কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৯

সিদ্ধার্থ সিংহ




বিয়েবাড়ি 

বিয়েবাড়িটা মাতিয়ে রেখেছিল সে। 
ভীষণ ছটফটে, মিশুকে
কিছুক্ষণের মধ্যেই জেনে নিলাম তার বাড়ি, স্কুল
গানের স্কুল, এমনকী কোথায় টিউশনি নেয়, তাও।
ক্লাস নাইনে পড়ে
দল বেঁধে বেঁধে সব মেয়েরা চলে যাচ্ছে, সে কোথায়! 
উলটো ফুটে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম
বন্ধ হয়ে গেল স্কুলের ফটক। 
আধ ঘণ্টা আগেই বাণীচক্রের সামনে আমি হাজির
রবিবার ওর গানের ক্লাস
কিন্তু তিনটে তো বেজে গেছে
তবে কি ওর কোনও অসুখ-বিসুখ হল! 
যেখানে ও টিউশনি নেয়
সেই গলির মুখে ঘোরাঘুরি করলাম ক'টা দিন
এত অন্ধকার কিচ্ছু দেখা গেল না।
ওর হাতে তো একটা মোবাইল ছিল! 
ওহোঃ, কেন যে নম্বরটা নিলাম না
না-হয় একটু হ্যাংলাই ভাবত!
'দিন পরে আবার একটা বিয়ে
এবং সেখানেও যথারীতি সে। 
প্রথমেই বললাম, আগে আপনার নম্বরটা দিন তো...
উত্তাল ঢেউ শান্ত হয়ে গেল। মৃদুস্বরে বলল---
বিয়েবাড়ি ছাড়া আপনি বুঝি আমাকে চিনতে পারেন না, না?

ভাগ্যিস 

বউ ছেলে নাতি-নাতনি নিয়ে দারুণ আছি
সব থেকে উঁচু বাড়িতে
নিরাপদে।
ভাগ্যিস সে দিন ঠিক সময়ে
মিছিল থেকে কেটে পড়েছিলাম, নইলে...
এখন শহিদ বেদিতে পুষ্পস্তবক দিই
সে দিন মিছিলে যারা গুলি খেয়েছিল
মুখ থুবড়ে পড়েছিল রাস্তায়
তাদের মুখ মনেও পড়ে না, 
তবু বানিয়ে বানিয়ে বলি---
কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা কী কী করেছিলাম।
বউ ছেলে নাতি-নাতনি নিয়ে দারুণ আছি
শহরের সব থেকে উঁচু তলায়
নিরাপদে।
আমার গাড়ির সামনে এখন
হুটার বাজিয়ে ছুটে যায়
এস্কর্ট ভ্যান।
পত্নী-উপপত্নী আর
সফল পুত্র-কন্যাদের নিয়ে
শহরের দুই প্রান্তে দারুণ আছি
সব থেকে উঁচুতে
নিরাপদে।
ভাগ্যিস ওই বয়সেই রাজনীতিটা শিখে ফেলেছিলাম!

সতর্কীকরণ 

বয়স্কদের থেকে একটু সাবধানে থাকবেন।
দেখবেন, ছেলেদের দিকে তেমন ভিড় না থাকলেও
লেডিজ সিটের সামনে মেয়েদের ঠিক পিছনে
                      কিংবা গাঁ ঘেষে দাঁড়ানোর জন্য
বাবা-জ্যাঠা-মামাদের সে কী প্রাণপণ লড়াই
কয়েক দিন খেয়াল করলেই টের পাবেন
গভীর রাতে উঠে শাশুড়ি কান পাতছেন
                                ছেলের ঘরের দরজায়
না না, ছিঃ, ও সব শোনার জন্য নয়, 
কান পাতছেন, বউ তাঁর ছেলের কানে কোন মন্ত্র দিচ্ছেন, 
                                            তা শোনার জন্য
বয়স হলে মানুষেরা ফুটপাতের এত ধার ঘেঁষে হাঁটেন যে, নোংরা তাঁরা পাড়াবেনই।
বয়স্কদের থেকে একটু সাবধানে থাকবেন।
এমনকী, যখন আমার বয়স হবে, তখন আমার থেকেও
অবশ্য আমার বয়স কি আর বাড়বে! 

ধুত 

ছেলে মাধ্যমিক দিচ্ছে
তাকে বললাম, তুই যদি নাইন্টি পার্সেন্টের বেশি পাস
তোকে একটা ল্যাপটপ কিনে দেব, 
ছেলে পেয়েছিল।
বাঁক ঘুরতেই আলো-আঁধারিতে ছুরি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল সে। 
কানাঘুষোয় শুনেছিলাম, বাড়িওয়ালা লোক ফিট করেছে
আমি বললাম, তোমাকে উনি যা দিয়েছেন, তার থেকে বেশি দেব
তুমি শুধু ওঁকে একবার কড়কে দাও
আমার পিছনে যেন কোনও দিন না লাগে। 
পর দিন রাস্তায় দেখা হতেই বাড়িওয়ালা গদগদ হয়ে
আমার দিকে সিগারেট এগিয়ে দিলেন, কেমন আছেন?
দিঘায় বেড়াতে গিয়েছিলাম
আচমকা একটা স্রোত আমাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগল দূরে
নাকানি-চোবানি খেতে খেতে মা মনসাকে ডাকলাম
রক্ষা করো মা, রয়ানি দিয়ে তোমার পুজো দেব। 
লোক নেই, জন নেই
হঠাৎ কোত্থেকে একটা নুলিয়া এসে আমার চুলের মুঠি ধরল।
শুধু মানব নয়
দানব নয়
ঈশ্বরও
ঠিক ঠিক প্রণামী পেলে
যা চান, তাই দিয়ে দেবে। 
শুধু জানতে হবে কার প্রণামী কী।
আর, আপনাকে সুন্দরবনে ট্রান্সফার করে দিচ্ছে শুনেই
আপনি নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন, 
ধুত। 





0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন