কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৮

<<<< সম্পাদকীয় >>>>




কালিমাটি অনলাইন / ৬১  


ছত্তিশগড়ের ইস্পাতনগরী ভিলাইয়ে বাংলা সাহিত্যের চর্চা দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত আছে সেখানকার অত্যন্ত আগ্রহী এবং সচেতন বাংলাভাষাপ্রেমীদের একান্ত উৎসাহে ও সক্রিয় উদ্যোগে। এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তর সরকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত হওয়ার প্রাক্কালেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন এসে উপস্থিত হয়েছেন এই কর্মক্ষেত্রে। সুদূর বাংলা থেকেও এসেছেন শিক্ষিত ও শিল্পদক্ষ বাঙালিরা। আর এ তো আমাদের সবারই জানা আছে যে, যেখানে পাঁচজন বাঙালি একত্রিত হন, সেখানে যে তিনটি প্রতিষ্ঠান অনিবার্য ভাবে গড়ে ওঠে, তা  হচ্ছে কালীবাড়ি, ক্লাব ও সাহিত্যসভা। বলা বাহুল্য, ভিলাইতেও তার কোনো ব্যতিক্রম ঘটেনি। সম্প্রতি সাহিত্যের কারণেই আমাকে ভিলাই যেতে হয়েছিল। জানতে পারলাম, বিগত ১৯৫৯ সালের ২৫শে অক্টোবর জন্ম হয়েছিল বঙ্গীয়  সাহিত্য সংস্থার। এবছর সেই সংস্থা পদার্পণ করল ৬০ বছরে। আর এই উপলক্ষ্যেই আয়োজিত হয়েছিল হীরক জয়ন্তী উৎসব গত ২৮শে অক্টোবর ২০১৮ তারিখে। যাঁরা এই সংস্থার জন্ম দিয়েছিলেন, প্রাকৃতিক নিয়মেই তাঁদের মধ্যে অনেকেই আর জীবিত নেই। কিন্তু তাঁদের সৃষ্ট বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্থা আজ রীতিমতো যৌবনাবস্থায় আছে, ৬০ বছরের টগবগে যুবকের মতো। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে এখন আর মাত্র কয়েকজন প্রবীণ সদস্য জীবিত আছেন। যথা শিবব্রত দেওয়ানজী, ডা. ভবানীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, ফণী রায়, ক্ষিতীশ দেবসিকদার, রবীন্দ্র গুহ, অশোক চট্টোপাধ্যায়, কৃষ্ণপদ চক্রবর্তী এবং কমলেশ রায়। তবে পরবর্তীকালের সদস্যদের মধ্যে চন্দ্রনাভ  দাশগুপ্ত, প্রতুলকৃষ্ণ চক্রবর্তী, দীপককুমার সরকার, সমরেন্দ্র বিশ্বাস, দুলাল সমাদ্দার, বাণী চক্রবর্তী, আরতি চন্দ, মনোরঞ্জন দাশ, মিতা দাশ, গোবিন্দ পাল, দীপালী দাশগুপ্ত, প্রকাশ মন্ডল, মাধুরী চক্রবর্তী, মধু ভট্টাচার্য – এঁরা সবাই সক্রিয় ভাবে কাজ করে চলেছেন।

বস্তুতপক্ষে ভিলাই ইস্পাত কারখানায় প্রথম উৎপাদন শুরু হয় ১৯৫৯ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারী। আর মজার ঘটনা, ঠিক সেই তারিখেই ছত্তিশগড়ের (তৎকালীন  মধ্যপ্রদেশের অন্তর্গত) প্রথম বাংলা সাহিত্য পত্রিকা ‘অংকুর’ও প্রকাশিত হয় শিবব্রত দেওয়ানজীর সম্পাদনায়। প্রথম সংখ্যাটি অবশ্য হাতেলেখা পত্রিকা ছিল। বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্থার প্রথম মুখপত্র ‘অংকুর’ এরপরে ১৯৬০ সালের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত হয় মুদ্রিতাকারে। প্রায় ১০ বছর পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে সংস্থার মুখপত্র রূপে প্রকাশ করা হয় বাংলা সাহিত্য পত্রিকা ‘মধ্যবলয়’, যা নিয়মিত ভাবে এখনও প্রকাশিত হয়ে চলেছে এবং দেখতে দেখতে তারও বয়স হয়ে গেল ৩৫ বছর।
বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্থার হীরক জয়ন্তী উৎসবে আমি মুখ্য অতিথির সম্মানে আমন্ত্রিত হয়ে যোগদান করেছিলাম। সারাটা দিন একটি রম্য প্রেক্ষাগৃহে আয়োজিত সাহিত্যের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা, স্বরচিত কবিতাপাঠ এবং সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্যে আমার প্রাপ্তি ছিল ব্যাপক। আমি মুখ্য অতিথির ভাষণে মূলত বক্তব্য রেখেছিলাম বাংলা ছোটগল্প বিষয়ে। বাংলা কবিতা বিষয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন সমরেন্দ্র বিশ্বাস এবং আমন্ত্রিত কবি ও ‘খনন’ পত্রিকার সম্পাদক সুকুমার চৌধুরী। এছাড়া সংস্থার সভাপতি চন্দ্রনাভ দাশগুপ্ত, ‘মধ্যবলয়’ পত্রিকার সম্পাদক শিবব্রত দেওয়ানজী, ডা. ভবানীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও দুলাল সমাদ্দারও বক্তব্য রাখেন। সামগ্রিক অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংস্থার সচিব আরতি চন্দ এবং সহ সভাপতি বাণী চক্রবর্তী।

মূল বাংলা ভূখন্ড থেকে অনেক দূরে বসবাস করে এভাবেই বাংলা সাহিত্যের নিবিড় চর্চা চলেছে ভারতের প্রায় প্রতিটি রাজ্যে। তথাকথিত প্রবাসী বাঙালিদের সাহিত্যচর্চাকে বহির্বঙ্গ বা বাদবঙ্গ অথবা যে বিশেষণেই সম্বোধিত করা হোক না কেন, তাঁরা প্রত্যেকেই বাংলার মূল সাহিত্যের নিরন্তর সেবা করে চলেছেন। এবং সেইসঙ্গে নতুন নতুন পরীক্ষা নিরীক্ষায় সমৃদ্ধ করে চলেছেন বাংলা সাহিত্যকে। বাংলা সাহিত্যের প্রতি তাঁদের এই দায়বদ্ধতার জন্য শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে।  


আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা : 
kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com 

দূরভাষ যোগাযোগ :           
08789040217 / 09835544675  

অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :
KajalSen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India


2 কমেন্টস্: