কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

রবিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৮

শুভলক্ষ্মী ঘোষ




খবর পাওয়ার পরে   
     

হৈমন্তী হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল - “এই সোমা, খবরটা শুনেছিস?”
-“খবর? কই না তো! কী নিয়ে?”   
-“আরে বলিস না, কেলেঙ্কারি কান্ড... গতকাল রাত্রে শরণ্যা নাকি বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছে! ওর বাবা মা প্রিন্সিপ্যাল ম্যামের ঘরে কাকিমা কী কাঁদছে, জানিস!”
-“শরণ্যা মানে? আমাদের ক্লাসের শরণ্যা? যাহ্‌ বাবা, সে কী!”
-“তাই তো বলছি, একটা চিঠি না কী যেন লিখে সে মেয়ে পগার পার
-“দেখগে যা, সাথে আবার কাউকে জুটিয়েছে কি না... ইউ নেভার নো!” সোমা বাঁকা হাসি হাসল
-“ওহ মাই গড... বয়ফ্রেন্ড? ছিল নাকি! তুই জানতিস?
-“স্টুপিডের মত কথা বলিস না তো হৈমন্তী! আমি জানব কী করে! ওরকম মিডিয়োকার মেয়েদের সাথে আমি মিশি না আর তার থেকে বড় কথা হচ্ছে  মেয়েটা কেমন একটা অদ্ভুত টাইপ... নইলে সামনে বোর্ড এক্সাম, তার আগে কেউ বাড়ি থেকে...”
-“তা যা বলেছিস ক্লাসে বসে ছবি আঁকত, কবিতা লিখত, রেজাল্টেরও তো ওই নমুনা!”

সেদিন ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে সারাদিন শরণ্যাকে নিয়ে আলোচনা চলল সব জায়গায় সর্বত্র খালি শরণ্যা শরণ্যা কেন এমন করল, শরণ্যা কোথায় যেতে পারে, একা গিয়েছে, নাকি  কারুর সাথে!  

রিসেসের পর  সেমেস্টারের রেজাল্ট আউট হল যথারীতি সোমা ফার্স্ট এবং বেশীরভাগ সাবজেক্টে হাইয়েস্টে কিন্তু প্রত্যেকবারের মত এবারে কারুরই সে নিয়ে তেমন একটা মাতামাতি লক্ষ্য করা গেল না সবাই শরণ্যাকে নিয়ে ব্যস্ত! সোমার অসহ্য লাগছিল যে গেছে, সে গেছে! ইস্যুটাকে এত ইমপর্ট্যান্স দেওয়ার তো কিছু নেই... অদ্ভুত! আর ও যে কষ্ট করে দিন রাত জেগে পড়াশোনা করল... সেমেস্টারে এত দুর্দান্ত রেজাল্ট করল, সেই জন্য কই, ওকে তো কেউ কনগ্র্যাচুলেট করল না! তার বদলে সব অ্যাটেনশন কিনা সেই ন্যাকা ন্যাকা, ব্যাক-বেঞ্চার, আনইম্প্রেসিভ, ধিঙ্গি মেয়েটাকে নিয়ে! শেষে এইভাবে শরণ্যা রাতারাতি ক্লাসের মধ্যমণি হয়ে যাবে! বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছে তো যাক না!  জাহান্নামে যাক তাতে কার কী!      

প্রচন্ড রাগ, হিংসে, আর এক বুক অভিমান নিয়ে সোমা ক্লাস থেকে ছুটে বেরিয়ে টয়লেটে গিয়ে চোখে মুখে জোরে জোরে জলের ঝাপটা দিল  ক্লোরিন মেশানো সেই বিচ্ছিরি নোনতা জলে চোখদুটো জ্বালা করে উঠতেই সোমা যেন আবছা আবছা দেখতে পেল, শরণ্যা হাঁটতে হাঁটতে কতদূর...   ওই অনেক দূরের পাহাড়ে পৌঁছে গিয়েছে সেইখানে স্কুল নেই, পরীক্ষা  নেই, পড়াশোনা নেই, দিনে চারটে পাঁচটা করে টিউশন নেই... আঁকা, গান, নাচ, ক্যারাটে শেখার ক্লাস... কিচ্ছু নেই আছে শুধু সবুজ আর সবুজ, চারদিকে বড় বড় গাছ, গাছের গা বেয়ে নেমে আসা রোদ, ছড়ানো ছিটনো বাড়ি, সাজানো বাগান, রঙিন ফুল, রং বেরঙের পাখি, ঝর্না, মেঘ, রামধনু...     







1 কমেন্টস্: