কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১ জুলাই, ২০১৯

জয়তী দাস




অপেক্ষা 

রাত্রি ঘন হয়ে গেলে গাছেরা ভীষণ আপন হয়-
ওদের ভেতরে অনেকগুলো পুরনো বাড়ি, রহস্যময়তা-

ক্লান্ত পৃথিবীর চোখটা কেমন ঘোলাটে বেলে মাছের মতো
পড়ে-
এক একসময় উপমায় ভরে যায় হাতের তালু থেকে নখ-

গাছেরা বোঝে না - ঝাঁকড়া অন্ধকার নিয়ে চুপটি করে
প্যাঁচা উড়িয়ে দেয় নীল ক্ষেতে-
খুঁজতে চায় - পুরনো তক্তোপোষের পায়ার নীচে ছড়িয়ে
থাকা ঘুণ সংসার-

ইতিহাসেরও কখনও কখনও সন তারিখ যুদ্ধের রীতিনীতি
বোঝা হয়ে ওঠে না,
কোথায় যেন হালকা পেনসিলের দাগ মুছতে মুছতে পেরিয়ে
চলেছে নাগরিক অধ্যায়-

কাবুলের আতরদানি থেকে তাজাকিস্তানের মেয়েদের চুলের
সুগন্ধি -
বুকে বয়ে আজো হেঁটে চলেছে স্নায়ুর ওঠানামা - তিন তাসের
রঙ -

আজকাল ফিরে আসতে পারিনা মশারীর ঘরে - দমবন্ধ
গাছের ভেতরে গিরগিটির অদ্ভুত রঙ --- রাতের রঙ নেই !

নিজের ভেতরে গল্প গুটিয়ে নিই -- চোখে ঘুম নামবেই
একসময় –


নিষিদ্ধ রাজ্যের পাগল হরিণ

ভীষণ জোর ছুটছে কবিতাপাগল লোকটি-

কখন যেন সে আপনমনে সাদা বাড়িটার দেওয়ালে
ইঁটের টুকরো দিয়ে কোনো একটা সংখ্যা বসিয়ে দিলো!
অস্তিত্বহীন, খালি কলসীর ভরাট এক সংখ্যা!

কেউ তাকে দেখছে না, কেউ তার পেছনে দূরবীন লাগিয়ে
নেই -

তার বিড়বিড় শব্দগুলোর কোনোটার পা চলে গ্যাছে লাশকাটা ঘরে-
কোনটার উরু অংশ ভাঁজ হয়ে ধর্ষিতার ওড়নার তলায়
জমাট কালশিটায়,

নাভী, বুক পুড়তে পুড়তে গয়লানি বউয়ের অবেলার উনুনে-

দুই ভ্রুর ওপরে খটখটে কাল্পনিকতায় জেগে আছে বিলুপ্ত
ঘাসেদের রহস্য। তীব্র বাজের চিৎকার

রাত নামছে তার রাজ্যে - নিষিদ্ধ নিস্তব্ধতায় যত গাছারী
বাসভূমি!
বায়ুস্তরে স্তরে আটকে রেখেছে কেউ নাক্ষত্রিক স্টেশন-
বেদুঈন শব্দমঞ্চ থেকে একপাল ঘুঙুরের আচমকা
মরুঝড়-

কবিতার ভাঁজ ভেঙে - বুনো ষাঁড় আটকে পড়ছে
রজনীগন্ধা বনে -
বেনেবউ পাতার আড়াল ছেঁড়ে ডুব দিলো মাছরাঙাদের
ঝাঁড়ে,

শিশিরের চুল ভেজানো পাহাড়ী রমণীর শরীরে শব্দের
মুগ্ধতা-
এত নুড়ি-পাথর দিয়ে পাগলটা কেমন করে প্রেমিক হয়!

ঝড়ে ওলটপালট হয়ে গেলে মেষপালক কেমন করে
রাস্তা চিনে অন্ত্যমিলে পৌঁছায়-


ব্যক্তিগত

ঘরবাড়ি আপনা হতেই সেজে ওঠে
ডাকতে হয়না ঘটিবাটি, থালা-গেলাসে
ঠিক পায়ে পায়ে নাপিতের নুরুল পর্যন্ত!

তবুও মরাচাঁদ, আসে সাজানো ছাদের ঘরে
ছায়াপথে- দু’ইঞ্চি আঙুলের তফাতে
ব্যক্তিগত হয়ে যায় আমাদের সংলাপ!

দুঃখ পোষা খরগোশটা কেঁদেই চলেছে
সুখের বালিশে --
তুলতুলে ভাপে গরম ভাতে মিশে যাচ্ছে লবণ,

তুমি কি করে জানবে বলো!
আমাদের গল্পগুলো ঠিক রাস্তায় এসে মেশে-
কিছুটা অভিনয়, আপেক্ষিক-
আর বাকিটা ব্যক্তিগত।

আকরিক

এযাবৎ জানালার বাইরে কালি ডুবিয়ে নির্যাস তুলে এসেছি। পিঁপড়ে'রাও এক ছান্দিক
ভঙ্গিতে ঘরের কোণে দেওয়ালে ওঠানামা করে বা রাতের বন্ধ দরজায় দোকানের ভেতর
নিরীহ আরশোলা ইঁদুরের প্রজাতি গুলো পায়ের দলে যাওয়া বিস্কুট মুড়ির টুকরোগুলো
খুঁটে খায় - এইসব দৃশ্য দূরের লেন্সে তেমনভাবে খোঁজা হয়নি -

বুভুক্ষু মানুষদের আচরণ ভীষণ বিরক্তি জনক। এদের লাজ লজ্জা বিহীন ছালবাকল সরিয়ে
অবলীলায় হাত পেতে দেয় সমস্ত দরজায়। অথচ এদের পেটাই করা জীবন যেখানে লোহাও
ভঙ্গুর। রাস্তার ছেঁড়া স্যান্ডেল ঝোলায় পুরে দিনের শেষে বাসি রুটি সেঁকে নেয় আগুনে।
এদের দুহাতে জীবন ও মৃত্যুর জাগলিং। উচ্চবিত্ত ক্যানভাসে চড়া দামে বিক্রি হয় এদের জীবিকা, রূপকথা--



4 কমেন্টস্: