কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ১ জুলাই, ২০১৯

দেবলীনা চক্রবর্তী




আখ্যান


(১)

আদিম উপত্যকার বুকে বুনো লতাগুল্মের অত্যধিক বাড়বাড়ন্তে
ইতর প্রজাতির সাবলীল যাতায়াত বেড়েছে ঠিক

কিন্তু বনজ গন্ধ মেখে যে পাখি চোখের আড়াল হয়েছে
এক গোপন আঁতাত, গূঢ় অভিসন্ধির বলে
তূণীর ভরা বিষমাখা তীর, তবু লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় দু'চোখ

গুহা মানবীর ঈশ্বরিক রূপ ছলাৎছল উপচে পড়ছে আজ ব্যাধের বলিষ্ঠ পৌরুষে!

এদিকে একাকী ফুল্লরা -
উঠোন নিকোয়, ক্ষুদকুড়ো ফোটায়
ভুরভুরে সাদা গন্ধে মিশে যায় আরণ্যক

বহুদিন পর ব্যধের উঠোনে লকলকে আগুনের জিভ
ঝলসানো আমিষের গন্ধে ভরপুর
জোৎস্নামাখা রাত আজ বড় মধুর!

(২)

প্রেমের উপাখ্যান বৃদ্ধি পেলে ক্রমশ তা হিজল
গাছের রূপ নেয়
প্রথমে গোলাপরঙা সুগন্ধী থোকা ফুলের মোহে আকর্ষণ
তারপর কাঁচা সবুজ নধর বিষফলে
আলতো কামড় দিলেই -
মুখে সাদা ফেনা আর গ্যাঁজলা ওঠা পরিণতি!

(৩)

সনকার সুখের সংসারে বিষহরীর কোপ
চাঁদের গায়ে আদ্যন্ত অমানিষার অন্ধকার!

পাতার ভেলা ভেসে যায় -
বন-বাদার, গ্রাম থেকে গ্রাম!
নীল বিষময় শরীরী অক্ষরে
সতীলক্ষ্মী বেহুলার পণ -

শেষে জেগে ওঠে জন্ম!
আদায়ী কথার যত্নে পৃথিবীর বুকে বেড়ে ওঠে
ফণীমনসার মাহাত্ম্য!

(৪)

বালি বালি মেঘ জমে আকাশের অধরে
সাদা জ্যোৎস্না ঘাটে টলমল লাজুক জল
আর মাঝ গাঙে মজেছে ভাটিয়ালী সুর

পাটনীর খেয়ায় তখন অরূপরতন
শ্রীলক্ষ্মীর আলতা রাঙা মঙ্গলাচরণ।

দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তর,
অতঃপর -
অন্যপূর্ণার আশীর্বাদে দুধে - ভাতের নিশ্চিত
উপশম

বাতাসে

এখানে সবই আছে,
ছেঁড়া ফাটা দুঃখবোধ, আজন্ম ভালোবাসা, কাল্পনিক সুখ আর তালপাতার পাখার মতো উড়ে বেড়ানো কিছু স্মৃতি!
হাতে হাতে চালিত হয় নিয়মিত সংসারের আনাচে কানাচে

এভাবে যে একা আসো, ওই হাতপাখার মতোই ঘোরোফেরো - একাকী নিস্তব্ধ বিষণ্ন ঘর
চাঁদের কাছে হাত পেতে চেয়ে নিয়েছো জ্যোৎস্নাভরা খোলা আকাশ
সন্ধের এলো চুলে উজাড় করে দিয়েছো আশ্চর্য সব দীপ
আর যা কিছু সম্বল উৎসর্গ করেছো ওই মেদহীন পলকা বাতাসে -
যে বাতাস তোমাকে চিনলেও তুমি আজও জানো না তাকে!


ইলিউশন

আমার বদলে যাওয়া আমির দিনগুলোতে তোকে
এমনি করেই পাই, যেন তুই কত্ত আপন!

রোজের ঘটনাবলী রোজ হাতরে দেখি,
গল্পের মতো কিছুই নেই,
তবু ইচ্ছে করে ছিঁড়ে-চিবিয়ে-গিলে মৌজ করে খাই

একটা কলম দেখি লেখে কত কি রোজ,
আর একটা পড়ে থাকে একটু কিছু লেখার আশায়!

দরজা খুলতেই সামনে দেখি ঘন নীল আকাশ
মাধবীলতার ডালে ফিরে যাওয়া বিকেলের জাফরানী রোদ!
আঁচড় কাটে সান্ধ্যবাতাস আর বৃত্ত আঁকে
আমার সন্ধ্যামালতির সদ্য ফুটে ওঠা ফুল!

আলো ভাঙা সন্ধ্যেতে এভাবেই বাড়তে থাকে
ইলিউশন - দেখতে থাকি খণ্ড খণ্ড চিত্র,
কবিতা-গান-সুর-শব্দে আছন্ন
আর একটা আমির বদলে যাওয়া ক্ষণ!



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন