কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৯

খিওকোন্দা বেলি




প্রতিবেশী সাহিত্য


খিওকোন্দা বেলি’র কবিতা       

(অনুবাদ : জয়া চৌধুরী) 




















পরিচিতি : বিশ্বসাহিত্যে সমসাময়িক কবিদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কবি খিওকোন্দা বেলির ১৯৪৮ সালে নিকারাগুয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়  দেশের বৃহৎ সংবাদপত্র লা প্রেন্সা বা প্রেস পত্রিকায়। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই কবি সে দেশের কুখ্যাত স্বৈরাচারী শাসক আনাস্তাসিও সোমোসা-র বিরুদ্ধে সরাসরি সান্দিনিস্তা বিদ্রোহে যোগ দেন। সে সময় সেটি ঐ দেশে নিষিদ্ধ সংগঠন  ছিল। এই কারণে পাঁচ বছর তিনি (৭৫-৭৯) মেক্সিকোতে নির্বাসনে থাকেন। সিডাকশনের তীর্থযাত্রী বা লা সিদাকসিওন দেল পেরেগ্রিনো উপন্যাসের জন্য তিনি স্পেনের প্লুমা দে প্লাতা পুরস্কার লাভ করেন। বামপন্থী ইরোটিক শ্রেণীর  লিখনের জন্য প্রসিদ্ধ এই কবি বর্তমানে আমেরিকা ও নিকারাগুয়ায় পর্যায়ক্রমে থাকেন। তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ আগুনরেখা বহু প্রশংসিত ও পুরস্কারপ্রাপ্ত।     



Y Dios me hizo mujer (এবং ঈশ্বর আমায় নারী বানিয়েছেন)    

এবং ঈশ্বর আমায় নারী বানিয়েছেন
দীর্ঘ কেশী,
দীঘল চোখ,
স্পষ্ট নাক আর মেয়েলি হাঁমুখ
বাঁক আর
ভাঁজসহ
আর নরম খাতেরা
আমায় ভেতর থেকে খোঁড়ে
তিনি আমায় মানুষ তৈরীর কারখানা করে গড়েছেন
সন্তর্পণে আমার স্নায়ুদের বুনেছেন
আর সাবধানে দোল খাইয়েছেন আমার
হরমোনের সংখ্যাদের।
আমার রক্ত উৎপাদন করেছেন
আমার ভেতরে তা প্রবাহিত করেছেন
যাতে আমার গোটা শরীর
সেচ পায়;
এইভাবে জন্ম নিয়েছিল  ধৃতিরা,
স্বপ্নেরা,
প্রবৃত্তিরাও।
সবকিছু যা তিনি কোমলভাবে বিশ্বাস করেছেন
হাতুড়ির ঘা বসাতে বসাতে
আর তুরপুন ঘুরিয়েছেন,
অমন হাজারটা বিষয় প্রতিদিন যা আমায় নারী করে তোলে
তার জন্য প্রতিদিন সকালে আমি
অহংকার নিয়ে জেগে উঠি আর
আমার যৌনতার মহিমাকীর্তন করি।


আর্জি

আমাকে ভালোবাসার পোশাক পরাও
আমি যে নগ্না;
আমি যে নগরীর মত
-নিরাশ্রয়-
শোরগোলে বধির
পাখির আওয়াজেও কাঁপছি
মার্চের রোদে পোড়া শুকনো পাতা এক।
আমায় উৎসবে ঘিরে রাখো
আমি যে দুঃখী থাকার জন্য জন্মাইনি
দুঃখ আমাকে শিথিল করে দেয়
সেই কাপড়টার মত যা আমার নয়।
আমি নতুন করে জ্বলে উঠতে চাই
চোখের জলে নোনতা স্বাদ ভুলতে চাই
-লিলিফুলের মধ্যে থাকা ছিদ্র,
ব্যালকনিতে থাকা মৃত রাজহংসী-
হাসির ঝাপটায় আমাকে তরতাজা করে তোলো
ভেঙে যাওয়া ঢেউ
আমার শৈশবের যন্ত্রণার ওপরে আছড়ে পড়া সমুদ্র
করতলে থাকা নক্ষত্র,
আয়নার দিকে যাবার পথে থাকা অনন্ত লন্ঠন
যেখানে নিজেই ঘুরে দেখি
গোটা শরীর আমার,
সংরক্ষিত
বাহুর মাঝখানে ধরা,
আলো দিয়ে গড়া,
প্রকৃত আগ্নেয়গিরি আর ঘাস দিয়ে গড়া,
চড়াই পাখি ভরা আমার চুল,
আঙুল ভেঙে পড়ে প্রজাপতির গায়
আমার দাঁতের ফাঁকে জট পাকানো বাতাস,
তাদের শৃঙ্খলায় ফিরে আসতে থাকে
অশ্বমানবের বাসস্থান এই পৃথিবীতে
আমাক ভালবাসার পোশাক পরানোর জন্য
আমি যে নগ্না।


menopausa (ঋতুজরা)


ওকে আমি চিনি না
কিন্তু, এই মুহূর্ত পর্যন্ত,
দুনিয়ার সব নারীরা ওগুলোকে ডিঙ্গিয়েও টিকে গেছে
হতে পারে সেটা বৈরাগ্যের জন্য
কিংবা হয়তো কেউ তখনো তাদের অভিযোগ জানানোর
অধিকার রাখার দেয় নি স্বীকৃতি
এই যে আমাদের দিদিমারা
তখন বার্ধক্যে এসে পৌঁছত
শরীরের ক্ষয়দশা অথচ আত্মায় সবল।
বদলে
এখন তারা চুক্তি লেখে
আর, ত্রিশ বছর বয়স থেকে,
শুরু হয় তকলিফ,
বিপর্যয়ের পূর্বলক্ষণ।

শরীর হরমোনের চেয়ে আরো অনেক বেশি কিছু।
ঋতুজরা হোক না হোক,
একজন নারী নারীই থেকে যেতে থাকে;
মেজাজ মর্জি
কিংবা ডিম্বকোষের কারখানার চেয়ে বেশি কিছু
নিয়ম হারিয়ে ফেলা বা কোন দেহ-মিতি হারিয়ে ফেলা নয় সে,
শক্তি হারিয়ে ফেলাও নয়; এটা
শঙ্খের ভেতরে যে চারকোল থাকে
তাকে নিহত করে ফেলা নয়
আবার মরতে শুরু করাও নয়।
যদি মনে হতাশা আসে,
তবুও নতুন কিছুই হবে না তাহলে,
রজঃস্রাবের প্রতিটি শোণিত বিন্দু দুঃখ বয়ে এনেছে
আর এনেছে তার ক্রোধের অলৌকিক ডোজ।
নিজেকে মূল্যহীন ভাবার
আর অন্য কোন কারণ নেই।
নারী ছুঁড়ে ফেলে দেবে, ঐসব তুলোর প্যাডগুলোকে
ঐসব স্যানিটারি ন্যাকড়াগুলোকে।
তোমার বাড়ির উঠোনে সবগুলোকে নিয়ে একটা বহ্ন্যুৎসব করো।
নিজেকে অনাবৃত করো নারী।
পরিপক্ক হবার আনুষ্ঠানিক নাচ নাচো দেখি
আর টিকে থেকে যাও
সব উত্তর জীবিতেরা যেমন থাকে।   








  


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন