কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০১৯

<<<< সম্পাদকীয় >>>>




কালিমাটি অনলাইন / ৭২


গত ২১শে অক্টোবর ছিল আজাদ হিন্দ ফৌজ দিবসের ৭৬তম বার্ষিকী। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দিনটি পালিত হয়েছে। যেমন জামশেদপুর শহরেও পালিত হয়েছে ‘মিলনী’ মঞ্চে ‘সুভাষ সংস্কৃতি পরিষদ’ এবং ‘মিলনী’র যৌথ উদ্যোগে। ‘সুভাষ  সংস্কৃতি পরিষদে’র সদস্য-বক্তা রূপে আমিও এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছিলাম। বক্তব্য রাখার আগে পর্যন্ত অন্যান্য আমন্ত্রিত বক্তাদের যে বক্তব্য শুনলাম, তাঁরা প্রত্যেকেই খুবই ভালো বলেছেন, কিন্তু তাঁদের যাবতীয় বক্তব্য ছিল নেতাজী কেন্দ্রিক। অর্থাৎ আজাদ হিন্দ ফৌজে নেতাজীর নেতৃত্ব, পরিচালনা, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কিত আলোচনা ও বিশ্লেষণেই তাঁদের বক্তব্য সীমাবদ্ধ ছিল। এবং এই আলোচনা ও বিশ্লেষণ অত্যন্ত তথ্য ও তত্ত্বপূর্ণও ছিল। কিন্তু আমি বিস্মিত  হয়েছিলাম অন্য কারণে। কোনো বক্তাই আজাদ হিন্দ ফৌজ বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর নাম উল্লেখ করলেন না। এবং শুধুমাত্র এই আলোচনা সভাতেই নয়, আমি লক্ষ্য করেছি, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের আলোচনায় বিশিষ্ট কয়েকজন বিপ্লবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামীর কথাই উচ্চারিত হয় বারবার,  বাকি অধিকাংশ ব্যক্তির নামই থেকে যায় অন্তরালে বা অন্ধকারে। সাধারণ মানুষ জানতেও পারেন না তাঁদের লড়াই ও আত্মবলিদানের ঐতিহাসিক আলেখ্য। এটা সত্যিই খুব বেদনার কথা।

আমি তাই সেদিনের বক্তব্যে রাসবিহারী বসু সম্পর্কিত কিছু তথ্য রেখেছিলাম। আজ ‘কালিমাটি অনলাইন’এর সম্পাদকীয় লিখতে বসেও মনে হলো, এই বিশেষ দিনটির প্রাসঙ্গিকতায় তাঁর সম্পর্কেই যৎকিঞ্চিত আলোচনা করা যাক। রাসবিহারী বসুর জন্ম হয়েছিল ভারতের পূর্ব বর্ধমান জেলার সুবলদহ গ্রামে ১৮৮৬ সালের ২৫শে মে। তাঁর বাবার নাম বিনোদবিহারী বসু এবং মায়ের নাম ভুবনেশ্বরী দেবী। নিতান্ত ছেলেবালায় পড়াশোনার জন্য তিনি গ্রামের পাঠশালায় ভর্তি হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি মর্টন স্কুলে এবং ডুপ্লে কলেজে পড়াশোনা করেছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি স্কুলের শিক্ষকদের কাছে এবং তাঁর দাদু কালীচরণ বসুর কাছে বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী গল্প শুনে বিপ্লবী আন্দোলনের প্রেরণা পেয়েছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি দেশের বিপ্লবী কর্মকাণদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এইসময় তিনি অভিযুক্ত হন আলিপুর বোমা বিস্ফোরণ মামলায়। সেটা ১৯০৮ সাল। কারাগার থেকে মুক্তিলাভের পর তিনি দেরাদুন চলে যান বন গবেষণা ইনস্টিটিউটে হেড ক্লার্কের চাকরি পেয়ে। দেরাদুনে থাকাকালীন গোপনে তিনি মিলিত হন বাংলা, উত্তরপ্রদেশ ও পাঞ্জাবের বিপ্লবীদের সঙ্গে। এর পরেই দিল্লীতে বড়লাট হার্ডিঞ্জের ওপর প্রাণঘাতী হামলা হয়। রাসবিহারী বসুর নির্দেশে ও পরিচালনায় বিপ্লবী কিশোর বসন্ত বিশ্বাস বোমা ছোঁড়েন হার্ডিঞ্জকে লক্ষ্য করে। যদিও হার্ডিঞ্জ প্রাণে বেঁচে যান। এটা ১৯১২ সালের ঘটনা। স্বাভাবিক কারণেই রাসবিহারী বসুকে গ্রেপ্তার করার জন্য ব্রিটিশ শাসকেরা মরিয়া হয়ে ওঠে। রাসবিহারী বাধ্য হন পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে ভারত ছাড়ার জন্য। ১৯১৫ সালের ১২ই ডিসেম্বর কলকাতার খিদিরপুর বন্দর থেকে ছদ্ম পরিচয়ে তিনি জাপান যাত্রা করেন। পাসপোর্ট অফিস থেকে রবীন্দ্রনাথের আত্মীয় রাজা প্রিয়নাথ ঠাকুর পরিচয়ে তিনি পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছিলেন।

তিনি যখন জাপানে পৌঁছান, বৃটিশ সরকার তাঁর মাথার দাম রেখেছিল ১২০০০ রুপি বা ৫০০০ বৃটিশ পাউন্ড। সেইসময় বৃটিশ ও জাপান মিত্রশক্তি ছিল। রাসবিহারীর পরেই ভারত থেকে জাপানে আসেন আরও এক বিপ্লবী হেরেম্বলাল গুপ্ত এবং আরও কিছুদিন পর লালা লাজপত রায়। বৃটিশ শাসক গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে জাপান সরকারকে তাঁদের গ্রেপ্তার করার জন্য অনুরোধ করা হয়।  স্বাভাবিক কারণেই তাঁরা জাপানের গণমুক্তি আন্দোলনের কয়েকজন নেতার সহায়তায় আত্মগোপন করেন। হেরেম্বলাল ও লাজপত রায় কিছুদিন পরে জাপান ছেড়ে আমেরিকায় চলে যান, কিন্তু রাসবিহারীকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আত্মগোপন করেই থাকতে হয়। এইসময় তিনি জাপানের অন্যতম গণমুক্তি আন্দোলনের নেতা তোয়ামা মিৎসুরুর জ্যেষ্ঠাকন্যা সোওমা তোশিকোর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

পরবর্তীকালে রাসবিহারী বসুর তৎপরতায় জাপানি কর্তৃপক্ষ ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের পাশে দাঁড়ায় এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় সহযোগিতা জোগায়। ১৯৪২ সালের ২৮-২৯শে মার্চ রাসবিহারীর আহ্বানে টোকিওতে একটি সম্মেলনে ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লিগ গঠন করা হয়। রাসবিহারী সেই সম্মেলনে একটি সেনাবাহিনী গঠনেরও প্রস্তাব পেশ করেন।  ১৯৪২ সালের ২২শে জুন ব্যাংককে দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে রাসবিহারীর অনুরোধে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লিগে যোগদান করেন। যেসব ভারতীয় সৈন্য মালয় ও বার্মা ফ্রন্টে জাপানিদের হাতে বন্দী ছিলেন, তাঁরা ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লিগের সশস্ত্র সেনাবাহিনী ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি বা আজাদ হিন্দ ফৌজে যোগদান করেন। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়ক। রাসবিহারী বসু অবশ্য আর বেশিদিন জীবিত ছিলেন না। ১৯৪৫ সালের ২১শে জানুয়ারী তিনি প্রয়াত হন।


আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা : 

kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com 

দূরভাষ যোগাযোগ :     
      
08789040217 / 09835544675 

অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :

Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002,  Jharkhand, India

6 কমেন্টস্:

  1. দেশের স্বাধীনতা নিয়ে যখন একদল নেতা ছিনিমিনি খেলছে এবং দেশের সাধারণ মানুষ হয় বিভ্রান্ত নয় তল্পিবাহক তখন রাসবিহারী বসুর এই মূল্যায়ন অত্যন্ত জরুরি ছিল ।

    উত্তরমুছুন
  2. আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রতিষ্ঠাতা কিন্তু রাসবিহারি বসুও নন। প্রতিষ্ঠাতা মোহন সিং।

    উত্তরমুছুন
  3. রাসবিহারী বসু সম্পর্কে যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছে, তাতে কিছু সংশোধন/ সংযোজন দরকার।
    ১। রাসবিহারী বসু আলিপুর বোমার মামলায় অভিযুক্ত বা গ্রেপ্তার হননি। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রশ্ন ওঠেনা, কারণ তিনিই ছিলেন বাংলার শীর্ষস্থানীয় একমাত্র বিপ্লবী নেতা, যাঁকে ব্রিটিশ সরকার কখনই গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
    ২। লর্ড হার্ডিঞ্জের ওপর দিল্লিতে যে হামলা হয়েছিল, তাতে যেহেতু কোন প্রাণহানি হয়নি, তাই একে 'প্রাণঘাতী' বলার অর্থ নেই।
    ৩। পূর্ব এশিয়াতে জাপানের আনুকূল্যে ও ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগের নেতৃত্বে যে সৈন্যবাহিনীটি গড়ে উঠেছিল, সেটি ইতিহাসে প্রথম আজাদ হিন্দ ফৌজ নামে পরিচিত। লীগের সভাপতি ছিলেন রাসবিহারী আর জাপানের হাতে যুদ্ধবন্দী যে ভারতীয় সৈন্যদের নিয়ে ১৯৪২ সালে এই ফৌজ গড়ে উঠেছিল, তার অধিনায়ক (জিওসি) ছিলেন মোহন সিং। পরে এই ফৌজের পরিচালনায় জাপানী হস্তক্ষেপ নিয়ে মোহন সিংয়ের সঙ্গে রাসবিহারীর বিরোধ বাঁধে। লীগের সভাপতি হিসেবে রাসবিহারীর নির্দেশ মানতে মোহন সিং অস্বীকার করায় রাসবিহারীর পরামর্শে জাপান তাঁকে গ্রেপ্তার করে। বন্দী হবার আগে মোহন সিং আজাদ হিন্দ ফৌজ ভেঙে দিয়ে যান।
    সৈন্যরা মোহন সিংয়ের নির্দেশে ছত্রভঙ্গ হয়ে যাবার পর রাসবিহারী ও লীগের অন্যান্য নেতারা আবার একে সংগঠিত করার চেষ্টা করলেও খুব একটা কাজ হচ্ছিলনা, কারণ রাসবিহারীর যথেষ্ট বয়স হয়েছিল ও সৈন্যদের ওপর তাঁর প্রত্যক্ষ প্রভাব ছিল নগন্য। এসময় ব্যাংককে পূর্ব এশিয়ার স্বাধীনতাকামীদের সম্মেলনে নেতাজিকে জার্মানি থেকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসার প্রস্তাব গৃহীত হয়।
    ৩। এই আমন্ত্রণ পাবার পর নেতাজি পূর্ব এশিয়াতে এসে পৌঁছন ১৯৪৩ সালের জুলাইয়ে। সিঙ্গাপুরের এক জনসভায় তিনি রাসবিহারীর থেকে লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৪২ সালে তিনি জার্মানিতে থাকায় সেসময় রাসবিহারীর থেকে নেতৃত্ব নেবার কোনো প্রশ্ন ওঠেনা।
    ৪। নেতাজির ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্বের জাদুতে আজাদ হিন্দ ফৌজ আবার নতুন করে গড়ে ওঠে, তা দ্বিতীয় আজাদ হিন্দ ফৌজ নামে পরিচিত।
    ৬। ফৌজ সংগঠিত হতে না হতেই সে বছর ২১শে অক্টোবর নেতাজি গঠন করেন আজাদ হিন্দ সরকার। রাসবিহারী ছিলেন এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। এই সরকারের সঙ্গে প্রথম আজাদ হিন্দ ফৌজটির প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই।
    অলকরঞ্জন বসুচৌধুরী

    উত্তরমুছুন
  4. জাপানের কি ভারতের স্বাধীনতা নিয়ে সেই মুহূর্তে কোনও চিন্তা সম্ভব? সে তখন ১৯৩৭ সাল থেকে জারী থাকা চীন যুদ্ধ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। তার তখন যাবতীয় কর্মকাণ্ডের পেছনে কাজ করছে চীনের বিরুদ্ধে জয়। এখনকার মায়ানমারের( তখনকার বার্মা) আং সু কি-র বাবা বতমান মায়ান্মারের জাতির পিতা, বিপ্লবী র্আং সান জাপানিদের কথায় ভুলে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে জাপানকে সহায়তা দিয়ে ব্রিটিশ অধীনে থাকা তাঁর জের দেশ মায়ানমরে (তখন বার্মা) দখলে সাহায্য করেন। কিন্তু বছরখানেক যেতে না যেতেই বুঝতে পারেন জাপানের পক্ষে গিয়ে তিনি কি ভুল করেছেন। তিনি তখন চিনে পালিয়ে গিয়ে নিজের দেশকে জাপানের অধিকার থেকে মক্ত করতে কমিউনিস্ট নেতা মাও তুং-এর সাহায্য চান।
    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইউরোপিয়ান খণ্ডের অমাপ্তির পর এশিয়ান ভুখণ্ডে সেই নাতসিবাদের হয়ে একেবারে জয়ের মুখে দাঁড়িয়ে জাপান। চীনের প্রধান সব বন্দর শহর জাপানের অধিকারে। চীনে যে মিত্রপক্ষের সাহায্য আসবে তার তখন দুটি মাত্র পথ। এক, সোভিয়রতের কাজাখস্তান হয়ে পাহাড়ি দুর্গম গিরিখাত, যেখান দিয়ে আসছে সোভিয়েত সহায়তা। দুই, ব্রিটিশ-আমেরিকান সাহায্য আসছে ভারতের জাতীয় নেতৃত্বের সমর্থনে ভারতের আসাম হয়ে দক্ষিণ চীনে। জাপানের উদ্দেশ্য ছিল বৃটিশ-আমেরিকান এই পথটিকে ধ্বংস করা। ১৯৪২ সালে তখনকার বার্মার বিপ্লবী আং সাংকে সঙ্গে নিয়ে বার্মার বৃটিশ অধীনতা থেকে মুক্তির নামে জাপান ঠিক্ক এটাই করেছিল। তখনকার সাপ্লাই-লাইন বার্মা রোডকে ধ্বংস করেছিল। এরপর তৈরি হল নতুন রাস্তা লেডো রোড। ভারতের আসামের লেডো থেকে দক্ষিণ চীনের কুনমিং শহর পর্যন্ত। এইবার এই দ্বিতীয় রাস্তা ধংসের পরিকল্পনা। পুরো পরিকল্পনাটাই ছিল জাপানের সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর ভারত-বৃটিশ বিষয়ক বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত গোয়েন্দা অফিসার হিডিও ইয়াকিরোর মস্তিস্কপ্রসূত। এই পরিকল্পনার নাম ছিল ইয়াকিরো কিকান। মনে রাখতে হবে এর আগে রাসবিহারী বসুর হাত ধরে যখন ইণ্ডিয়ান ইণ্ডিপেণদেন্স লীগ তৈরি হচ্ছে বা মহন সিংকে দিয়ে আজাদ হিন্দ ফৌজ তৈরি হচ্ছে তখন তা হয়েছিল তখনকার জাপানী সামরিক গোয়েন্দাবাহিনির প্রধান প্রধান ফুজিয়ারা আইউচির পরিকল্পনা অনুসারে। হ্যাঁ, পুরোটাই ছিল জাপানী সামরিক গোয়েন্দাদের পরিকল্পনার অঙ্গ। সেই মিশনের নাম ছিল 'ফুজিয়ারা কিকান'। তখনও প্রধান উদ্দেশ্য ছিল চীন যুদ্ধে জয়। ১৯৪৪ সালের ইম্ফল, কোহিমা বা পোকুকু যুদ্ধগুলি সবকটাই ছিল ভারত-চীন রাস্তা ব্রিটিশ-আমেরিকান সাহায্যের লেডো রোড দখলে আনা বা ধ্বস করা বা পুনরুদ্ধার। ভারতীয়রা তখন বার্মিজ নেতা আং সান-এর মতোই জাপান আমাদের স্বাধীনতা এনে দেবে বা জাপানের সহায়তায় আমরা স্বাধীন হব এমন স্বপ্নে বিভোর। জাপানী আক্রমনে চীনের অবস্থা বা বার্মিজ বিপ্লবী আং সান-এর করুণ পরিণতি দেখেও তাঁরা কিছু বুঝতে পারেননি। আজ আমরা যঁরা ভারতে ফ্যাসিবাদের উত্থানের নামে শিহরিত হচ্ছি, তাঁদের পক্ষে তখনকার জার্মান-জাপান-ইতালী-র ফ্যাসিবাদ যে কোনও মূল্যে আটকানো যে কত জরুরী ছিল তা বোজা এখন হয়তো সহজ হবে না। ১৯৩৭ সালে নানকিং ম্যাসাকার-এ জাপান যে কী ভয়ংকরতম ও বিভতস নারকীয় কাণ্ড করেছিল তা আমরা জানি। চীন-জাপান যুদ্ধে চীনের জয়ই তখন ভবিষ্যত পৃথিবীর পক্ষে জরুরী ছিল।

    উত্তরমুছুন