কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০১৯

বিদ্যুৎলেখা ঘোষ




অচিন্ত্যদের পাড়ায় 


আসা যেমন আছে তেমনই অনিবার্য আছে ফিরে আসার বেলা। ঐ টিলার উপরে মনে হয় কে যেন কতক ভুসোকালি মাখিয়ে ছায়া ধরা খেলছে। ও আসলে জলভারশূন্য মেঘের ছায়া, যাকে শুকোতে দিয়েছে জল্পনা। ভুবনেশ্বর কনফারেন্সে দেখা হবে বহুদিন পর ওদের দুজনের। নামে কি করে! তাই কর্পোরেট গোত্রের এই দুজনের একান্ত কোনো কথা নেই আর আজ। আছে কাজ কেবলমাত্র। ফিক্সড ডিপোজিটে ডমিনেট করার দিনগুলো। দিনে দিনে সুদে বাড়ছে অভিযোগ অভিমান। 

এতবার যাওয়া আসার এই পথের ধারে দেখে এসেছি কেবলমাত্র ভরা শ্রাবণেই মাথা তুলে ব্রাহ্মণীর পাড়ে থোক ধরে সবুজ হয়ে হাওয়ায় হাওয়ায় এর সঙ্গে ও গলাগলি মিলেমিশে বিছিয়ে থাকে হরেক কিসিমের বুনো ঘাস। ঠিক যেন ওদের ভুল বোঝাবুঝিগুলো। বিচিত্র রকমের, একটা আরেকটার সাথে কোনো না কোনো সূত্রে জন্মেছে পুষ্ট হয়েছে প্রসারিত হয়ে চলেছে। যার গুচ্ছ মূল উপড়ানো বড় একটা সহজ কাজ নয়‌। বস্তুত ওরা নিজেরাও চেষ্টা করে পারেনি। শেষপর্যন্ত সেগুলো রয়েই গেছে সুন্দরভাবে। 

কনফারেন্সে কেজো কথোপকথনের মাঝখানে লাঞ্চ ব্রেক। ওরা পাশাপাশি বসে লাঞ্চ করতে অস্বস্তি বোধ করেনি। যদিও কেউ কাউকে ডাকেনি পাশে বসে খাওয়ার জন্য। তবুও ওরা বসলো। খাবারও খেলো। শুধুমাত্র অর্ডার করার সময় চেনা অভ্যাসের খাবারগুলো না বলে যেগুলো চরম অপছন্দ সেগুলোই অর্ডার করলো দুজনেই। পরোক্ষ কথা কাটাকাটিও বাদ থাকেনি তবে নুন, গোলমরিচ গুঁড়ো, সসের বোতল পরস্পরের দিকে এগিয়ে দেওয়াও হয়ে গেল ওই চাপা বিতর্কের মধ্যেই। খাবার অসমাপ্ত রেখেই দু’দিকে বেরিয়ে চলে গেল দুজনে এবারও।

যাওয়ার সময় দেখেছি ছোট টিলা বড় টিলার সঙ্গেই যোগাযোগ তৈরি হয়েছিলো। ভুবনেশ্বর কনফারেন্সের শেষে যার যার বসের সাথে আগামী প্রোজেক্টে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে ওরা আলাদা আলাদা ভাবে। আকর্ণ হেসে ওদের বস সেই খুশির খবরটা জানালেন গেস্ট হাউসে একসাথে ফেরার গাড়ির দিকে যেতে যেতে। কোনোভাবেই আর ওদের পরস্পরের কাছে ফিরে আসা সম্ভব নয়, কেননা ওরা পরস্পরের বসের সাথেই ভবিষ্যৎ জীবন কাটানোর জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে গেছে।

ট্রেন কটক স্টেশন ছাড়লে তখন লক্ষ্য করলাম গাছগাছালি আর তার পাতাদের  এত হরেকরকমবা কই এমন, আর কোথাও তো চোখে পড়েনি! পাশাপাশি প্রতিটি গাছ একেকটা মানুষের মতো এ ওর থেকে কত অন্যরকম কত আলাদা। পথের দু’পাশে অচিন্ত্যদের পাড়া বেড়াতে বেড়াতে কল্পনা সইয়ের সঙ্গে বেশ  কিছুক্ষণ গল্পগাছা করতে করতে ফেরাটাও কিন্তু নেহাত মন্দ না।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন