দু’শ
বারো নম্বর বাস
মোটামুটি খালি ছিল, জায়গা
পেয়ে গেলাম সামনের দিকে ড্রাইভারের খাঁচার পেছনে। গড়িয়াহাটে থামতে একটু ভীড় হয়ে
গেল। সাড়ে দশটা বাজছে তাই ইস্কুলের
ছেলেমেয়ে অনেকগুলো উঠল। আমার ঠিক সামনের ফাঁকা জায়গাটায় দাঁড়ানোর সুবিধে, ওখানে
দুটো ছেলে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে গেল। বয়স কত হবে – এগারো বারোর মত। ছ’ ক্লাসে পড়ে মনে হল। খাঁকি প্যান্ট, সাদা শার্ট। নিজেদের
মধ্যে গল্পে মশগুল। কান পেতে গল্পের বিষয়টা বুঝলাম। আজকাল কিছু কমিকস চরিত্র, মানে
স্পাইিডার ম্যান গোছের, এই বয়সের ছেলেদের খুব প্রিয়। এরা বলাবলি করছে কার কাছে
এদের কটা দেওয়ালে লাগানো ছবি আছে। কার যেন ছবি নিয়ে একটা ছেলে বলল – “আমার কাছে ফুল সাইজ আছে, দেওয়ালে লাগিয়েছি”। অন্য ছেলেটা বলল – “তোরটা দেখেছি, ওটা তো শুধু দাঁড়িয়ে থাকা ছবি। আমি একটা পেয়েছি... দারুণ...
পাহাড় থেকে সমুদ্রে লাফিয়ে পড়ছে”। এরপরে এরা ইস্কুলের ভেতর কোন ক্লাস কোন সেকশনে কে কে
ভালো ফুটবল খেলে তার মধ্যে ঢুকে গেল।
ফুটবলের মাঠ আছে, খাঁকি
প্যান্ট-সাদা শার্ট তাহলে তো মনে হচ্ছে... আর হ্যাঁ, এ বাস তো ওই রাস্তা দিয়ে
যাবে। আমি থাকতে না পেরে জিগেস করলাম - “তোমরা কোন স্কুলে পড়?”
যা ভেবেছি তাই। এরা সেই
ইসকুলে পড়ে যেখানে আমি পঞ্চাশ বছর আগে পড়তাম। ওদের বললাম কথাটা। ছেলেদুটো অবাক
একটু হল, কিন্তু কিছু বলল না। একটু হাসল শুধু। এ বয়সের ছেলেরা মুখচোরা হয়, আমার
বয়েসী একটা অচেনা লোকের সঙ্গে এ বিষয় কী কথা বলবে ভেবে পেল না।
ছেলেদুটোকে দেখে, ওদের কথা
শুনে আমার মনটা একটু যেন ভিজে ভিজে গেলো। সে কতদিনের কথা, আমিও এক সময় এদের মত ছিলাম। এ বয়সে সব কিছুই
ভালো মনে হয়, দুঃখটুখ্য মাঝেসাঝে এলেও তা বেশিক্ষণ মনে লেগে থাকে না।
বাস চলছে, একটু পরে ছেলেদুটো
ইসকুলের কাছে নেমে যাবে। রাস্তায় হাজার গাড়ি -- তিন চাকা, চার চাকা, দু’ চাকা। ফুটপাথে কুকুর, বড়বড় দোকানগুলো খুলছে,
ব্যস্ত লোকজন চলেছে, কেউ সোজা, কেউ রাস্তা পার হচ্ছে। এসবের মধ্যে আমার মনে হল
বাসটা চললেও আমি যেন চলছি না। একটু পরেই ইসকুল এসে যাবে, ছেলেদুটো নেমে যাবে
কিন্তু আমাকে তো এ বাস ইস্কুলে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না...
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন