কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৮

সুবল দত্ত




সম্পর্ক              

হাসপাতালের বিশাল প্রাঙ্গণে গায়ে গায়ে ভীড়। এই এক হাসপাতাল। ভারত ও প্রতিবেশী দেশ থেকে ঠকে হেরে অল্পে আরোগ্য হওয়া রুগী ভুল বা অবহেলিত চিকিৎসায় জটিল আশাহত হয়ে এখানে আসে আরোগ্যের কামনায়। ধর্মের কট্টরতা ভুলে এক বেডে রোগ নির্ণয়। কালো সাদা সুন্দর অসুন্দর বিচারের অহংকার এখানে অবাঞ্ছিত। লোভ চোরা কাম ঘৃণা নেই পরবাসে অস্বস্তি নেই শুধু যন্ত্রণার ভিড়ে নিজেকে সমর্পিত করে প্রতীক্ষা আর প্রতীক্ষা। ওপিডিতে  ঢোকার জন্য মলিনা বিশাল লম্বা কিউ-এ। পিছনে জামাইবাবু মলিনার হুইলচেয়ার ধরেকাঁধে হাত। মলিনার কোলে রাখা ক্যাথিটার বেয়ে লাল রস। 

হঠাৎ করে পিছন থেকে একটা জোর ধাক্কায় মলিনার হুইলচেয়ার সামনের কালো বোরখা পরা একজনের পিছনে ধাক্কা মারতে সে টাল সামলাতে না পেরে মলিনার কোলে বসে পড়ল  সিকিউরিটি গার্ড সঙ্গে সঙ্গে তার হাত ধরে টেনে  ওঠালোবোরখা পরা মেয়েটা মোটেও রাগলো না। মলিনার দিকে তাকিয়ে হাসলোমলিনা ওর মুখ দেখে চমকে উঠল। মেয়েটা হুবহু তার মতন দেখতে। সেই নাক চোখ মুখ গায়ের রঙ। মলিনা যেন আয়নায় নিজের মুখ দেখছে। সে দেখল মেয়েটা একটা হুইলচেয়ার ধরে আছে। তাতে বসে সাদা টুপি পরা মেহেদী দাড়িওলা এক রুগী। মলিনার হুইলচেয়ার ঠেলে ওর জামাইবাবু লিফ্টে করে দোতলায় স্ক্যান রুমের ওয়েটিং হলে আসে। মলিনা দেখে এখানে পঞ্চাশ জনের উপর মানুষ বসে। প্রত্যেকের মুখ যন্ত্রণাক্লিষ্ট। জামাইবাবু রুমাল দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিল, চুল ঠিক করে দিল। এই স্নেহস্পর্শে চোখ বুজে এল মলিনার। স্বামীখেদা সমাজচ্যুত একসময় দীর্ঘদিন শয়তান জামাইবাবুর যৌন শোষিত মলিনার এখন একমাত্র ঈশ্বর জামাইবাবু। 
-
আপনেরা কি বাংলাদ্যাশ থাইক্যা আইসেন? 
চমক ভাঙ্গলো মলিনার। দেখল সামনের একটা চেয়ারে বসে সেই বোরখা পরা মেয়েটি। হুইলচেয়ার বসে মলিনা মাথা নাড়ল। - নাঃ!  - সাথে আপনের স্বামী  বূঝি? মলিনা মুখ নিচু করে ঘাড় নাড়ল। - তবে উনি কেডা হন? - জামাইবাবুইতস্তত করে মলিনা বলেই ফেলল। একটু বিরক্ত - জামাইবাবু মানে? আপনের দুলাভাই? আপনের দিদিভাই কই? মলিনা মাথা নাড়ে। দ্যাখে মেয়েটি একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেঅস্বস্তিতে চোখ নামিয়ে নিল মলিনামেয়েটি মলিনার হাত চেপে ধরল। - জানো তো এমনই হয়। ওই তো দ্যাখো আমি একাই আমার চাচাজানকে লইয়া আইলাম। ওনার গুপ্ত অঙ্গে রোগ। উনার কেউ নাই। মেয়েটি মলিনার মুখের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে জানো তো, ও আমার  দুশমন। ও আমার ইজ্জত লুইট্যাসে। কিন্ত তালাকের পর আমার দ্যাখভাল ও একাই কইরাসে। আমার দুইটা কিডনিই নষ্ট হইয়া ছিলইন্সাল্লাহ। আল্লার মেহেরবানিতে ওই চাচাজানের কিডনিতে আমি বাঁইচা আসি। মলিনা মুখ নিচু করে মেয়েটির অতীত জীবন যেমন যেমন শুনতে লাগল তেমনি তেমনি নিজের যন্ত্রণাময় স্মৃতি পরত পরত তার চোখের সামনে ফুটে উঠতে লাগল।


1 কমেন্টস্: