অবনীবাবুর আবেগসমূহ
গত হপ্তায় অফিসে গিয়ে বস্ মিঃ সারাওগির কাছে তুমুল ঝাড়
খাচ্ছিলেন অবনীবাবু। চোটপাটের মুখে দু’হাত জড়ো করে রাগে পা ঠুকছিলেন। সারাওগি গলা ফাটিয়ে বললেন, “গেট্
লস্ট”। অবনী ভয় আর রাগের ধাক্কায় লাট খেয়ে বেরিয়ে পেছন ঘুরে দ্রুত জলত্যাগ করলেন
চেম্বারের দরজার সামনে।
মাঝরাত্তিরে লটরপটর করে নাড়ালেন কানদুটো। মস্ত লম্বা। আলগা
করে ঝুলিয়ে দিলেন দু’পাশে। কাঁধ ছাড়িয়ে নামল পপির চুলের ঢঙে। ক’বছর আগেও চুলবাঁধা নিয়ে মা-মেয়েতে তুমুল ঝড়জল, মনে পড়ল। রীতা চেঁচাতেন, -না বাঁধলে নেড়া করে দেব। ক্লাসটিচার নোটবুকে কম্প্লেন করেছে
যে, বাবাকে দেখাব?
কানদুটো সমস্যায় ফেলবে। চুল কাটা যায়, বাঁধা যায়। কিন্তু কান যত নষ্টের গোড়া। সঙ্কুচিতভাবে ডান কানটা
তুলতে লাগলেন। সহজে উঠে গেল মাথার ওপরে। এবার বাঁদিকেরটা। এটাও দিব্যি—! বুঝলেন তোলা নামানো যাচ্ছে প্রয়োজনমতো। সাফল্যে সন্তুষ্ট হয়ে আরাম
করে বসবেন, পারলেন না। ‘ঘেঊঘেঊ’ - কুকুর চেঁচাচ্ছে রাস্তায়। তৎক্ষণাৎ হাত-পা গুটিয়ে শিরদাঁড়া টান করে
এ্যাটেনশন। সাঙ্ঘাতিক ভয় করছে।
কালো গোল ফ্রেমের চশমা পরে বেডসুইচ জ্বাললেন। আবছায়া আয়নাতে
নিজের মুখ, কালো পুঁতি স্বচ্ছ চোখ। বাথরুমে যেতে গিয়ে দেখেন খাটটা উঁচু। উচ্চতা একটু
মেপে নিয়ে থুপ করে পড়লেন। পেছনের পায়ের ভরে লাফিয়ে গেলেন দেওয়ালের কোণে। ওখানে কাজ
সেরে হাতপা গুটিয়ে বসে রইলেন নিঃশব্দে।
ভোরবেলাতে সদ্য বিছানা ছেড়ে মাটিতে পা রাখলেন রীতা। বেজায় খুশি হয়ে তুড়ুক তুড়ুক লাফ মেরে বারকয়েক নেচেকুঁদে ঘুরে হিসির জল ছিটিয়ে
ভালোবাসা জানালেন অবনীবাবু। -সাতসক্কালে কী অসভ্যতা? বলে বিরক্তি দেখালেন রীতা।
ত্রিদিব চোখ মট্কে অন্যদিকে সরে গেলেন। একটু পরে চা হাতে ফিরে এলেন রীতা। ডাকলেন,
-কী হয়েছে বলো তো তোমার?
জবাব না দিয়ে অবনী নিঃশব্দে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। রীতা টেনে ধরতে গেলেন ফতুয়া। উনি আচমকা পেছন ঘুরে জলত্যাগ করে বিরক্তি প্রকাশ
করলেন। -উন্মাদ নাকি! রীতা জামাটা ছেড়ে দিয়ে বাথরুমে ঢুকলেন।
ডাক্তারের নির্দেশে হাওয়াবদল। ছোট শহরের একান্তে বালানন্দ চিড়িয়াঘর।
ভীড় নেই। ঘেরা জায়গায় খাঁচার মধ্যে ত্রিশ-বত্রিশটা নানারঙের খরগোশ। কাচের মতো চোখ, ভীতুভীতু অভিব্যক্তি। লাফদৌড় করছে নিজেরা। ঠেলাঠেলি, মারপিটও। হঠাৎ খাঁচার জালের সামনে এসে দু’পায়ের
ভরে সোজা দাঁড়াচ্ছে। রীতা হেসে বললেন,
-কী মজার! দেখ, ওটা তোমার মতো অনেকটা। ও-মা, কেমন করছে দেখো!
গর্ত খুঁড়ছে মনে হয়!
বাদামীরঙের কানঝোলা খরগোশ সামনের ছোট পা দিয়ে আলগা মাটি
খুঁড়ে পেছনে ফেলে দিচ্ছে। অবনীবাবু ভাবলেশহীন অপলক তাকিয়ে রয়েছেন। রীতা বললেন, -এগুলো
খুব নিরীহ আর ভীতু হয়। আমাদের পাড়ার একজন পুষত।
পাশের অবাঙালি লোকটা বাচ্চাদের বলল, -দেখ্ অভী গড্ঢা
খোদকর অন্দর ঘুস যাএগা।
অবনীবাবু সতর্কভঙ্গীতে কানদুখানা প্রয়াসহীন তুললেন, দেখলেন। পেছনের পায়ের ভরে হাত দিয়ে গম্ভীরভাবে দ্রুত মাটি খামচাচ্ছেন। গর্ত না হলে
বাঁচা যাবেনা। পেটে চাপ পড়তে ছিড়িক করে জল ছেটালেন খানিক – সীমানা নির্ধারিত হল। গভীর গর্ত বানাতে একটু সময় লাগবে। ততক্ষণ অন্যদিকে মন দেওয়া যাবেনা।
সুন্দর
উত্তরমুছুন