বিষয়ক
খ.
পোশাক আশাক বিষয়ক
গ.
পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক
ঘ.
ফেসবুক বিষয়ক
বলাবাহুল্য ফেসবুকীয় বিষয়ক কমিটির প্রধান আমি। আমার মর্যাদা উপমন্ত্রীর সমান। বাড়িতে থাকা অবস্থায় জাতীয় পতাকা ব্যবহার করতে পারব না তবে বাড়ির বাইরে গেলে পারব। একবার ফেসবুকে একটা অশোভন পোস্ট করার পর আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয় ও বিধি জারী করা হয়।
বিধি ১: ফেসবুকে সবসময় শালীন থাকতে হবে।
বিধি ২: ফেসবুক বিষয়ক প্রধানের বয়সসীমা ১৯
এর বেশি হতে পারবে না।
যথারীতি বয়সজনিত কারণে আমি বাতিল বলে ঘোষিত হলাম।
শোনা গেল আমাদের এক সদস্যের কাড়ি কাড়ি টাকা। ভ্রাম্যমান আদালত এই কারণে তাকে তাৎক্ষণিক ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। প্রতিদিনই তিনি জানাচ্ছেন এই টাকার ভাগ প্রতিদিন কাকে কত দিতেন। টের পেলাম আমাদের ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে। হ্যাক করেছে আমাদের বাসারই এক সদস্য। সে এই আইডি থেকে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক কথা ছড়াচ্ছে।
বাড়িতে
দাঙ্গা। চেষ্টা করেও দাঙ্গা দমানো যাচ্ছে না।
বাজার বিষয়ক কমিটি প্রধানের শান শওকত দেখে আমাদের চোখ টাটাচ্ছে। সান্ধ্যকালীন অধিবেশনে তাঁর পেশকৃত ভাউচার দেখে আমাদের হার্টফেল করার দশা। একটা বালিশের দাম ধরা হয়েছে ৮৭ হাজার টাকা ৮৭ পয়সা।
সোফায় বসে আমি তো চুরি ধরে মহা আনন্দে লাফাচ্ছিলাম, তিনি আমাকে তাঁর আই ফোন-১১ আস্তে করে হাতে ধরিয়ে দিলেন। আমি পৃথিবীর সংক্ষিপ্ত সময়ের মাঝে চুপ করে গেলাম।
তো, এই সব নিয়েই আমাদের বাড়ি, বাড়ির রাত দিন অধিবেশন। বাড়িতে
জোছনা নামে আড়ি পেতে, বৃষ্টি নামে, কদম ফুলে ছেয়ে যায় উঠান। স্বপ্ন দেখি আমাদের বাড়ি
থেকে আগামী ১০ বছরের মধ্যে কেউ একজন নোবেল পাবে। বুকার পাবে কোন কেউ। দুর্নীতি ও দারিদ্র্য
যাদুঘরে ঠাঁই পাবে। সবাই টিকেট কেটে দরিদ্রতা ও দুর্নীতি দেখতে যাবে।
কাচের আড়াল থেকে দেখে বলবে: ওমা এই বুঝি দরিদ্রতা! এই বুঝি দুর্নীতি!
বাঃ! ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুন